পূর্ব কলকাতা
বেলেঘাটা খাল
সংস্কারের পথে
ঞ্জাল, প্লাস্টিকের স্তূপ, পাড় জুড়ে দখলদারি, কচুরিপানায় ঢেকে জলের প্রবাহ বন্ধ দীর্ঘ দিন। ফলে সেটি হয়ে উঠেছে মশার আঁতুড়। বছরের পর বছর বদলায়নি বেলেঘাটা খালের এই অস্বাস্থ্যকর ছবি। অবশেষে এই ছবিটাই বদলাতে চলেছে। সম্প্রতি খাল সংস্কার কাজ শুরু করেছে রাজ্যের সেচ দফতর।
বাগবাজার থেকে চিংড়িহাটা মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার জুড়ে বেলেঘাটা খালের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। সেচ দফতর কর্তৃপক্ষ জানান যে, প্রতি এক কিলোমিটারে একটি করে বার্জ তৈরি করে পলি তোলার কাজ হবে। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংস্কারের কাজ হয়ে গেলে জলপ্রবাহের সমস্যা থাকবে না। এর ফলে কলকাতা পুরসভার ১২টি ওয়ার্ডের প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন।’’
খাল সংস্কারের পরে জলপ্রবাহ চালু হয়ে গেলে মশার সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে মনে করছেন পুরসভার ৩ নম্বর বরোর কর্তৃপক্ষ। তবে স্রেফ পলি তুলে খাল সংস্কারের কাজ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না সেচ দফতর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, খালের উপরে যে ক’টি গাড়ি চলাচলের সেতু বা কালভার্ট রয়েছে তার দু’পাশের ২০০ মিটার জুড়ে হবে সৌন্দর্যায়নের কাজ। তৈরি হবে পার্ক, যেখানে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের হাঁটাচলার ব্যবস্থা থাকবে এবং বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছও বসানো হবে। পাশাপাশি বাহারি আলো, সুদৃশ্য রেলিং বসানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে খাল সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের কাজ করবে সেচ দফতর। সময়সীমা ধার্য হয়েছে ৬ মাস। কিন্তু রাজীববাবু বলেন, ‘‘আমরা ৪-৫ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছি’’ এর পাশাপাশি বেলেঘাটা খালের উপর দু’টি জায়গায় দু’টি সেতু তৈরি করা হবে। পুরনো সেতুগুলিকে নতুন করে সাজার কাজও হবে, সে ক্ষেত্রে আনুমানিক ব্যয় ১ কোটি টাকা বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর।
বাম আমলেও কলকাতা শহরে খাল সংস্কার প্রকল্পের কাজ হয়েছিল বটে, কিন্তু তার পরে সেই হতশ্রী ছবিটাই ফিরে এসেছে। এ ক্ষেত্রেও কি এমনটাই হবে? প্রশ্ন বাসিন্দাদের। বেলেঘাটাবাসী তন্ময় চৌধুরীর কথায়: ‘‘এর আগেও দেখেছি, সামান্য পরিমাণে হলেও সংস্কারের কাজ হয়েছে, কিন্তু কিছু দিন বাদে যে কে সেই।’’
সমস্যা ঠিক কোথায়? সেচ দফতরের আধিকারিকদের একাংশের মতে, মানুষের মনোভাব পাল্টানো প্রয়োজন। কার্যত ভ্যাট হিসাবেই খাল ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে খালে। এগুলি প্রধানত খালপাড়ের দু’পাশের সেচ দফতরের নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে নানা দখলদারির প্রভাব। খালের যে কোনও অংশে গেলেই তার প্রমাণ মিলবে। কোথাও চলছে কাঠ চেরাইয়ের কাজ, কোথাও গাড়ি মেরামতির দোকান, অনেক জায়গায় খাবারের দোকান, রাজনৈতিক দলগুলির কার্যালয় থেকে গজিয়ে ওঠা ঝুপড়ি সবই দেখা যায় খালপাড়ের উপর।
সমস্যার কথা স্বীকার করে সেচমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে। খাল সংস্কার করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। বার বার তা করা সম্ভব নয়। খালকে কোনও ভাবেই ভ্যাট হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। স্থানীয় পুরপ্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরাও সেচ দফতরের তরফে সচেতনতামূলক প্রচার করব।’’ দখলদারির প্রশ্নেও স্থানীয় প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক মহল সরকারকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর।

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.