ঘর থেকে উদ্ধার ২ বালিকা, নরমুণ্ড
মাবস্যার সন্ধ্যা। আলো-আঁধারি ঘরে জ্বলছে ধুনি। নরমুণ্ড দিয়ে সাজানো পুজোর বেদি। গলায় মালা পড়া দুটি শিশুকে ঘরের ভিতরে হাত-পা বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝে মধ্যেই গুরু গম্ভীর স্বরে মন্ত্রোচ্চারণ করছেন কাপালিক। কখনও জ্বলন্ত ধূপের ছ্যাঁকা দিচ্ছে সে শিশুদের গায়ে। হাতে খোলা তরোয়াল। কালীভক্ত কাপালিকের হাতে তরোয়াল দেখেই ভয়ে চিল-চিৎকার করে কেঁদে উঠল শিশু দুটি। আর তাতেই মিলল রেহাই। বাচ্চার কান্না শুনেই কাপালিকের ঘরের দরজা ভেঙে তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলল এলাকার লোকজন।
কাপালিকবেশী ব্যক্তি আর কেউ নয়। ধানবাদ রেল পুলিশের হাবিলদার মুনিলাল রাম। আপাতত ধানবাদ থানার হাজতে সে। অভিযোগ, দুই শিশুকে বলি দেওয়ার উদ্দেশে সে ভুলিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এসেছিল। ওই
কাপালিক
মুনিলাল রাম
হাবিলদারের ঘর থেকে ন’টি নরমুণ্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, করোটিগুলি যাঁদের, তাঁরা কাপালিকবেশী ওই হাবিলদারের হাতেই কোনও না কোনও সময় নিহত হয়েছেন। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে দেখতে রেল পুলিশের ওই হাবিলদারকে পুলিশি হেপাজতে নিয়েছে ধানবাদ থানা।
তদন্তকারীরা জানান, ধানবাদের রাঙাটাঁড় এলাকার বাসিন্দা রমেশ যাদবের দুই মেয়ে, ছ’ বছরের সীমা ও চার বছরের ছোটিকে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও দু’জনে বাড়ি না ফেরায় দুই শিশুর অভিভাবক তাদের খুঁজতে বেরোয়। প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসা করে তাঁরা জানতে পারেন রেল পুলিশের হাবিলদার মুনিরামের সঙ্গে বিকেলে দু’জনকে দেখা গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে তার ঘরের কাছে গিয়েই সীমা ও ছোটির বাবা রমেশ তাঁর দুই মেয়ের কান্না শুনতে পান। মুনিলালের ঘরের দরজা ভেঙে দেন এলাকার লোকজন। ঘরে ঢুকে মেয়েদের উদ্ধার করতে গেলে মুনিলালের সঙ্গে হাতাহাতি হয় প্রতিবেশীদের। মুনিলাল ত্রিশূল নিয়ে আক্রমণ করে তাঁদের। ত্রিশূলের আঘাতে জখম হন কয়েকজন। সীমা ও ছোটি জানিয়েছে, ঘরে নিয়ে গিয়ে তাদের বিস্কুট ও জল খেতে দেয় ওই কনস্টেবল। তারপর তাদের ফুলের মালা পড়িয়ে দেয়। তারপর মন্ত্র পড়তে থাকে। আর গায়ে ধুপের ছ্যাঁকা দিতে থাকে। তারপর যখন ওই কনস্টেবল তরোয়াল বের করে তখনই তারা ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। পুলিশের ধারণা, অন্ধ বিশ্বাস থেকে ওই কনস্টেবল ওই দুই শিশুকে বলি দেওয়ার কুমতলব এঁটেছিল।

বাবার সঙ্গে দুই শিশু। —নিজস্ব চিত্র
ওই কনস্টেবল নিজের স্ত্রীকে খুন করে হীরাপুর শ্মশানে পুঁতে দিয়ে তার কাটা মুণ্ডু বাড়িতে এনে রেখেছিল। পুলিশ সুপার বলেন, “ঘর থেকে উদ্ধার করা মুণ্ডগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। একই সঙ্গে দেখা হবে আশপাশের এলাকায় কেউ নিখোঁজ রয়েছে কিনা।” মুনিলালের বাড়ি থেকে তিনটি তরোয়াল ও একটি ত্রিশূলও আটক করেছে পুলিশ। যদিও মুনিলাল জানায় সে কালীভক্ত। নরমুণ্ডগুলি সে পশ্চিমবঙ্গের তারাপীঠ থেকে এনেছে। তবে তারাপীঠের কোথা থেকে সে যোগাড় করেছিল কিংবা এর পিছনে কঙ্কাল পাচার চক্র রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গেও কথা বলা হবে বলে জানায় ঝাড়খণ্ড পুলিশ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.