তিন দশকের ফার্গি-যুগে যবনিকা
‘শূন্যতা পূরণই আসল চ্যালেঞ্জ’
তাঁর তিন দশকের সাম্রাজ্য কী পরিবর্তন ঘটিয়েছিল ইংল্যান্ড তথা ইউরোপিয়ান ফুটবলে? ভারতীয় ফুটবলের কী শেখার আছে তাঁর কোচিং থেকে? তাঁর অবসর-পরবর্তী ব্রিটিশ ফুটবল কেমন দাঁড়াবে? সব কিছুর কাটাছেঁড়া করলেন ময়দানের চার বিশাল সফল কোচ।

পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়
ইংল্যান্ড ফুটবলে নবজাগরণ এনেছিলেন স্যর অ্যালেক্স। ইংল্যান্ড ফুটবলের চূড়ান্ত অবক্ষয়ের মুখে ম্যান ইউয়ের দায়িত্ব নেন। ফার্গুসনের দেখানো পথে চলেই তো ইপিএলের রমরমা। ওঁর ফুটবলবোধ, ট্যাকটিক্স, টেকনিক, প্লেয়ার বাছার দক্ষতা সবই শেখার মতো। ফার্গুসন-পরবর্তী অধ্যায় দেখতে গোটা ফুটবলবিশ্ব মুখিয়ে। একটা বড় শূন্যতা তো তৈরি হলই।

ট্রেভর জেমস মর্গ্যান
প্রায় ২৭ বছর একই ক্লাবের কোচ থাকাটা মুখের কথা নয়। আমি তো প্রায় ভুলেই গেছি, ফার্গুসনের আগে ইংল্যান্ড ফুটবলের ইতিহাস! ফার্গুসন-পরবর্তী অধ্যায়ের চ্যালেঞ্জটা সোজা হবে না। তিনি ইংল্যান্ড ফুটবলের খোলনলচে বদলে দিয়েছিলেন। খেলার স্টাইল থেকে চিন্তাভাবনা সব কিছুতে অভিনবত্ব এনেছিলেন। ওঁর প্লেয়ার নির্বাচন শেখার বিষয়। ফার্গুসন যে শুধু দক্ষ ম্যানেজার ছিলেন এমনটা নয়, এক জন দক্ষ প্রশাসকও ছিলেন। ওঁর অবসরের খবরটা শুনে প্রথমে মনে হয়েছিল, ‘গসিপ’। আসলে ফার্গুসন অবসর নিচ্ছেন, মানতেই পারছি না।
সুভাষ ভৌমিক
ফার্গুসনের অবসর ঘোষণার খবর বড় ‘সারপ্রাইজ’। অবাক হয়ে যাই, ওঁর সাফল্যের পরিসংখ্যানে। বছরের পর বছর একই ক্লাবে থেকে বেকহ্যাম, গিগস, রোনাল্ডো, রুনি, রয় কিন, নিস্তেলরুইদের সামলেছেন। তারকা ফুটবলার তৈরি করেছেন বলে তারকা প্লেয়ারকে আরওই আলাদা করে গুরুত্ব দেননি কখনও। বরং কোনও ফুটবলার নিজেকে দলের থেকে বড় মনে করলে, তাকে টিম থেকে ছেঁটে ফেলতে দু’বার ভাবেননি। টিমগেমের প্রবক্তা তো ফার্গুসনই। কোনও বড় ম্যাচের এক-দেড় মাস আগে নিজের দল সাজিয়ে নিতেন। ওঁর অবসর ইউরোপিয়ান ফুটবলের বড় ধাক্কা।

