|
|
|
|
ভোট পিছোতেই মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী,
সুর চড়িয়ে তোপ বিরোধীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও নয়াদিল্লি |
কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোট চেয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অবস্থানের পক্ষেই সওয়াল করে আসছিল বিরোধী শিবির। কলকাতা হাইকোর্ট কমিশনের বক্তব্য সমর্থন করায় নিজেদের যুক্তির জয়ই দেখছে বিরোধীরা। উপরন্তু, সরকারকে নিশানা করার আরও হাতিয়ার শুক্রবার হাতে পেয়েছে তারা। কারণ, রাজ্য সরকার হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার কথা বলেছে। তাতে বিরোধীরা আরও সরব হতে পারছে এই বলে যে, রাজ্য সরকার শুধু পঞ্চায়েত ভোট পিছোতেই চায়!
আদালতের বক্তব্য জানার পরে প্রায় এক সুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তথা শাসক দলকে আক্রমণ করেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। দু’দলেরই বক্তব্য, সময়ে পঞ্চায়েত ভোট না-হলে রাজ্যের উন্নয়নের কাজ থমকে যাবে। কিন্তু শাসক দল কিছুতেই পঞ্চায়েত ভোটের মুখোমুখি হতে চাইছে না। বিশেষত, এখন সারদা-কাণ্ডের পরে রাজ্য সরকার সিঙ্গল থেকে ডিভিশন বেঞ্চ, সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্ট এই ভাবে আরও কালক্ষেপ করতে চাইবে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেবের অভিযোগ, ফল খারাপের ভয়ে লোকসভা ভোটের আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে চান না মমতা। আর রেল প্রতিমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, “রাজ্য সরকার বলছে ডিভিশন বেঞ্চে যাবে। এখন এক কান কাটা গিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চে হেরে দু’কান কাটা যাবে!”
বস্তুত, শাসক শিবির হাইকোর্টের রায়কে ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা করার আগেই সর্বভারতীয় কংগ্রেসে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ বলে দিয়েছিলেন, “চিট ফান্ড নিয়ে যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং রাজ্যের বিরুদ্ধে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে মমতা কোনও ভাবেই চান না এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক। তাই উনি যেন তেন ভোটটা পিছিয়ে দিতে চাইছেন, এটা বুঝতে কোনও রকেট বিজ্ঞানের প্রয়োজন নেই!”
দিল্লিতে এ দিন পলিটব্যুরো বৈঠকের ফাঁকে হাইকোর্টের রায় জানার পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, “রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থাটাকেই কালিমালিপ্ত করে নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল। আশা করব, এ বার শুভবুদ্ধি জাগ্রত হবে! নতুন সরকারের প্রায় দু’বছর হয়ে গেল। এখনও তারা বুঝে উঠতে পারল না, কী করে সরকার চালাতে হয়!”
সিপিএমের তরফে গৌতমবাবুর আরও সংযোজন, “পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যুক্তি দিচ্ছেন, ভোটের দিন ঘোষণা না-হলে কী ভাবে তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইবেন? সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে না গিয়ে এই বিচারপতিকেই বলতে পারত, আপনি পঞ্চায়েতের দিন ঘোষণার জন্য কমিশনকে নির্দেশ দিন। আসলে সুব্রতবাবুও জানেন, মমতা পঞ্চায়েত ভোট করতে চাইবেন না! বিশেষত সারদা-কাণ্ডে গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে জনমত সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ভোট করলে বহু জায়গায় তাদের ফল খারাপ হবে।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “ভোট ঠিক সময়ে না-করার জন্য প্রথম থেকেই রাজ্য সরকার নানা কৌশল নিয়েছে। ভোট করার সদিচ্ছা নেই বলেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা মেনে নিচ্ছে না তারা।” পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আদালতে নিজেরাই মামলা করেছিল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ তাই এ দিন বলেছেন, “আমাদের কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে আদালতের রায়ে। শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম, তৃণমূল নির্বাচন পিছোতে চায়। যা আশঙ্কা ছিল, সুব্রতবাবুর ঘোষণা থেকে সেটাই সত্য হল!” |
|
|
|
|
|