|
|
|
|
বৃষ্টিতে জলবন্দি গুয়াহাটি
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
যেদিন গুয়াহাটির বন্যায় মৃতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, সে দিন রাতেই ফের গুয়াহাটির রাস্তায় জমা জলে তড়িদাহত হয়ে মারা গেলেন এক মহিলা। পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি জেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে গুয়াহাটির বহু এলাকা জলমগ্ন। কৃত্রিম বন্যা নিয়ন্ত্রণে গুয়াহাটি পৌর নিগম বহু প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন অবধি তা কাজে দেয়নি। ফলে অনিল নগর, নবীন নগর, তরুণ নগর, আর জি বরুয়া রোড, জিএনবি রোড, মণিরাম দেওয়ান রোড, চাঁদমারি, গণেশগুড়ি, পাঞ্জাবারি, এমনকী গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতরেও হাঁটু ছাড়িয়ে জল জমে রয়েছে। জিএস রোডেও জল জমে যান চলাচল বিঘ্নিত। দু’দিনের বেশি নর্দমা ও নালার নোংরা জল জমে পূতিগন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আজ সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে বাসিন্দারা বিক্ষোভে সরব হন। সরকারের বক্তব্য, জবরদখল, পাহাড় কাটা, নর্দমায় প্লাস্টিক ফেলার নাগরিক বদভ্যাসের ফলেই এই ঘটনা। এর মধ্যেই জমা জলের মধ্য দিয়ে যেতে গিয়ে গত রাতে বাসন্তী দেবী নামে এক মহিলা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতদেহ ঘিরে অনিল নগরের মানুষ প্রতিবাদ শুরু করেন। কামরূপ জেলা প্রশাসন নিহতের নিকটাত্মীয়কে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও এত কম ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বিক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। |
হঠাৎ বৃষ্টিতে গুয়াহাটি শহরের বিভিন্ন অংশে জমে যায় জল।
শুক্রবার অনিলনগরে তোলা উজ্জ্বল দেবের ছবি। |
এ দিকে, গত কাল বিকেলেই রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ২০১১ সালের ২১ অক্টোবর জল জমা জু-রোডে ডুবে মারা যাওয়া বিনয়মোহন দাসের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জু রোড তিনিয়ালিতে জমা জলের তলায় খোলা থাকা নর্দমার ভিতর পড়ে ডুবে গিয়েছিলেন বিনয়বাবু। পরদিন তরুণ নগরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। গুয়াহাটির উপভোক্ত অধিকার সুরক্ষা ফোরাম বা কনজিউমার লিগাল প্রোটেকশন ফোরামের মুখ্য কে-অর্ডিনেটর অজয় হাজরিকা মৃতের পরিবারের হয়ে গুয়াহাটি পুরসভা ও পূর্ত দফতরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি আফতাব শইকিয়া ও সদস্য তরুণ ফুকন দেড় বছরের শুনানি শেষে অসম সরকারকে তিন মাসের মধ্যে বিনয়বাবুর পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন। দুই অভিযুক্ত বিভাগের কাছ থেকে সমান ভাগে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করা হবে।
এ দিন মানবাধিকার কমিশনের রায়কে স্বাগত জানালেও ফোরামের তরফে আবেদন জানানো হয়, কেবল ক্ষতিপূরণ দিলেই সরকারের ব্যর্থতা ঢাকা যাবে না। দোষী কর্মচারীদের শাস্তিও দিতে হবে। ফোরাম জানায়, ২০০৩ সালে উপামণি চৌধুরী, ২০০৬ সালে ঝুমুর কর্মকার, ২০১১ সালে বিনয়মোহন দাস, ২০১২ সালে ১৪ বছরের সাগরিকা বরা ও মাণিক নাথ, এ বছর বাসন্তী দেবীর মৃত্যু দেখিয়ে দিল মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও গুয়াহাটির কৃত্রিম বন্যা গত দশ বছরে ছ’জনের জীবন কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও একই রয়েছে। এখনও প্রতি বছর নগরবাসীকে বর্ষায় প্রাণ হাতে করে চলাফেরা করতে হয়। |
|
|
|
|
|