কাশীপুরে আইটিআই গড়তে কোটি টাকার জমি দান
শিক্ষানুরাগী বাবার স্বপ্ন ছিল, এলাকায় শিক্ষার বিস্তার ঘটুক। প্রয়াত বাবার স্বপ্ন সফল করতে এলাকায় কারিগরি কলেজ গড়ার জন্য তিন একর জমি দান করলেন পুরুলিয়ার কাশীপুরের কল্লোলী গ্রামের বাসিন্দা অরুণ চট্টোপাধ্যায়। যে রাজ্যে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন গড়ার জমি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জমি খুঁজতে প্রশাসন নাকাল হয়, সেখানে আইটিআই গড়ার জন্য অরুণবাবুর দান করা জমির মূল্য সরকারি হিসেবে কোটি টাকার বেশি!
এত বড় একটা কাণ্ড ঘটিয়েও অবশ্য প্রচারের আলো নিজের উপরে বেশি পড়তে দিতে নারাজ স্থানীয় গৌরাঙ্গডি গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব অরুণবাবু। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “বাবা বরাবরই চাইতেন এলাকায় শিক্ষার প্রসার হোক। বাবার সেই স্বপ্নপূরণ করতেই জমি দিয়েছি।” বুধবার দুপুরে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার সঙ্গে কাশীপুরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে পুরুলিয়ার জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির নামে তিন একর জমি দান করেন অরুণবাবু। সাব-রেজিস্ট্রার বিনয়কৃষ্ণ সরকার জানান, নিয়ম অনুযায়ী দান করা জমির জন্য কোনও ‘স্ট্যাম্প ডিউটি’ লাগে না। বিনামূল্যেই জমি হস্তান্তর হয়েছে।
নিজের দান করা জমিতে অরুণবাবু।—নিজস্ব চিত্র
গত ডিসেম্বরে পুরুলিয়ার হুড়ায় এক প্রশাসনিক জনসভায় এসে কাশীপুরে আইটিআই গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরও আগে নিজের নির্বাচনী এলাকায় আইটিআই গড়ার প্রস্তাব কারিগরি শিক্ষা দফতর ও জেলা প্রশাসনের কাছে দিয়েছিলেন বিধায়ক স্বপনবাবু। বাম সরকারের আমলেও কাশীপুরে আইটিআই গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রের খবর, কাশীপুর ব্লক সদর থেকে কিছু দূরে নারায়ণগড় গ্রামে সরকারি জমি চিহ্নিতও হয়েছিল। স্বপনবাবুর দাবি, প্রায় চার একরের সেই জমিতে বর্তমানে ২০-২৫টি আদিবাসী পরিবার বাস করে। ওই জমিতে কলেজ গড়তে গেলে সেই পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। তাই নতুন জমির খোঁজ চলছিল।
আর খোঁজ করতে গিয়েই বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ হয় অরুণবাবুর। ঘটনাচক্রে দু’জনেরই বাড়ি কল্লোলী এলাকায়। বিধায়কের কথায়, “অরুণবাবুকে জমির সমস্যার কথা বলতেই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে শুয়ারিয়া মৌজায় নিজের জমিতে আইটিআই গড়ার প্রস্তাব দেন।” সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রের খবর, ব্লক অফিস থেকে মাত্র দু’শো মিটার দূরত্বে কাশীপুর-বাঁকুড়া রাস্তার ধারের ওই জমির দাম সরকারি হিসেবেই ডেসিমেল প্রতি ৪০ হাজার টাকার বেশি। অরুণবাবুর দান করা তিন একর জমির বাজার দর বর্তমানে দেড় কোটি টাকার বেশি বলে এ দিন জানিয়েছেন বিধায়কই। অরুণবাবুর বাবা, প্রয়াত উপেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অবদান রয়েছে এলাকায় শিক্ষা-বিস্তারে। কয়েক দশক আগে এলাকায় উপেন্দ্রনাথবাবুর গড়া পাঠশালাই উন্নীত হয়েছে কল্লোলী প্রথামিক বিদ্যালয়ে। অরুণবাবুর কথায় “আমাদের ব্লকে আইটিআই নেই। বাইরে পড়তে যেতে হয়। এখানে আইটিআই হলে অনেক বেশি সুযোগ পাবে ছেলেমেয়েরা। দেরি না করে তাই জমি দিয়েছি।” জমি দেওয়ার আগে হায়দরাবাদে কর্মরত এমবিএ উত্তীর্ণ ছেলে উৎপলেন্দুর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন অরুণবাবু। এ দিন ফোনে উৎপলেন্দু বলেন, “বাবা এই জমি দেওয়ায় দাদুর স্বপ্ন সার্থক হবে।” তবে প্রশাসনের কাছে ওই পরিবারের আর্জি, উপেন্দ্রনাথবাবুর নামে কলেজের নামকরণ হোক। বিধায়ক বলেন, “কোটি টাকা মূল্যের জমি নিঃশর্তে দান যাঁরা করেছেন, তাঁদের আর্জি পূরণের চেষ্টা করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.