ঐতিহ্য
মেলার মাঠে
রামরাজাতলার রাম, বাকসাড়ার নবনারী ও ইছাপুরের শমীচণ্ডী। এই তিন পুজো ও মেলা কেন্দ্র করে এলাকায় চলে চার মাসব্যাপী সাড়ম্বর উৎসব।
বৈশাখ মাসের রামনবমী তিথিতে রামসীতার পুজো শুরু হয়। চলে চার মাস ধরে। শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার হয় বিসর্জন। প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো এই পুজো। মন্দির চত্বরে মেলাও বসে। রামনবমীতে পুজো শুরুর দিন লক্ষাধিক জনসমাগম হয় রামমন্দিরে। রামরাজাতলার রামঠাকুরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা কাহিনি ও জনশ্রুতি। প্রতি বছর মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজোর দিন চৌধুরীপাড়ার মনসামন্দিরে কাঠামোপুজোর মাধ্যমে ঠাকুর তৈরি শুরু হয়।

রামরাজাতলার মেলা
প্রায় আড়াইশো বছর আগে অযোধ্যারাম চৌধুরী রামচন্দ্রের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রামরাজাতলার জমিদার চন্দ্রশেখর সান্যালের বংশধর অযোধ্যারাম চৌধুরীর ইষ্টদেবতা ছিলেন রামচন্দ্র। কথিত আছে, অযোধ্যারাম চৌধুরী স্বপ্নে রামসীতার যুগল মূর্তি দেখতে পান। কুলপণ্ডিত হলধর ন্যায়রত্নের পরামর্শে সেই মূর্তি তিনি মহাসমারোহে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইতিহাস বলছে, শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য রামকৃষ্ণপুরের নবগোপাল ঘোষের বাড়ি থেকে ১৯০৯-এ মা সারদা রামরাজাতলায় আসেন রামঠাকুরের দর্শন করতে। মন্দিরের পাশের পুকুরে পা ধুয়ে তিনি রামমন্দিরে প্রবেশ করেন ও শ্রীরামচন্দ্রের মূর্তি দর্শন করেন। রামরাজা মন্দির কমিটির সভাপতি দেবেশ সান্যাল বলেন, “চার মাস ধরে মন্দির প্রাঙ্গণে মেলা বসে। আগে প্রতি সপ্তাহে যাত্রা, গান, কীর্তন, নাটক প্রভৃতি হত। আর্থিক কারণে এখন আর হয় না।”

ইছাপুরের শমীচণ্ডী

রামরাজাতলার রামসীতা
ইছাপুরের শমীচণ্ডী এবং বাকসাড়ার পুরনো ও নতুন নবনারীর পুজোও বহু প্রাচীন। জনশ্রুতি, আগে ইছাপুর ও সংলগ্ন এলাকায় পান চাষ হত। পানবরজে শমীপোকার আক্রমণ ঠেকাতেই তখন এলাকার মানুষরা এই পুজো শুরু করেন। বাসন্তী শুক্লা সপ্তমী তিথি থেকে পুজো শুরু হয়ে চার মাস ধরে পুজো চলে। প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতার শমীচণ্ডী মাতার মূর্তির পাশে শিব ও ইন্দ্র-সহ নানান দেব-দেবীর মূর্তি থাকে।
বাকসাড়ার নবনারীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা নিয়েও আছে জনশ্রুতি। শোনা যায় বৃন্দাবনের এক সাধু বাকসাড়ার সাতঘরায় আশ্রম করেন। ১২৯২ বঙ্গাব্দে বাকসাড়ায় সাতঘরায় নবনারী কুঞ্জমন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি অমরনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগে গোলপাতার আটচালায় নবনারী পুজো হত। পরে পাকা মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরে চার মাস ধরে নিত্য পুজো ও ভোগ হয়। আগে যাত্রা, গান, মেলা বসত। এখন মেলাই শুধু বসে।” হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে লোকশিল্পীরা এসে মেলাকে উজ্জ্বল করে তোলেন।

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.