খেলার খবর
থানা লিগের ফাঁকা মাঠ
ভরাতে দাওয়াইয়ের খোঁজ

ছর পাঁচেক আগেও ছবিটা ছিল অন্য রকম।
মাঠ ভরা থাকত কানায় কানায়। খেলার দিন কয়েক আগে থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়ত। যেন, মোহনবাগন-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ। অনেক খেলায় টিকিট কেটেও ঢুকতে হত মাঠে। দর্শকদের চিৎকারে কান পাতা দায় হত।
হাওড়া জেলার থানা ফুটবল লিগের সেই সুদিন আর নেই। প্রায় সব লিগই ধুঁকছে। মাঠে দর্শক হয় না। কী ভাবে যে পুরনো দিন আবার ফিরে আসবে তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের চিন্তার শেষ নেই। দিন কয়েক আগেই ডোমজুড়ের প্রাচ্যভারতী ক্রীড়াঙ্গনে একটি থানা লিগের খেলায় দেখা গেল মেরেকেটে একশো দর্শক। খেলা নিয়ে তাঁদের সেই উত্তেজনাও নেই।
কলকাতা ফুটবলের ‘সাপ্লাই লাইন’ থানা লিগগুলির দুর্দশায় কলকাতা মাঠে ক্রমেই কমছে বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা। ভূমিপুত্রের অভাব সন্তোষ ট্রফির বাংলা দলেও।
এই হাল কেন?
ডোমজুড় থানা লিগের ক্লাব কোলড়া বীণাপানি ক্লাবের কর্তা মলয় মুখোপাধ্যায় মনে করেন, “টিভি খুললেই এখন বিদেশি ফুটবল দেখা যায়। জেলায় ভাল ফুটবলারও উঠছে না। বেশির ভাগ ক্লাবই ভাড়া করা ফুটবলার খেলাচ্ছে। ফলে পাশের বাড়ির ছেলের খেলা দেখার সুযোগও নেই। আগ্রহ থাকবে কী করে?”
জগৎবল্লভপুর থানা লিগের ক্লাব সরস্বতী স্পোর্টিং ক্লাবের কর্তা লোকনাথ বিশ্বাস, নবারুণ অ্যাথেলেটিক ক্লাবের কর্তা সৌগত পালরা জানালেন, থানা লিগে উত্তেজনা যেমন কমেছে তেমনি কমেছে খেলার সংখ্যাও। কিন্তু থানা লিগে ভাল খেলেই অনেকে কলকাতার ক্লাবে সুযোগ পেয়েছেন।
থানা লিগ পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট থানা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন। এলাকায় গুণীজন কিংবা প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়েই তৈরি হয় থানা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন কমিটি। হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলায় উলুবেড়িয়া থানা লিগ বন্ধ। উলুবেড়িয়া থানা ক্রীড়া সংস্থার সাঁকরাইল, জগৎবল্লভপুর-সহ বেশ কিছু থানা লিগ অনিয়মিত। তবে আমতা, ডোমজুড়, বাউড়িয়া, বাগনানের মত কিছু থানা লিগ নিয়মিত হয়। থানা লিগের সমস্যা সংশ্লিষ্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মেটানোর কথা। আমাদের জানালে আমরা যাই।”
আগে কী রকম উৎসাহ ছিল থানা লিগকে কেন্দ্র করে?
হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের নবারুণ অ্যাথেলেটিক ক্লাব ও সরস্বতী স্পোর্টিং ক্লাব। দু’টি ক্লাবের দুরত্ব হাত দেড়েকের। দুই প্রতিবেশীর মাঠে দেখা হলেই রীতিমত যুদ্ধং দেহি মেজাজ। দর্শকও তা উপভোগ করত তারিয়ে তারিয়ে। জগৎবল্লভপুর থানারই বড়গাছিয়া গ্রামের বড়গাছিয়া শান্তি সঙ্ঘ ও বড়গাছিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের খেলাতেও উপচে পড়ত মাঠ। ডোমজুড় বিপ্লবী সঙ্ঘ বনাম ডিওয়াইএমএ এবং মাকড়দহ ইউনিয়ন ক্লাব বনাম পূর্বাহ্নপাড়া অঙ্কুরহাটি জুবিলি স্পোর্টিং ক্লাব (পিএজে) মুখোমুখি হলে বছর কয়েক আগেও মাঠে থাকত পুলিশ। কোলড়া বীণাপানি ক্লাব ও বিকেএস ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল প্রবল।
একই লড়াই দেখা যেত দুঁইল্যা অ্যাথেলেটিক ক্লাব বনাম আন্দুল স্পোর্টিং ক্লাব কিংবা দুঁইল্যা অ্যাথেলেটিক ক্লাব বনাম শীতলা স্পোর্টিং ক্লাবের খেলায়। সব জায়গাতেই এখন ভাটার টান।
ডোমজুড় থানা লিগের ক্ষেত্রে, থানা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে এলাকার সব ফুটবল ক্লাবকে নিয়ে আলোচনা করে খেলার স্থান ও তারিখ ঠিক করা হয়। প্রায় একই পদ্ধতি নেয় অন্য থানা ক্রীড়া সংস্থাগুলিও। কিন্তু খেলার দিন ও স্থান জানিয়ে হয় না কোনও প্রচার। ফুটবলপ্রেমীরা জানতেও পারেন না কবে, কোথায় খেলবে তাঁর পাড়ার ক্লাব। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, থানা লিগের চ্যাম্পিয়ন দলকে দলগত ভাবে দু’হাজার কিংবা তার সামান্য কিছু টাকা দেওয়া হয়। তবে ব্যক্তিগত পুরস্কার থাকে। দুঁইল্যা অ্যাথেলেটিক ক্লাবের ফুটবলার উজ্জ্বল চক্রবর্তী (উদয়) জানালেন, “অনেক সময়ই লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। পুরস্কার মূল্যও খুব কম।” তাঁর দাবি, “প্রচার ও অর্থমূল্য ঠিক থাকলে কিন্তু মাঠে দর্শক আসে। তাই পাড়ায় কোনও দিনরাতের টুর্নামেন্ট হলে মাঠে ভিড় সামলাতে পুলিশ ডাকতে হয় এখনও।” আর্থিক সমস্যা মেনে নিচ্ছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারাও। তাঁরা জানালেন, প্রতিবছর মে মাসের শেষ কিংবা অগস্টের শুরুতে প্রতিটা থানা একাদশকে নিয়ে হয় জোনাল থানা চ্যাম্পিয়ানশিপ। গত বছর থেকে এই প্রতিযোগিতায় সামান্য হলেও পুরস্কারমূল্য দেওয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও দেওয়া হচ্ছে ফুটবলারদের যাতায়াত খরচ ও টিফিন।
ছক বদলালে হয়ত এখনও ম্যাচে ফেরা সম্ভব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.