|
|
|
|
সমস্যায় বৃদ্ধ চাষিরা |
বরাদ্দ টাকা পড়ে, সময়ে মিলছে না কৃষি পেনশন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মাসে ভাতা ৭৫০ টাকা। তা-ও সময় মতো পাওয়া যাচ্ছে না। উপভোক্তাদের একাংশ তো গত বছর সেপ্টেম্বরে শেষ ভাতা পেয়েছেন। এমনই দশা কৃষি বার্ধক্যভাতা প্রকল্পের। অথচ কৃষি দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তা জেলায় চলেও এসেছে। তা-ও কেন এই অবস্থা? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি আধিকারিক নিমাইচন্দ্র রায় বলেন, “কিছু সমস্যা রয়েছে। তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।” দফতর সূত্রের খবর, যাঁরা পেনশন অথরিটি, তাঁদেরই যদি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকে, তাহলে সমস্যা হবেই। পুরো ব্যবস্থার সরলীকরণ প্রয়োজন। না হলে সঙ্কট কাটবে না।
সময়ে ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। বাম আমলেও এমন পরিস্থিতি হত। উপভোক্তার একসঙ্গে ৬ মাসের টাকা পেয়েছেন, এমনও হয়েছে। এখন অবশ্য এ জন্য রাজ্য সরকারকেই দুষছে বিরোধী বামেরা। তাদের বক্তব্য, উপভোক্তারা যাতে ঠিক সময়ে টাকা পান, সে দিকে নজর নেই সরকারের। শুধু কৃষি পেনশন নয়, অন্য ভাতার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা সিপিএম নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “রাজ্য সরকার তো শুধু উৎসব আর মেলা নিয়েই ব্যস্ত। এ সব দিকে নজর দেবে কখন!” তাঁর কথায়, “বহু উপভোক্তা ৭-৮ মাস ধরে কৃষি পেনশন পাচ্ছেন না। অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। আমি তাঁদের কৃষি দফতরে যোগাযোগ করতে বলেছি।” ‘ফার্মারস্ ওল্ড এজ পেনশন’ (এফওএপি) প্রকল্পটি চালু হয়েছিল বাম আমলেই। এই সুবিধা পেতে বয়স্ক কৃষকদের শুরুতে ব্লকস্তরে আবেদন করতে হয়। আবেদন মঞ্জুর হলে ভাতা বাবদ মাসে ৭৫০ টাকা করে পাওয়া যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরে এই প্রকল্পের উপভোক্তা ৮,৮২৯ জন। তাঁদের অনেকেই গত সেপ্টেম্বর থেকে ভাতার টাকা পাননি। জানা গিয়েছে, ঘাটাল ও ঝাড়গ্রাম মহকুমায় পরিস্থিতি তুলনায় ভাল। সমস্যা সব থেকে বেশি মেদিনীপুর (সদর) ও খড়্গপুর মহকুমায়। যে সব ব্লকে উপভোক্তারা কৃষি পেনশন পাননি, তাঁর অধিকাংশই এই দুই মহকুমার অন্তর্গত। যেমন, খড়্গপুর ১ নম্বর ব্লক। এই ব্লকে মোট উপভোক্তা ১১৩ জন। সকলেই শেষ ভাতা পেয়েছেন গত সেপ্টেম্বরে। বিডিও সুভেশ বেরার বক্তব্য, “বেশ কিছু উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে, সময় মতো ভাতা পাচ্ছেন না।” কেশপুরে উপভোক্তার সংখ্যা ২১৪। এই ব্লকের উপভোক্তারাও ভাতা পেয়েছেন গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বিডিও মহম্মদ জামিল আখতারের বক্তব্য, “সকল উপভোক্তাই যাতে সময়মতো ভাতা পেতে পারেন, তার চেষ্টা চলছে।”
এক সময় মানি অর্ডারের মাধ্যমেও ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু ছিল। এখন তা পুরোপুরি বন্ধ। উপভোক্তাদের হয় ব্যাঙ্কে, নাহলে ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। কৃষি পেনশনের টাকার জন্য বরাদ্দ রাজ্য থেকে জেলায় এসে পৌঁছবে। জেলা থেকে আসবে মহকুমাস্তরে। মহকুমা থেকেই উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ভাতার টাকা জমা দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে মহকুমাস্তরে টাকা এসে পড়ে থাকে। মহকুমা কৃষি আধিকারিকের পৃথক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় সমস্যা বাড়ে। অন্য দিকে, সব উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও জেলা প্রশাসন তৎপর নয় বলে অভিযোগ। সঙ্গে রয়েছে একাংশ ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘর কর্তৃপক্ষের গড়িমসি। জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “কখনও তিন মাসের টাকা একসঙ্গে দেওয়া হয়, কখনও ৬ মাসের টাকা। কিছু ব্লকে সমস্যা রয়েছে। পরিস্থিতি দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপও করা হচ্ছে।” এই আশ্বাসে অবশ্য চিড়ে ভিজছে না। বিরোধীদের বক্তব্য, রাজ্য জুড়ে বহু লক্ষ টাকা ব্যয়ে কৃষি মেলা হচ্ছে। তার জন্য নিয়ম-নির্দেশিকার অন্ত নেই। অথচ কৃষি পেনশনের টাকা যাতে সময়ে পৌঁছয়, তার জন্য কোনও নির্দেশ নেই! জেলা সভাধিপতির মতে, “উৎসব আর মেলা ছেড়ে সরকার যদি কৃষি পেনশনের মতো প্রকল্পে বেশি নজর দিত, তাহলে অন্তত গরিব মানুষকে সমস্যায় পড়তে হত না।” |
|
|
|
|
|