প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন দীর্ঘদিন। অথচ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেননি। করে থাকলেও ৫০% নম্বর নেই। এই ধরনের সব প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে হবে। পেতে হবে ৫০% নম্বর। তবে তাঁরা এই পরীক্ষা দেবেন রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে। পঠনপাঠন শুরু হবে জুলাইয়ের মধ্যে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী ২০০১-এর সেপ্টেম্বরের পরে যাঁরা শিক্ষকতা শুরু করেছেন, তাঁদের সকলেরই উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০% নম্বর এবং দু’বছরের প্রশিক্ষণ (ডিএলএড) থাকতে হবে। এ রাজ্যে কিছু কাল আগে পর্যন্ত প্রাথমিকে শিক্ষকতার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগাতা ছিল মাধ্যমিক। ফলে এমন হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা মাধ্যমিক পাশ। অনেকে আবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন, কিন্তু ৫০% নম্বর পাননি। এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণও নেই অনেকের। ওই যোগ্যতামানে পৌঁছনোর জন্যই তাঁদের উচ্চ মাধ্যমিক দিতে হবে। ২০১৫-র ৩১ মার্চের মধ্যে তাঁদের প্রশিক্ষণও শেষ করে ফেলতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে এনসিটিই।
ওই শিক্ষকদের উচ্চ মাধ্যমিক পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করবে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ করবে প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত। রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় জানান, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পঠনপাঠন শুরু হবে জুলাইয়ের মধ্যে। ক্লাস হবে শনি-রবিবার। প্রশিক্ষণ ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পঠনপাঠন একসঙ্গে হবে বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। শিক্ষক-শিক্ষিকারা উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০% না-পেলে তাঁদের প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে না বলেই এনসিটিই-র নির্দেশ। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন, বুধবার থেকে তার ব্যবস্থা করেছেন রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় সংসদ কর্তৃপক্ষ। সংসদের ওয়েবসাইট www.twbcros.org-এ ১৫ জুন পর্যন্ত আবেদন জানানো যাবে। ফাল্গুনীবাবু বলেন, “শিক্ষক বা শিক্ষিকা যে-ব্লকে শিক্ষকতা করছেন, তার আশেপাশেই সংসদের কোনও শিক্ষা কেন্দ্রে তাঁর পড়ার বন্দোবস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।” রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকার পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করছেন, তাঁদের চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
• যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক পড়েননি।
• যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেও কোনও বিষয়েই ৫০% নম্বর পাননি।
• উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষক, যাঁরা কয়েকটি বিষয়ে ৫০% পেলেও সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশের কম পেয়েছেন।
• উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে যাঁরা অকৃতকার্য। সংখ্যাটা প্রায় ৬০ হাজার হবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের হিসেব।
এর মধ্যে প্রথম দু’ধরনের প্রার্থীদের সব বিষয়ে পড়াশোনা করে গোটা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ৫০% পেতে হবে। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ ধরনের প্রার্থীরা চাইলে কয়েকটি বিষয়ে ‘ক্রেডিট ট্রান্সফার’ হবে। ক্রেডিট ট্রান্সফার কী? ফাল্গুনীবাবু বলেন, “ধরা যাক, কেউ ইংরেজিতে কাঁচা। তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে ৩০% বা তার বেশি পেয়েছেন। সেই শিক্ষক চাইলে আবার ইংরেজি পরীক্ষা না-ও দিতে পারেন। সে-ক্ষেত্রে ইংরেজিতে তাঁর আগের নম্বরই থাকবে। যে-বিষয়ে তিনি স্বচ্ছন্দ, তাতেই ফের পরীক্ষা দিয়ে মোট নম্বর বাড়াতে পারবেন।” |