বলল অডিট রিপোর্ট
বাড়তি পুরকর ১৯ বছর ধরে, ফাঁপরে হাওড়া
ব্যক্তি মালিকানাধীন ফ্ল্যাটকে ‘ভাড়া বাড়ি’ হিসেবে মূল্যায়ন করে এ বার কোটি কোটি টাকা বাড়তি সম্পত্তিকর আদায় করার অভিযোগ উঠল হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এক-দু’বছর নয়, টানা ১৯ বছর ধরে ফ্ল্যাট বাড়িকে ভাড়াবাড়ি দেখিয়ে ফ্ল্যাট-মালিকদের থেকে দু’-তিন গুণ করে বাড়তি কর নিয়েছে পুরসভা। শুধু গত ৬ বছরেই এই বাড়তি কর নেওয়া হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
সম্প্রতি সরকারি অডিট রিপোর্টে এই তথ্য ধরা পড়ায় নড়েচড়ে বসেছেন হাওড়া পুর-কর্তৃপক্ষ। গত ১৯৮৪ সালের পর থেকে বামফ্রন্টের দখলে থাকা পুর-বোর্ডের কর্তারা এখন চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন ওই বাড়তি টাকা কী ভাবে ফ্ল্যাট মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে। হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়াল এই ঘটনার কথা স্বীকার করে জানান, ওই টাকা কী ভাবে ফেরত দেওয়া যায়, তার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে ওই টাকা ফ্ল্যাট-মালিকদের ফিরিয়ে দেব।”
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এই ভাবে বাড়তি কর নিয়ে হাওড়া পুরসভা মানুষকে প্রতারণা করেছে। এর জবাব মানুষ দেবে। আমরা এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই মেয়রের থেকে ব্যাখ্যা চাইব। যে বাড়তি করের টাকা ওঁরা তুলেছেন, তা ওঁদেরই দিয়ে যেতে হবে।’
হাওড়া পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, অডিটে ধরা পড়ার আগে ২০০৫ সালে এই ‘ভুল’ ধরা পড়েছিল। তার পরেই তা সংশোধন করার কাজ শুরু হয়। এমনকী, ২৫টি ওয়ার্ডে করের সাধারণ মূল্যায়নের পরে সংশোধিত বিল তৈরির কাজও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু ওই সময়ে কম্পিউটারের সার্ভার খারাপ হয়ে যাওয়ায় নতুন বিল আর বার করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত কম্পিউটার ঠিক না হওয়ায় পুরনো বিলই নতুন করে ছাপিয়ে পাঠানো হচ্ছে ফ্ল্যাটবাড়িগুলিতে।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী জমি-বাড়ির মূল্যায়নের দু’রকম পদ্ধতি আছে। চলতি ভাষায় একটিকে বলা হয় ভাড়ার উপর মূল্যায়ন বা রেন্টাল বেসিস অ্যাসেসমেন্ট এবং দ্বিতীয়টি হল জমির দাম ও বাড়ি তৈরির খরচের উপরে বা কস্ট বেসিস অ্যাসেসমেন্ট। অভিযোগ উঠেছে, পুরসভার আর্থিক দুরবস্থা দূর করতে ১৯৯৪ সালে মেয়র পরিষদের সভায় শহরের সমস্ত ব্যক্তি মালিকানাধীন ফ্ল্যাটকে ভাড়াবাড়ি হিসেবে মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়। কারণ ভাড়ার ভিত্তিতে মূল্যায়ন হওয়া কর জমির দাম ও বাড়ি তৈরির খরচের মূল্যায়নের প্রায় দুই থেকে তিন গুণ হয়। অর্থাত্‌ যে ফ্ল্যাটমালিকের বার্ষিক সম্পত্তিকর হওয়ার কথা ছিল ১০০০ টাকা, তা দাঁড়িয়েছিল আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকায়।
হাওড়া পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট দফতরের এক অফিসারের অভিযোগ, “এই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে পরবর্তী ১০ বছর কোনও সাধারণ মূল্যায়ন বা জেনারেল রিভিশন (জিআর) করেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। ফলে ১০ বছর ধরে দুই থেকে তিনগুণ হারে সম্পত্তিকর দিয়ে যেতে হয়েছে ফ্ল্যাটমালিকদের।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী ৫ বছর অন্তর পুরসভার জিআর হওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, তা করতে আর আগ্রহ দেখাননি পুর-কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীকালে ২০০৫ সালে জিআর করার সময়ে পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য স্বীকার করে নেন, ১৯৯৪-এ যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা ভুল। কারণ ফ্ল্যাটবাড়ির মূল্যায়ন জমির দাম ও বাড়ি তৈরির খরচের ওপর হওয়া উচিত।
এর পরেই পুর-কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ওয়ার্ডে জিআর করার সময়ে ফ্ল্যাটগুলিকে জমির দাম ও বাড়ি তৈরির খরচের উপরে কর নির্ধারণ করতে নির্দেশ দেন। ২০০৭ সালের জুলাই মাসের মধ্যে হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি ওয়ার্ডে জি আর-ও হয়ে যায়। বাকি থাকে ২৯টি ওয়ার্ড। অভিযোগ, এর মধ্যেই ২০০৭ সালে রহস্যজনক ভাবে পুরসভার মূল কম্পিউটার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিগড়ে যায়। ফলে নতুন ভাবে ফ্ল্যাটের কর নির্ধারণ হলেও বিল দেওয়ার প্রক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে বন্ধ হয়ে যায় বাকি ২৯টি ওয়ার্ডের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত্যন্তর না দেখে পুর-কর্তৃপক্ষ এর পরে নিজেদের রাজস্ব আদায়ে পুরনো হারে অর্থাত্‌ ভাড়াটে হিসেবে ফ্ল্যাটমালিকদের করের বিল পাঠাতে শুরু করেন। সেই অবস্থা আজও বহাল রয়েছে বলে অভিযোগ। কারণ, আজ পর্যন্ত বিগড়ে যাওয়া কম্পিউটার সারানো যায়নি। পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট দফতরের এক অফিসার জানান, গত ৬ বছরেই ফ্ল্যাটমালিকরা সম্পত্তিকর বাবদ অতিরিক্ত প্রায় ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। তা সরকারি অডিটে ধরা পড়েছে। কম্পিউটার সারানো হয়ে গেলে তা পুরসভাকে ফেরত দিতে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.