‘গুরু পি কে-র পরেই নিজেকে রাখব’
আমাকে অবজ্ঞা করলে মাঠে জবাব দিই: সুভাষ
ই লিগ জিতে ইতিহাস গড়ার পরের দিনই সুভাষ ভৌমিক স্বমেজাজে। সাক্ষাৎকার দেওয়ার ফাঁকে যদিও বারবার মনে করিয়ে দিলেন, কোনও বিতর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। তা সত্ত্বেও বেনোলিম সমুদ্রসৈকতের পাশে নিজের ফ্ল্যাটে আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলার সময় বুঝিয়ে দিলেন, ‘আমি সুভাষ’ এখনও পুরোপুরি বদলাননি।
প্রশ্ন: মর্গ্যান, করিম, এলকো। কলকাতার বড় টিমে বিদেশি কোচের ছড়াছড়ি। সবাইকে রিংয়ের বাইরে পাঠিয়ে গোয়ায় ইতিহাস গড়ে আই লিগ জেতার রহস্য কী?
সুভাষ: মুশকিল হচ্ছে আমরা এখনও কলোনিয়াল হ্যাংওভার কাটিয়ে উঠতে পারিনি। স্বাধীনতা পাওয়ার তেষট্টি বছর পরেও ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। আমার প্রশ্ন, বিদেশি যারা এখানে এসে কোচিং করছে, তারা নিজের দেশে কি সাফল্য পেয়েছে? ওরা অনেকে তো আই লিগ ম্যারাথন দৌড় জেতার অঙ্কটাই করতে জানে না। বিদেশি কোচ দেখলেই আমার মনে বিদ্রোহ তৈরি হয়। কিছু করে দেখানোর বাড়তি তাগিদ তৈরি হয়। স্বীকার করব না, এ বারও সেটা ছিল।

প্র: কিন্তু করিম আই লিগ জিতেছেন। মর্গ্যান পারেননি। তবে দু’বার ফেড কাপ জিতেছেন।
সুভাষ: কারও সমালোচনা করে বিতর্ক বাড়াতে চাই না। করিম আই লিগ জিতেছে বলে ওকে একটু বেশি নম্বর দিতে হবে। টেকনিক্যালি কিছুটা সাউন্ড। কিন্তু মর্গ্যান টানা তিন বছর ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করাচ্ছে। দেশের সেরা শক্তিশালী টিম পেয়েছে। কিন্তু সাফল্য কোথায়? আমি, সুব্রত বা আর্মান্দোর মতো ভারতীয় কোচ কেউ এই পারফরম্যান্স করলে প্রথম বছরেই বিদায় নিতে হত। মর্গ্যানকে শুনছি এ বারও রাখার চেষ্টা চলছে।

প্র: কিন্তু মর্গ্যান গত তিন বছরে দু’বার ফেড কাপ জিতেছেন। আপনার ওই একটা ট্রফিই অধরা?
সুভাষ: ফেড কাপ তো জুয়া। চার ম্যাচের টুর্নামেন্ট। যে কেউ জিততে পারে। আই লিগের মজাই আলাদা। এত মাস ধরে একটা টিমের পারফরম্যান্স ধরে রাখা। কার্ড, চোটআঘাত নানা অঙ্ক কাজ করে। আর ফেড কাপ জিতিনি বলে দুঃখ নেই। আমার কোচ হিসেবে যা ট্রফি আছে এ দেশের কোনও বর্তমান কোচের নেই।

প্র: আর্মান্দো কোলাসোর কোচিংয়ে ডেম্পো পাঁচটা আই লিগ জিতেছে। ফেড কাপও।
সুভাষ: আর্মান্দোর আন্তর্জাতিক সাফল্য কোথায়? কোনও ট্রফি জিতেছে? আর গত দশ-বারো বছর ধরে ডেম্পোর ওই-ই সব। টিম তৈরি করছে। বিদেশি আনছে। ফুটবলারদের পেমেন্ট ঠিক করছে। চেক দিচ্ছে। এত সুযোগ আমি টানা চার বছর পেলে অন্য কেউ কোনও ট্রফি পেত না।

