দু’বছরের শিশুটি দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাত প্রতিবেশী কাকিমার ঘরে। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে শিশুটিকে তিনি দেখতে পাননি। ভেবেছিলেন, পাড়াতেই কোথাও খেলছে। কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে তিনি দেখেন, তাঁর বাড়ির সামনে কয়েক হাত দূরে কাপড় পাতা। তলা দিয়ে উঁকি মারছে ছোট্ট দু’টি পা। ততক্ষণে পাড়ার সবাই জেনে গিয়েছেন, কিরণকুমার চৌধুরী নামে ওই শিশুটি কুয়োয় পড়ে মারা গিয়েছে। খানিক পরে প্রতিবেশী কাকিমাও জানলেন সেই কথা।
পুলিশ জানায়, সকাল ৮-৩০ নাগাদ মানিকতলার ক্ষুদিরাম পল্লিতে একটি বাড়ির ৩০ ফুট গভীর পাতকুয়োয় পড়ে যায় কিরণ। শিশুটির পরিবার অন্য একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। বহুক্ষণ কিরণ নিখোঁজ ছিল। পাড়ার কয়েক জন এক সময় দেখেন, কিরণদের প্রতিবেশী কার্তিক সূত্রধরের বাড়ির পরিত্যক্ত কুয়ো থেকে বুদবুদ বেরোচ্ছে। বাঁশ দিয়ে পাঁক সরাতেই শিশুটির দেহ ভেসে ওঠে। বি সি রায় শিশু হাসপাতালে চিকিত্সকেরা কিরণকে মৃত ঘোষণা করেন।
২০১২-এ বেহালায় একই ভাবে কুয়োয় পড়ে মৃত্যু হয় এক মিস্ত্রির। তার পরে বেহালায় পরিদর্শন করে যত্রতত্র বিনা অনুমতির কুয়ো বুজিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। তবে সে সিদ্ধান্ত এক বছর আগে হলেও, তা যে মানা হয়নি তার প্রমাণ এ দিনের ঘটনা। এ দিন যে কুয়োয় কিরণের মৃত্যু হয়, সেটি খোঁড়ার অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। |
বাসিন্দারা জানান, এলাকায় জলসঙ্কট দীর্ঘ দিনের। অভিযোগ, পুরসভাকে বহু বার জানালেও তারা জলের পর্যাপ্ত জোগান দিতে পারেনি। তাই এলাকার বহু বাড়িতেই কুয়ো খোঁড়া হয়েছে। পাড়ার এক বাসিন্দা তারক পোদ্দার বলেন, “এখানে ৩১৭টি পরিবার থাকে। তিনটি মাত্র পুরসভার কলে ভাল জল আসে না। তাই অনেকেই নিজের বাড়ির ভিতরে পাতকুয়ো বানান। এলাকার লোক টের পান না।”
কার্তিকবাবুর স্ত্রী মঞ্জুদেবী বলেন, “আমাদের কুয়োটি ২০ বছরের পুরনো। এর জল অনেকেই ব্যবহার করতেন। কিন্তু বছর চারেক কুয়োটি ব্যবহার হচ্ছিল না। বাড়িতে আমার তিন বছরের নাতিও রয়েছে। এমন অঘটন আগে হয়নি।” পাড়ার লোক এ দিন কুয়ো বুজিয়ে দেন।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভোলা চক্রবর্তী বলেন, “কাউন্সিলর তহবিল থেকে পাড়ায় জলের লাইন বসিয়েছি। তা-ও সমস্যা পুরো মেটেনি। কে বাড়ির ভিতরে পাতকুয়ো খুঁড়েছেন, তা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু কুয়োর চারপাশে উঁচু দেওয়াল থাকলে এমন ঘটত না।” |