করিম বেঞ্চারিফা
ব্যর্থ হলেই কোচের চাকরি যাওয়াটা যেখানে গোটা বিশ্বে নিয়ম, সেখানে ফার্গুসনের প্রায় ২৭ বছর একই ক্লাবের দায়িত্বে থাকার রহস্যটা খুব জানতে ইচ্ছে করে। অবসর নিয়ে এ বার হয়তো সেই রহস্য ফাঁস করবেন তিনি। খুব ঠান্ডা মাথার কোচ। বড়-বড় ফুটবলারদের চাতুর্যের সঙ্গে ব্যবহার করতেন। ওঁর স্ট্র্যাটেজি থেকে ট্যাকটিক্যাল সবই শেখার মতো। বছরের পর বছর এত সাফল্য যাঁর পায়ে লুটোপুটি খেয়েছে তিনি ‘ফুটবলের মহাপুরুষ’। শুধু ম্যাঞ্চেস্টারেই নয়, ইংল্যান্ড ফুটবলেই বিবর্তন এনেছেন ফার্গুসন। এর ব্যাপ্তি এতটাই যে, ফার্গুসন-পরবর্তী অধ্যায়ে যিনি ম্যান ইউয়ের দায়িত্ব নেবেন তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জটা অত্যন্ত কঠিন।


কেন ছাড়লাম..
‘‘এটাই সঠিক সময়। আমার মতে কোনও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, সেটা সর্বাধিক শক্তিশালী অবস্থায় আছে কি না দেখাটা। আমার বিশ্বাস ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে আমি ঠিক সেই রকম অবস্থায় রেখে যাচ্ছি। আমাদের ক্লাবে ট্রেনিংয়ের সুযোগসুবিধে বিশ্ব খেলাধুলোর ইতিহাসে অন্যতম সেরা। আমাদের হোমগ্রাউন্ড ওল্ড ট্র্যাফোর্ড বিশ্বের অন্যতম সেরা মাঠ। ম্যান ইউয়ের ডিরেক্টর আর অ্যাম্বাস্যাডরনতুন দু’টো দায়িত্ব পেয়েই আমি উৎফুল্ল। ক্লাবের আরও উন্নতির দিকে তাকিয়ে আছি। দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে ম্যান ইউ টিমের সফল ম্যানেজার হয়ে থাকতে পারার পিছনে আমার পরিবার, স্ত্রী ক্যাথির সমর্থন, অবদান অপরিসীম। অসংখ্য স্মরণীয় ম্যাচ এবং ট্রফি জয়ের পিছনে আমার দলের বর্তমান এবং প্রাক্তন ফুটবলাররা, সাপোর্ট স্টাফ যে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, দায়বদ্ধতা, প্রতিজ্ঞা বছরের পর বছর ধরে দেখিয়েছে তার জন্য তাদের প্রত্যেককে আমার অভিনন্দন। প্লেয়ারদের অবদান ছাড়া আমার প্রায় তিন দশকের জমানায় ম্যান ইউয়ের ইতিহাসকে এত ধনী কিছুতেই দেখাত না। আলাদা করে কৃতজ্ঞতা জানাই স্যর ববি চার্লটনকে। যে ম্যান ইউ কিংবদন্তিকে এই ক্লাবে আমার কোচিং জীবনের গোড়ার দিকে সর্বদা পাশে পেয়েছি। আর বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ম্যান ইউ সমর্থকদের আন্তরিক অভিনন্দন। (চোখের জল মুছে) আপনাদের প্রিয় ক্লাবের প্রধান কোচের দায়িত্ব এত বছর ধরে সফল ভাবে পালন করার সুযোগ পাওয়াটা আমার জীবনে বিরল একটা সম্মান। আপনাদের সমর্থন ছাড়া মস্কোর সেই ম্যাজিক-রাত ম্যান ইউয়ের (’৯৯-এ ইপিএল, এফএ কাপ জেতা ছাড়াও মস্কোয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ত্রিমুকুট) দেখা সম্ভব ছিল না।”

ফার্গুসন-মডেল
‘সিচুয়েশন প্র্যাক্টিসে’ প্লেয়ারদের কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে তাদেরই সমস্যা-মুক্ত হওয়ার দাওয়াই খুঁজতে বলা। তৈরি করা ‘থিঙ্কিং প্লেয়ার’ গোষ্ঠী।
চার-পাঁচ জনের ছোট ছোট দল করে পাসিং, পজিশনিং অনুশীলন।
টিমের আক্রমণ আর রক্ষণ- দু’জায়গাতেই প্রেসিং ফুটবলের নীল নকশা।
প্র্যাক্টিস গেম কখনও ১১ বনাম ১১ না খেলিয়ে ৭ বনাম ৭, ৮ বনাম ৮, বড়জোর ৯ বনাম ৯ খেলা।