প্র: শুনেছি আপনি গোয়ায় আসার পর ডেম্পো কোচ আর্মান্দো নাকি এখানকার কোচেদের দিয়ে জোট গড়ে আপনাকে তাড়াতে চেয়েছিলেন!
সুভাষ: আমিও শুনেছি। গোয়ার সাংবাদিকেরা বলেছেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব না। তবে গোয়ায় বাইরে থেকে এসে এখানে কাজ করা কঠিন।
প্র: দশ বছর পর আবার আই লিগ জয়। যা এ দেশের ফুটবল কোচিংয়ে নজিরবিহীন। কিন্তু দশ বছর একটাও ট্রফি জিততে পারেননি কেন?
সুভাষ: পারিনি.। হয়নি। আরে, দশ বছরে তো টানা এক মরসুম কোথাও কোচিংই করতে দেওয়া হয়নি আমাকে। কোনও দল বিপদে পড়লে তাদের অবনমন থেকে বাঁচানোর ডাক পেয়েছি। চার্চিলেও তো সেটাই করতে গত বছর এসেছিলাম। তবে ইস্টবেঙ্গল যে ভাবে মোহনবাগানের কাছে ৫-৩ হারার পর আমাকে অপমান করেছিল সেটা মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ভুলব না। কেউ যদি আমাকে অবজ্ঞা-অপমান করে আমার জেদ বেড়ে যায়। মুখে কিছু বলি না। মাঠে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করি।

প্র: আপনি কি চার্চিল ছাড়ছেন?
সুভাষ: কে বলেছে? চার্চিল আলেমাওয়ের সঙ্গে আমার মাঝেমধ্যে মনোমালিন্য হলেও ওর ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, পরিবার আমাকে যে চোখে দেখেন তাতে আমি আপ্লুত। ওঁরা অনুরোধ করলে আমি কিছুতেই ফেলতে পারব ন। চার্চিল ছাড়া আমার পক্ষে কঠিন।
তবে আমার কিছু স্বপ্ন আছে। যে ক্লাব সেটা পূরণ করবে সেখানেই কোচিং করাব। এই মরসুমটা শেষ হলে চার্চিলের সঙ্গে কথা বলব।

প্র: কী সেই স্বপ্ন?
সুভাষ: এএফসি কাপ ফাইনাল খেলা। তিন বারের পর পাঁচ বার আই লিগ জেতা আমার লক্ষ্য নয়। আন্তর্জাতিক সাফল্য চাই। আর্মান্দো ডেম্পোকে এএফসি কাপের শেষ চারে তুলেছিল। আমি ওকে টপকে ফাইনাল খেলব। বিশ্বাস করুন, আমাকে যদি কেউ বর দিতে চান যে, তুমি এএফসি কাপ চ্যাম্পিয়ন হবে কিন্তু তার পরের দিনই তোমার মৃত্যু হবে, আমি তাতেও রাজি।

প্র: অন্য টিমের প্রস্তাব আছে? ইস্টবেঙ্গল ডাকলে যাবেন?
সুভাষ: অন্য ক্লাবের প্রস্তাব নেই কে বলল? আর ইস্টবেঙ্গল? অন্য প্রশ্ন করুন।

প্র: ইস্টবেঙ্গলের উপর এত রাগ কেন? মোহনবাগান, সালগাওকরও তো আপনাকে সরিয়ে দিয়েছিল।
সুভাষ: কারণ ইস্টবেঙ্গলকে আমি যা ট্রফি দিয়েছি কেউ দিতে পারেনি। আমার গুরু প্রদীপদাও নয়। তা সত্ত্বেও ওদের কাছ থেকে এত অপমান, বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে!

প্র: আই লিগ জয়ের হ্যাটট্রিক কি আগেই করতে পারতেন?
সুভাষ: ঠিক তাই। দু’হাজার পাঁচে ডগলাসের হাত না ভাঙলে, ভাইচুংয়ের থাইরয়েড না হলে ইস্টবেঙ্গলকে টানা তিন বার জাতীয় লিগ জেতাতামই।

প্র: ফার্গুসন অবসর নিলেন। ৬৪ বছরের আপনি কত দিন কোচিং করাবেন?
সুভাষ: মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত। কোচিং করাটাই আমার অক্সিজেন। বেঁচে থাকার মশলা।

প্র: কিন্তু কোচিং লাইসেন্সের চেষ্টা করলেন না কেন? তা হলে তো চার্চিলে আদতে কোচ হয়েও খাতা-কলমে টিডি হয়ে থাকতে হত না আপনাকে!
সুভাষ: কে বলল চেষ্টা করিনি? আমায় কোচিং ডিগ্রি নিতে দেওয়া হয়নি। জুনিয়রের মৃতুর পর আমি তখনকার সচিব আলবার্তো কোলাসোকে খুনি বলেছিলাম। মাঠে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা ছিল না বলে। তার পর আমি যত বার কোচিং ডিগ্রি করার জন্য আবেদন পাঠিয়েছি নাম কেটে দিয়েছেন আলবার্তো। তিনি যখন সচিব পদ থেকে সরলেন, তত দিনে আমার কোচিং ডিগ্রি করার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে।

প্র: ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে সেরা কোচ বাছতে দিলে নিজেকে কোথায় রাখবেন?
সুভাষ: আমি বিনয়বাবু নই। নিজেকে দু’নম্বরে রাখব। এক নম্বরে রাখব আমার গুরু পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অর্জুনও তো দ্রোণাচার্যকে এগিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছিল!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.