|
|
|
|
উদ্বোধনের উচ্ছ্বাসে সুর কাটল বস্তিবাসীর বিক্ষোভ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
খুশির জোয়ারে ভাসছে খড়্গপুর। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পুরী রেলগেটের উড়ালপুল চালু হল যে।
এবার নিশ্চিন্ত। আর রোদ মাথায় ফাঁকা রাস্তার উপর আটকে থাকতে হবে না। অপেক্ষা করতে হবে না কখন ট্রেন আসবে তার জন্য। লম্বা গাড়ির সারি কাটিয়ে অতি কষ্টে এগোনোরও দরকার নেই। শুক্রবার সকাল থেকেই উড়ালপুল দিয়ে দ্রুত গতিতে পার হচ্ছে বাস-গাড়ি। আরোহী-চালকেরা খুশি না হয়ে পারে!
যদিও এই আনন্দের ধারাকে কিছুক্ষণ থামিয়ে দিয়েছিল একটা বিক্ষোভ। উড়ালপুল চালু হওয়ায় লেভেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। লম্বা লেভেল ক্রসিংয়ের নীচে বসবাসকারী মানুষজন তাহলে কোন পথে যাবেন? কী ভাবে তাঁদের বস্তিতে চার চাকার যানবাহন ঢুকবে? আইআইটি-র দিকে থাকা লেভেল ক্রসিংয়ের গেটটি খোলা রাখার দাবিতে বিশ্বরঞ্জন নগর ও চিত্তরঞ্জন নগরের বাসিন্দারা এ দিন সকালে শুরু করেন বিক্ষোভ। সঙ্গে অবরোধও। প্রায় ঘণ্টাখানেক
অবরোধ চলে।
স্থানীয় বাসিন্দা বি ঈশ্বর রাও, জগদীশ কুমার রাও, দেবু দাসেরা বলেন, “আইআইটি-র দিকের লেভেল ক্রসিংটি বন্ধ করে দিলে বস্তির প্রায় দেড় হাজার মানুষ যাতায়াত করতে পারবে না। কারণ, কোনও বিকল্প রাস্তাও নেই। ওই গেটটি খোলা রাখতেই হবে।” বিক্ষোভ তুলতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। রেলের সিনিয়ার ডিভিসনাল ইঞ্জিনিয়ার এ কে শ্যামল এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে আপাতত লেভেল ক্রসিংয়ের গেট খুলে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় অবরোধ ওঠে। বিকেলে ফের এক বার গেট বন্ধ করে দেওয়ায় বিক্ষোভ
দেখান বস্তিবাসী।
কিন্তু কতদিন গেট খোলা রাখা হবে। রেলের নিয়ম অনুযায়ী, উড়ালপুল হলে গেট রাখা যাবে না। কারণ, গেট রাখতে হলেই সেখানে কর্মীর প্রয়োজন। টাকা খরচ করে উড়ালপুল তৈরির পরও বেতন দিয়ে কর্মী রাখা সম্ভব নয়। সিনিয়ার ডিভিসনাল ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “আপাতত, বিক্ষোভের কারণে গেট খোলা রাখা হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে। পরবর্তীকালে উধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা কার্যকরী
করা হবে।” |
|
উড়ালপুলে যান চলাচল শুরু। |
উড়ালপুলের এক দিকে খড়্গপুর শহরের বেশিরভাগ অংশ। আর উল্টো দিকে প্রেমবাজার, ডিভিসি, রবীন্দ্রপল্লি, আইআইটি, হিজলি কলেজ, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়-সহ একাধিক স্কুল। ওই পথ দিয়েই কেশিয়াড়ি ও নয়াগ্রাম রুটের বাসও চলাচল করে। শহরের এক দিকের মানুষকে অন্য দিকে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হয়সে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে ছাড়তে যাওয়া হোক বা দোকান-বাজার করতে যাওয়া। ব্যস্ত রেল পথে সারাদিনই একাধিক ট্রেন যাতায়াত করে। লেভেল ক্রসিংয়ের গেটে লম্বা গাড়ির লাইন পড়ে রোজ।
কৌশল্যার বাসিন্দা শিবাজী রায় বলেন, “আমার ছেলে ওদিকের স্কুলে পড়ে। স্কুলে পৌঁছতে বড় জোর ১৫ মিনিট লাগার কথা। কিন্তু লেভেল ক্রসিংয়ের ভয়ে ৪৫ মিনিট আগে বেরোতে হত। কারণ, গেট পড়লে আধ ঘণ্টা নিশ্চিত। তার উপর যদি দু’টি লাইনেই ট্রেন থাকে তাহলে ভোগান্তির একশেষ।” আইআইটি-র গবেষক ছাত্র সৌমেন কর বলেন, “লেভেল ক্রসিংটা সকলের কাছেই আতঙ্কের ছিল। লেভেল ক্রসিংয়ে না আটকে কেউ ওই পথ পার হলে তাঁকে আমরা ভাগ্যবান ভাবতাম।” |
|
গেট খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ। |
সমস্যা মেটাতে দীর্ঘ দিন ধরেই লেভেল ক্রসিংয়ে একটা উড়ালপুল বানানোর দাবি করছিলেন এলাকাবাসী। বহু আন্দোলন হয়েছে। রেল রাজ্য সরকারকে দুষত ও রাজ্য সরকার রেলের উদাসীনতার জন্যই উড়ালপুল হচ্ছিল না বলে অভিযোগ করত। পরে আইআইটিও অর্থ দেবে বললে কথা এগোয়। আইআইটি, রেল ও রাজ্য সরকারত্রিপাক্ষিক আলোচনায় সকলেই অর্থ দেওয়ার কথা জানায়। তারপরেও ঠিকাদার না মেলায় কাজ এগোচ্ছিল না। পরে অবশ্য সেই সমস্যাও মেটে।
এত ঝামেলার পর শুক্রবার উড়ালপুল চালু হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরাও। বেণুগোপাল রাওয়ের কথায়, “উড়ালপুল হয়ে সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আর কাউকে আটকে থেকে যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে না। কিন্তু আমরা যাঁরা উড়ালপুলের নীচে বসবাস করি তাঁদের কথাটাও তো ভাবতে হবে। গেট বন্ধ করে দিলে তো অসুস্থ মানুষকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যাবে না। আগুন লাগলে দমকলও ঢুকবে না। তখন তো সমস্যায় পড়তে হবে। এটাই রেলকে বোঝাতে চেয়েছি।”
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|
|
|
|
|