ঘাট বলে আর চেনাই যায় না। তবু, ভাগীরথীর সেই সব ঘাট পেরিয়ে নিত্যদিন বেলডাঙার হাজার হাজার মানুষ পৌঁছন গন্তব্যে। একটানা বৃষ্টিতে সমস্যা বাড়ে আরও। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চলে নৌকা-লঞ্চ। তাই দুর্ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সমস্যা সমাধানে উদাসীন প্রশাসন।
ভাগীরথীর দু’পাড়ে রয়েছে নারকেলবেড়ে, শক্তিপুর, গড়দুয়ারা, কুমারপুর, সুজাপুর, সাটুই ও হালসানাপাড়া ঘাট। এই ঘাটগুলি উজিয়ে লোকজন অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজ ও বাজারে যান। রেজিনগরের ঘাট পার হয়ে ট্রেন ধরে অনেকে রাত পোহালে শিয়ালদহে আসেন। অন্য দিকে শক্তিপুর ঘাট পার হলেই হাওড়া যাওয়ার জন্য বাজারসৌ স্টেশন। সেখানেও হাওড়া-কাটোয়া-আজিমগঞ্জ যাওয়ার জন্য অনেকেই ভিড় করেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের বিনা নজরদারির সুযোগে নৌকাগুলি অতিরিক্ত যাত্রী তোলে। ফলে ঘন ঘন দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। বছর দুয়েক আগে ১৯ জন যাত্রী সহ একটি গাড়িকে নৌকায় তোলা হয়। অতিরিক্ত ভারে নৌকাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে জলে ডুবে মারা যান ১৮ জন। দুর্ঘটনার পরও থামেনি ঝুঁকির পারাপার। অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য বোঝাই করেই চলে রোজ দিন নৌকা চলাচল। নরম মাটি পার হয়ে মোটর বাইক, ছোট গাড়ি ও মাল নিয়ে নৌকায় উঠতে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা।
বেলডাঙার কুমারগ্রাম ফেরিঘাটের সমস্যার অন্ত নেই। ঘাটের পাশেই স্তূপাকারে পড়ে রয়েছে খড়। ছোট নৌকায় উঠছে সব্জি, ফল, সিমেন্ট। এমনকী, মালবাহী ছোট গাড়িও। ফেরিঘাটে টাঙানো নেই ভাড়ার তালিকা। ফলে যার কাছ থেকে যেমন ইচ্ছা ভাড়া আদায় করা হয়। নৌকায় ওঠার আগে রয়েছে নড়বড়ে বাঁশের মাচা। তার উপর দিয়েই কার্যত প্রাণ হাতে করে ওঠানামা করতে হয় যাত্রীদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ঘাটগুলির সংস্কারের ব্যাপারে প্রশাসনিক কর্তাদের বারবার জানিয়েও ফল মেলেনি। ভোটের সময় নেতারা নদী-ঘাটের ভোল পাল্টে দেওয়ার দেদার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোট ফুরোলেই এলাকায় আর তাঁদের পা পড়ে না। বেলডাঙা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের সুখেন হালদার বলেন, “অর্থের অভাবে সব কাজ করা যাচ্ছে না।” অন্যদিকে বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের বিবির বক্তব্য, “যাত্রীরা সচেতন হলে বন্ধ হবে নৌকাতে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি পূর্ণিমা দাস বলেন, “সমস্ত ঘাটেই শক্তপোক্ত মাচা ও আলোর ব্যবস্থা থাকা জরুরি। না থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” এলাকাবাসীরা অবশ্য শুকনো আশ্বাসে খুব একটা ভরসা রাখতে পারছেন না। |