বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবন নিয়ে ক্ষোভ সর্বস্তরে
গান-নাটক কম, দাপট লগ্নি সংস্থার অনুষ্ঠানের

দৃশ্য ১। হলের মাঝামাঝি বসে নাটক দেখছিলেন এক দম্পতি। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে নাটকের মাঝপথেই তাঁরা বাইরে বেরিয়ে এলেন। বললেন, “এ ভাবে কি নাটক দেখা যায়। সাউন্ড বক্স থেকে ভেসে আসা সংলাপ চাপা পড়ে যাচ্ছে পাখার ঘড় ঘড় শব্দে। শব্দ করলেও পাখার হাওয়াও গায়ে লাগে না। ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা!”
দৃশ্য ২। বাথরুমে ঢুকেই গা গুলিয়ে উঠেছিল এক তরুণী শিল্পীর। চারপাশে নোংরা জল জমে রয়েছে। ভিন জেলার সেই শিল্পী ফিরে গিয়ে তাঁর সঙ্গীদের কাছে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন।

এই দুরাবস্থা বাঁকুড়া শহরের এক মাত্র বড় সভাঘর রবীন্দ্রভবনের (জেলা পরিষদের সভাঘর নির্মাণ কাজ এখনও অসম্পূর্ণ)। সত্তরের দশকের গোড়ায় তৈরি করা এই সভাঘর এখন কার্যত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণ দশাপ্রাপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংগঠন থেকে শিল্পীরা বহু বার প্রশাসনের নানা স্তরে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। শিল্পীদের অভিযোগ, সাউন্ড সিস্টেম বলে বাস্তবিক কিছুই নেই। শব্দের প্রতিধ্বনি হওয়ায় দর্শকদের শুনতে অসুবিধা হয়। কাঠ ও সিমেন্টের তৈরি মঞ্চটিও নাট্যানুষ্ঠান করার উপযুক্ত নয়। বসার চেয়ারগুলির মধ্যে কয়েকটি ভাঙাচোরা। শিল্পীদের সাজঘরও অথৈবচ। অপরিস্কার শৌচাগার নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। শিল্পীরা তাই অনেকেই মুখ ফেরাচ্ছেন রবীন্দ্রভবন থেকে।
রবীন্দ্রভবনের দেওয়ালে পানের পিক। বাঁকুড়ায়।
বাঁকুড়ার শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সম্পাদক মধুসূদন দরিপার কথায়, “পাখার শব্দের দাপট ও প্রতিধ্বনির জন্য গরমে আমরা নাটক করা বন্ধ করে দিয়েছি। ঈদানিং লগ্নি সংস্থাগুলি ও রাজনৈতিক দলগুলির সভার চাপ বেড়ে গিয়েছে রবীন্দ্রভবনে। যত্ন না হওয়ায় তাই রবীন্দ্রভবনের পরিকাঠামো আরও খারাপ হচ্ছে।” বাঁকুড়ার মিলনতীর্থ নাট্য সংস্থার সম্পাদক অশোক পাত্রেরও আক্ষেপ, “এখানে অনুষ্ঠান করতে গেলে নিজেদেরই সব ব্যবস্থা করতে হয়। সাজঘরে আলো লাগানো থেকে বাথরুম সাফের ব্যাপার নিজেদেরই দেখতে হয়।” এই সংস্থা রবীন্দ্রভবনে ফি বছর নাট্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। তাঁর কথায়, “ভিন জেলা থেকে নাট্যদল আসে। হলের এই দশা দেখে নাট্যকর্মীরা হাসাহাসি করে। নিজেদের লজ্জা হয় তখন।”
কী ভাবছে প্রশাসন? বাঁকুড়ার তৃণমূল বিধায়ক মিনতি মিশ্রের সাফাই, “রবীন্দ্র ভবন সংস্কারের খরচ অনেক বেশি। আমার একার পক্ষে এই কাজ সম্ভব নয়।” জেলার অন্য জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য নিচ্ছেন না কেন? সদুত্তর মেলেনি। মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সভাঘরটি সংস্কারের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” কাজ কবে শুরু হবে, জবাব মেলেনি।
পুরুলিয়ায় নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে।
বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবন নিয়ে যখন ক্ষোভ সর্বস্তরে, তখন এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে পড়শি জেলা পুরুলিয়া। ৬ কোটি টাকায় পুরনো রবীন্দ্রভবন ভেঙে সেখানে ৮৫০ আসনের নতুন সভাঘর তৈরি হচ্ছে। কয়েকজন সাংসদের তহবিল থেকে পাওয়া গিয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা, বাকি টাকা দিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার। ২০১০ সালে শুরু হওয়া এই ভবন নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।
নির্মাণ কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের বাস্তুকার কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ৭৫০ আসন নীচে, ১০০ আসন ব্যালকনিতে। অত্যাধুনীক প্রযুক্তির সাউন্ড সিস্টেম, উন্নতমানের মঞ্চ থাকছে। তৈরি হচ্ছে ফুডকোর্টও। সামনে অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি নতুন মূর্তি বসানো হবে। ‘অন্য চোখে’ নাট্যসংস্থার সভাপতি অনুপ মুখোপাধ্যায় জানান, আগে যা ছিল তা সভাঘরের নামে একটি গুদামঘর বলা যেতে পারে। অনুষ্ঠান করার অভিজ্ঞতা ভাল নয়। এ বার আশা করি প্রশাসন এ ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.