অর্থলগ্নি সংস্থার ফাঁদে সর্বস্বান্ত বাগদা ব্লকেই উধাও ৩০০ কোটি
ন্যের জমিতে মজুরি খেটে গরু-বাছুর কিনেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার চাষি চিত্তরঞ্জন খা।ঁ সেই গরু-বাছুর বিক্রি করে সারদায় ৬০ হাজার টাকা রেখেছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল, কিছুটা টাকা বাড়লে, জমি কিনবেন। পরিবারে ফিরবে স্বচ্ছলতা। কিন্তু এখন সব আশা শেষ। ষাটোধ্বর্র্ চিত্তরঞ্জনবাবুর মতো দারিদ্রসীমার নীচে থাকা বাগদা ব্লকের কয়েক হাজার মানুষ এ ভাবেই বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে আজ সবর্স্বান্ত। কার্যত পথে বসেছেন তাঁরা।
রাজ্যে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ব্লকগুলির অন্যতম উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার বাগদা। কৃষি ও খেতমজুরি এখানকার প্রধান জীবিকা। বছরের সব সময় খেতে কাজ মেলে না। তাই ব্লকের কয়েক হাজার মানুষ কাজের সন্ধানে পাড়ি দেন কেরল, মুম্বই, তামিলনাড়ু-সহ ভিন রাজ্যে। বিদেশে বিশেষ করে আরবেও এখানকার বহু মানুষ ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে কাজ করে অর্জিত অর্থ লগ্নি সংস্থায় রেখেছিলেন তাঁদের পরিবারের লোকজন। কিন্তু বর্তমানে সবই শেষ।
বসিরহাটে সারদার অফিসে তল্লাশি।—নিজস্ব চিত্র।
সরকারি হিসাবে, বাগদা ব্লকের মোট এলাকা প্রায় ২৩৩ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ২ লক্ষ ৪২ হাজার। এর মধ্যে দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন প্রায় ৯২ হাজার মানুষ। ভিন রাজ্যে বা বিদেশে কাজ করতে যান প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ। এত বড় এলাকায় ব্যাঙ্ক রয়েছে ৯টি। পোষ্ট অফিসের সংখ্যাও বেশ কম। সারা দিনের কাজ বন্ধ রেখে অনেকেরই সময়, টাকা খরচ করে পোষ্ট অফিস বা ব্যাঙ্কে যাওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টরা বাড়ি এসে আমানত সংগ্রহ করতেন। এই সুবিধার কারণে গত পাঁচ বছরে এই ব্লকে ১৫টি অর্থলগ্নি সংস্থা গজিয়ে ওঠে। যা পরে আবার বন্ধও হয়ে যায়। প্রশাসনের হিসাবেই উঠে এসেছে এই তথ্য।
অভিযোগ, ওই সব সংস্থা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মতো অর্থ আত্মসাৎ করেছে। আষাঢ়ুর বাসিন্দা মানসী পাণ্ডে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। সংসারের সাশ্রয়ের আশায় নিজের আয় থেকে ‘ড্রিমরোজ’ নামে এক অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন। হেলেঞ্চার এক গৃহবধূর স্বামী কেরলে কাজ করেন। স্বামীর পাঠানো টাকা তিনি রাখতেন সারদায়। সব জলে গিয়েছে। বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক ও তৃণমূল নেতা দুলাল বর বলেন, “গোটা রাজ্যে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা এত মানুষ অর্থলগ্নি সংস্থায় প্রতারিত হওয়ার ঘটনা আর কোথাও ঘটেনি। গোটা বাগদার অর্থনৈতিক পরিকাঠামোটাই ভেঙে পড়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যাঁরা লিখতে-পড়তে পারেন শুধু তেমন মানুষজনই নন, শিক্ষিত মানুষেরাও লোভে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। এখন লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছেন না।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে রেনেসাঁস, ড্রিমরোজ, জনকল্যাণ সমিতি, লেপার্ড, মঞ্জুলেখা পপুলার প্রজেক্ট লিমিটেড, হেলেঞ্চা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি-র মতো আর্থিক সংস্থার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন এখানকার মানুষ। ওই সব সংস্থার অফিস বন্ধ হয়ে গিয়েছে, গ্রেফতারও হয়েছেন কয়েকজন কর্তা। কিন্তু সাধারণ মানুষ ওই সব লগ্নি সংস্থায় গচ্ছিত অর্থ আর ফেরত পাননি। রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী, শিক্ষক থেকে সমাজের সব স্তরের মানুষই যুক্ত ছিলেন ওই সব সংস্থায়। যে কোনও অনুষ্ঠানের জন্য ওই সব সংস্থা মোটা টাকা অনুদান দিত। এমনকী কিছু পুলিশ কর্মী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ওই সমস্ত লগ্নি সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। ফলে কখনও সন্দেহ হলেও সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতেও সাহস পাননি। বনগাঁ মহকুমা জুড়ে ওই সব লগ্নিসংস্থার অনেকে নামে-বেনামে সম্পত্তিও রয়েছে। প্রতারিত মানুষদের দাবি, সরকার ওই সব জমি-সম্পত্তি দখলে নিয়ে বিক্রি করে গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক। যেমন বনগাঁ গাঁধীপল্লি এলাকায় লেপার্ডের এবং টাউন হল ময়দান সংলগ্ন এলাকায় সারদার জমি রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সংস্থাগুলির কত পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.