মুখ্যমন্ত্রীর দার্জিলিং সফরের আগে নিজের খাসতালুকে কংগ্রেসের বিক্ষোভ ও হুমকির মুখে পড়লেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। রাজ্যের তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারের দু’বছরের পূর্তির প্রাক্কালে গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে রাস্তায় নামলেন কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলার নেতা-বিধায়কেরা। যদিও এই আন্দোলনের কথা তাঁর জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু। কংগ্রেসের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গৌতমবাবু।
বুধবার বেলা দেড়টা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করে কংগ্রেস। সামিল হন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকারও। আন্দোলনকারীদের মন্ত্রী নানা ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু, সব অভিযোগের লিখিত জবাব তিন মাসের মধ্যে না পেলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে জলপাইগুড়ির যে কোনও জায়গায় ঢুকতে বাধা দেওয়ার হুমকি দেন আন্দোলনকারীরা। মঞ্চে উঠে মন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা ও মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্করবাবু। সুখবিলাসবাবুর অভিযোগ, “আমি বিধানসভার পরিকল্পনা, অর্থ দফতর বিষয়ক কমিটির সদস্য। সেই সুবাদে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের খরচে অস্বচ্ছতা নজরে এসেছে।” |
কংগ্রেসের অভিযোগ, ২০১১-’১২ সালের বাজেটে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ১৩১ কোটি টাকা খরচের কথা বলেছে। অথচ বিধানসভায় বক্তব্য পেশ করার সময় ৬৭ কোটি টাকা খরচের কথা হিসেব দাখিল করা হয়েছে। এতে গৌতমবাবুর দফতরের স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন উৎসবে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণের জন্য বরাদ্দ ২ কোটি ৮ লক্ষ টাকা বিধি ভেঙে খরচ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ কংগ্রেসের। শুধু তাই নয়, জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের পরিকাঠামো গড়তে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করলেও বাস্তবে কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। এসজেডিএ-র (শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ) অন্দরে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে এফআইআর করায় মন্ত্রী উদ্যোগী হচ্ছেন না কেন, সে প্রশ্নও তুলেছে কংগ্রেস। এসজেডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান গৌতমবাবুই।
মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে কংগ্রেস। আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, চেল নদীর উপরে ১২০ কোটি টাকায় সেতু নির্মাণ হবে বলে দাবি করা হয়েছে। অথচ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সারা বছরের বাজেটই সাকুল্যে ২০০ কোটি টাকা! কোথা থেকে সেতু তৈরির টাকা আসবে, তা কেন বলা হচ্ছে না?
১৪ মে মুখ্যমন্ত্রী ফের দার্জিলিং সফরে আসবেন। তার আগে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং এসজেডিএ-র অন্দরে আলোড়ন পড়েছে। গৌতমবাবুর অবশ্য দাবি, “কংগ্রেসের নেতারা না-বুঝে অভিযোগ করছেন। ওঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। বিধানসভায় ও বাজেটের হিসেবে ফারাক থাকার বিষয়টি নথিপত্র দেখে জানাব বলেছি। চেল নদীর সেতুর বরাদ্দের বিষয়টিও ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।” সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে তাঁর দফতর ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে বলেও দাবি মন্ত্রীর। কিন্তু,
অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের টাকা কেন উৎসবে খরচ হল? মন্ত্রীর জবাব, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন উৎসবে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় খেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্লাবকে টাকা দেওয়া হয়েছে।”
জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৈকত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “মন্ত্রী অভিযোগ নিয়ে যা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, তা লিখিত ভাবে দিতে চাইছেন না। আমরা ওঁকে তিন মাস সময় দিয়েছি। তার মধ্যে সব অভিযোগের লিখিত জবাব কিংবা যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে টানা ওঁর দফতর ঘেরাও হবে। গৌতমবাবুকে আমরা জলপাইগুড়িতে ঢুকতেও বাধা দেব। কালো পতাকা দেখাব।”
গৌতমবাবুর মন্তব্য, “আমি উন্নয়নের কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাব। থামতে রাজি নই। তাতে বাধা দিতে কেউ কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ করতেই পারেন। আমি তাঁদেরও স্বাগত জানাব। এ সব দেখলে কাজে আরও উৎসাহী হই। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নীতিতেই আমরা চলি।” মন্ত্রীর দাবি, এ দিনের আন্দোলনে জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসুর অনুমোদন নেই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর নিয়ে তাঁর কোনও অভিযোগও নেই।
মোহনবাবু বলেছেন, “জেলা কংগ্রেস কমিটিকে না-জানিয়ে কার অনুমতিতে এ দিনের আন্দোলন হয়েছে, তা নিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।” |