আদালত বলছে, দূষণের দায়ে মোটরচালিত ভ্যান অবিলম্বে রাস্তা থেকে তুলে ফেলতে হবে। সেই দায়িত্ব রাজ্যের। এবং তার জন্য সরকারকে সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে আদালত। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সরকার কোনও পদক্ষেপ না করায় বুধবার রাস্তায় নামল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।
গত মাসেই মোটরচালিত ভ্যান নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত বলেছিল, ওই ভ্যানের কোনও রকম সরকারি বৈধতা নেই। তার উপরে এই যানগুলি এতই দূষণ ছড়ায় যে অবিলম্বে সেগুলির ব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিত। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে কী করা উচিত, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, “দূষণ থেকে মুক্তি পেতে, একই সঙ্গে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলির কথা ভেবে একটা ‘মধ্যপন্থা’ খোঁজা হচ্ছে।” কিন্তু কী সেই পথ, তা খোলসা করেননি ওই পরিবহণকর্তা।
আদালতের নির্দেশ, একই সঙ্গে সরকারি ‘গয়ংগচ্ছ’ মনোভাবের প্রতিবাদে এ দিন কলকাতায় একাধিক জনসভা করে এসইউসিআই এবং সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন। তার জেরে মধ্য কলকাতা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা যানজটের কবলে পড়ে। ওই দুই সংগঠনের বক্তব্য, মোটরচালিত ভ্যানের উপরে বহু পরিবার নির্ভরশীল। সেটা উঠিয়ে দিলে তাঁদের রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সরকারেরই উচিত, বিকল্প পথের খোঁজ করা, যাতে ওই পরিবারগুলি বেঁচে থাকে। বস্তুত, গ্রামেগঞ্জের বহু মানুষ এখনও মোটরচালিত ভ্যানের (চলতি কথায় ভ্যানো) উপরেই নির্ভরশীল। কলকাতা থেকে কাছেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা-বিষ্ণুপুর, কিংবা হাওড়ার সাঁকরাইল-ডোমজুড়ে গেলেই দেখা যাবে ভ্যানোর রমরমা। একে বাসের সংখ্যা দিনদিন কমছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যযাত্রীর সংখ্যা। সেই কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্যানোই ভরসা গ্রামের মানুষের। এবং সেই চাহিদার জন্যই দূষণ ছড়িয়েও বাড়ছে ভ্যানোর সংখ্যা। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তও বলেন, “প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্যই দূষণ ছড়ানো সত্ত্বেও মোটরচালিত ভ্যান বন্ধ করা যাচ্ছে না। এগুলি যেমন বায়ুদূষণ করে, তেমনই শব্দদূষণও ছড়ায়। এদের কোনও রকম বৈধতা নেই।” সুভাষবাবুর বক্তব্য, “মোটরচালিত ভ্যানের থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাল। তাতে কোনও ভাবেই দূষণ ছড়ায় না।” কিন্তু গ্রামেগঞ্জের এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে সংশয়ে পরিবহণকর্তারাই। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “সংগঠনগুলি আমাদের কাছেও দাবিপত্র জমা দিয়েছে। কোথায় কত এই ধরনের ভ্যান চলে, তা বিশদে জানাতে বলেছি। ওই সব তথ্য হাতে এলেই মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানাব।” |