পূর্ব কলকাতা
সৌন্দর্যহানি
আলো ঢেকেছে বিজ্ঞাপনে
হরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে লাগানো হয়েছিল ত্রিফলা আলোর স্তম্ভ। এখন সেই সাধের ত্রিফলা ঢেকে গিয়েছে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ে। স্তম্ভগুলিতে ঝুলছে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং। লেকটাউন থেকে বারাসত, সর্বত্র বিজ্ঞাপনে ঢেকে গিয়েছে ত্রিফলা আলো। অথচ কোনও পুরসভারই চোখে পড়েনি সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার এই ছবি।
রাজ্যে প্রশাসনিক পালাবদলের পরে একাধিক শহরের মতো উত্তর শহরতলিতেও সৌন্দর্যায়নের জন্য প্রধান সড়কগুলির পাশে ত্রিফলা আলো বসানো হয়েছিল। এয়ারপোর্টের এক নম্বর গেট থেকে যশোহর রোড, নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম পুরসভার উপর দিয়ে বারাসত পুরসভার চাঁপাডালি মোড় অবধি এবং যশোহর রোডের ডাকবাংলো মোড় থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে আলো লাগানো হয়। এ ছাড়াও বারাসত পুরসভার কে এন সি রোডের দক্ষিণপাড়া মোড় থেকে কোর্ট মোড়ের কে কে মিত্র রোডের সংযোগস্থল পর্যন্ত রাস্তাগুলির দু’পাশে বসানো হয়েছিল ত্রিফলা আলো।
যশোহর রোড
ত্রিফলা আলো বসানো হয়েছিল এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেট থেকে ভিআইপি রোড, দমদম, দক্ষিণ দমদম এবং রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা এলাকার মধ্য দিয়ে কৈখালি, হলদিরাম, তেঘরিয়া, জোড়ামন্দির, বাগুইআটি, কেষ্টপুর, শ্রীভূমি হয়ে লেকটাউন অবধি। পাশাপাশি, ভিআইপি রোডের হলদিরাম থেকে রাজারহাট লেকটাউন রোড রাজারহাট-গোপালপুর এবং দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকার মধ্যে দিয়ে চিনার পার্ক হয়ে লেকটাউন অবধি রাস্তার দু’পাশেও বসানো হয়েছিল ত্রিফলা।
কিন্তু এখন সেই ত্রিফলা আলোর স্তম্ভগুলিতে ঝুলছে গাড়ি, হোটেল, স্কুল, জামাকাপড়ের দোকান-সহ বিবিধ বিজ্ঞাপন। স্থানীয় পুরসভাগুলির অভিযোগ, অনুমতি বা বিজ্ঞাপন-ফি ছাড়াই এই বিজ্ঞাপন ঝোলানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের হোর্ডিংও ঝুলছে কিছু ত্রিফলা স্তম্ভ থেকে। মধ্যমগ্রাম চৌমাথার কাছে তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার দলীয় কার্যালয়ের সামনের ত্রিফলা স্তম্ভেও ঝুলছে বিরাট বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং।
এ ব্যাপারে উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষের ব্যাখ্যা: “ফাঁকা জায়গা দেখলেই বিজ্ঞাপন ঝোলানো রেওয়াজ। সে ভাবেই সবাই হোর্ডিং ঝোলাতে পারে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পুরসভার দেখভাল করা উচিত। এটা তাদের দায়িত্ব।”
ডাকবাংলো মোড় মধ্যমগ্রাম চৌমাথা
তাঁর মন্তব্য: “এখনও ত্রিফলায় বিজ্ঞাপন ঝোলার ছবি আমার চোখে পড়েনি।” যদিও কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবী ঘোষাল বলেন, “ত্রিফলা বাতিতে বিজ্ঞাপন ঝোলানো ঠিক নয়। আমি দলের কর্মীদের বলব, ত্রিফলায় কোনও প্ল্যাকার্ড না ঝোলাতে।”
ত্রিফলায় এ ভাবে হোর্ডিং ঝোলানোকে সরাসরি বেআইনি বলে ব্যাখ্যা করেছেন বিভিন্ন পুরপ্রধান। যদিও কী ভাবে ওই সব বিজ্ঞাপন সেখানে লাগানো হল তা নিয়ে কোনও মহল থেকেই সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
বারাসতের পুরপ্রধান তৃণমূলের সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ত্রিফলা বসানো হয়েছে শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য। এতে হোর্ডিং ঝোলানো বেআইনি। বারাসত পুরসভা এলাকার কোনও ত্রিফলা স্তম্ভে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং লাগানো আছে বলে অভিযোগ এখনও পাইনি। এমন হয়ে থাকলে তা দ্রুত খুলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনদাতা বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
চিনার পার্ক, নিউটাউন
মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের রথীন ঘোষের কথায়: “ত্রিফলায় বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ঝোলানো হলে স্বাভাবিক ভাবেই সৌন্দর্য নষ্ট হবে। বিজ্ঞাপনদাতারা নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে কোনও রকম চুক্তি করে বিজ্ঞাপন ঝুলিয়েছে কি না তা খোঁজ নিয়ে দেখব।” যদিও রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় স্পষ্টই বলেন, “ত্রিফলা বাতিস্তম্ভে বিজ্ঞাপন লাগানোর জন্য কোনও সংস্থা কখনও অনুমতি নেয়নি। আমি শীঘ্রই সেখানে লাগানো বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংগুলি খুলে নেওয়া ব্যবস্থা করব। বিষয়টি আমার অজানা ছিল।”
দক্ষিণ দমদমের পুরপ্রধান তৃণমূলের অঞ্জনা রক্ষিতের কথায়: “আমি পুরপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। বিজ্ঞাপনগুলি খুলে নেওয়ার জন্য তাঁদেরকে নির্দেশও দিয়েছি।” দমদমের পুরপ্রধান তৃণমূলের সঞ্জীব চন্দ-ও বলেছেন, “পুরসভাকে না জানিয়ে হোর্ডিং ঝোলানো হয়েছে। আমি দ্রুত সেগুলি খুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করব।”

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.