|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
পাঠকের বিপদের বন্ধু |
আশিস পাঠক |
বইয়ের খোঁজে গোয়েন্দা লাগালে হয়তো কিছু হতে পারে, কিন্তু খরচের কথা ভেবে দেখেছেন কখনো? ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির মতো ব্যাপার আর-কি! তার চেয়ে সহজ একটা উপায় আছে: দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সন্ধানে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।’ এক্ষণ-এ প্রকাশিত সুবর্ণরেখা-র এই বিজ্ঞাপনে ‘আমাদের’ না বলে অনায়াসে বলা যেত ‘আমার’। ওই ‘আমি’-ই যে গবেষক আর গভীরচারী পাঠকের বিপদের বন্ধু ইন্দ্রনাথ, ইন্দ্রনাথ মজুমদার।
বন্ধুবিচ্ছেদ ঘটল সম্প্রতি। ১৯৬১-তে ‘সুবর্ণরেখা’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইন্দ্রনাথ। লক্ষ্য ছিল প্রধানত ‘ভারততত্ত্ব’ সম্পর্কিত দুষ্প্রাপ্য বইয়ের কারবার। পরে বেশ কিছু বইও প্রকাশ করেন তিনি, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বোধহয় উপেন্দ্রকিশোর-সুকুমার রায়ের কয়েকটি বইয়ের প্রথম সংস্করণের ফ্যাকসিমিলি। কিন্তু নিছক পুরনো বইয়ের বিক্রেতা ছিলেন না তিনি, শুধু সযত্ন প্রকাশকও নয়। খালাসিটোলা জানে, বিষ্টুঘোষের আখড়া জানে এমনকী হারিয়ে যাওয়া সেই কমলালয় স্টোর্সে রাম হালদারের বইবিপণিও জানে আসলে তিনি সেই ছিন্নবাধা পলাতক বালক, ভুবনডাঙার আকাশ আর পালিয়ে যাওয়ার মাঠটা যে খুঁজে গেছে আজীবন। সে মাঠ পুরনো বইয়ের মার্জিনের মতোই উদার। স্পর্শহীন, সম্পর্কহীন ভাবে তখনও একটি ক্লিকেই সবকুছ বিকিয়ে যেত না। |
|
দুঃখ, বন্ধুজনের স্মৃতির বাইরে তাঁর কথা তেমন করে ধরে রাখা হয়নি। তবু আশার কথা, তাঁর কয়েকটি প্রকাশিত আত্মকথন-সাক্ষাৎকারের সংকলন নির্মিত হচ্ছে সৌম্যেন পালের সম্পাদনায় সপ্তর্ষি প্রকাশনে। সে বইয়ের নাম এই যে শালা, প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দেখা হলে এই বলেই যে খুশিটা প্রকাশ
করতেন তিনি!
বিশিষ্ট এই ব্যক্তিত্বটি এখন নেপথ্যের পথে। কেনার যেমন, বেচারও তেমন এখন হরেক ই-পথ। ইন্দ্রনাথও প্রযুক্তির দাপটকে অস্বীকার করেননি। বরং চেয়েছিলেন, ‘প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে বই-এর ব্যবসাও এগোক, প্রকাশনার মান উন্নত হোক— ভাল লাগবে। দেখে যেতে পারলে খুশিই হব।’ (সাক্ষাৎকার, বইয়ের দেশ)। ছোট প্রকাশকদের উদ্যোগে উন্নতি সত্যিই হচ্ছে বাংলা প্রকাশনার, যা প্রভাবিত করছে বড় প্রতিষ্ঠানকেও। ইন্দ্রনাথের ‘কমলবাবু’, কমলকুমার মজুমদারের কথনে, ‘আলো ক্রমে আসিতেছে’।
এই আসার সঙ্গে মিশে থাকল চলে যাওয়াও। কেবলই বেচুবাবুদের এই বাংলা বইপাড়ায় ব্যক্তিস্পর্শটিকে আরও একটু দুষ্প্রাপ্য করে দিয়ে ইন্দ্রনাথের চলে যাওয়া। |
|
|
|
|
|