সপ্তাহব্যাপী ম্যাচের সংখ্যা অনুযায়ী ফিটনেস ট্রেনিংয়ে ওয়ার্কলোড ঠিক করা হয়। নইলে সার্বিক সূচি: সোম ও বৃহস্পতি স্ট্রেংথ। মঙ্গল ও শুক্রঅ্যারোবিক ওয়ার্ক। বুধ ও শনিস্পিড। সব ওয়ার্কলোড জুটিতে করানো হয়। এক বনাম এক ভিত্তিতে।

পরের ম্যাচের জন্য তার আগের দিনই শুধু একটা সেশন অনুশীলন হয়। যেখানে শেষ ম্যাচের ভুলত্রুটি শোধরানো হয়। এবং ম্যাচের দিন ফার্গুসন নিয়ম করে ৪৫ মিনিটের একটি টিম মিটিং করেন। যার নাম ‘ফাইন টিউনিং’।
৪-৪-২ ফর্মেশনে ডিপ ডিফেন্সকে অনড় রেখে বাকি ছয় ফুটবলারের খেলার ধরনকে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বারবার ওলটপালট করা। উইংব্যাকদের দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের কাছাকাছি রেখে মাঝমাঠ আর ডিফেন্সের মধ্যে ব্যবধান বাড়তে না দেওয়া। দুই স্ট্রাইকারের মধ্যে এক জনকে একটু পিছিয়ে ‘ইন দ্য হোল’-এ খেলিয়ে মিডফিল্ড-ফরোয়ার্ড লাইনের মধ্যে সেতু করা। যাতে আক্রমণ-রক্ষণ দুই সময়ই বিপক্ষের চেয়ে আনুপাতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে।
আক্রমণ সাধারণত শুরু হয় নিজেদের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারদের থেকে। উইংব্যাকরা থাকে সাপোর্টিংয়ে। আবার রক্ষণ করার সময় উইংহাফরা সতীর্থ ফুলব্যাকদের পাশে নেমে আসে। সমস্ত কাজেই মূলধন তীক্ষ্মতা, গতি আর সনাতন ইউরোপিয়ান শারীরিক শক্তি।

চেয়ারে কে
ডেভিড মোয়েস (এভার্টন)
বয়স ৫০।
আধুনিক ইপিএল নিয়ে ওয়াকিবহাল।
দুর্বলতা: ১২ বছরে এভার্টনে ট্রফি জেতেননি। ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে অনভিজ্ঞ।
ইংরেজ প্রচারমাধ্যমের খবর, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যান ইউ কোচ হিসেবে মোয়েসের নাম ঘোষণা করা হতে পারে।
হোসে মোরিনহো (রিয়াল মাদ্রিদ)
বয়স ৫০।
বড় ক্লাবে অসাধারণ সফল। ইংল্যান্ডে ফিরতে মরিয়া।
দুর্বলতা: তিন বছরের বেশি কোথাও কাটাননি। চেলসি-প্রেম।
য়ুরগেন ক্লপ (বরুসিয়া ডর্টমুন্ড)
বয়স ৪৫।
তরুণদের নায়ক করা।
দুর্বলতা: জার্মানির বাইরে অনভিজ্ঞ।
ওলে গানার সোলজায়ের (মলডে)
বয়স ৪০।
ম্যান ইউয়ের কিংবদন্তি প্রাক্তন প্লেয়ার। কোচিং স্টাফে থাকার অভিজ্ঞতা।
দুর্বলতা: নরওয়েতে স্থায়ী বসবাস।
জুপ হেইনকেস (বায়ার্ন মিউনিখ)
বয়স ৬৭।
বায়ার্নকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ক্লাব করে তোলা।
দুর্বলতা: বয়স। ফার্গুসনের চেয়ে মাত্র চার বছরের ছোট তিনি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.