বিড়ম্বনা বাড়িয়ে কড়া ধমক সুপ্রিম কোর্টের
র্নাটকে জয় যেটুকু স্বস্তি দিল, কংগ্রেসের জন্য তার চেয়ে অনেক বেশি অস্বস্তি তৈরি করল সুপ্রিম কোর্ট।
কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকার ও সিবিআইয়ের ভূমিকার চাঁছাছোলা সমালোচনা করে আজ সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, ‘তদন্তকারী সংস্থাকে অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া বিপজ্জনক। সে পাগলা ঘোড়া হয়ে যাবে। কিন্তু সিবিআই তো খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি। তার অনেক মনিব।’ সিবিআই অবিলম্বে নিরপেক্ষ অবস্থানে ফিরে না এলে শীর্ষ আদালতই প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার, অ্যাটর্নি জেনারেল জি ই বাহানবতী, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল হরেন রাওয়াল-সহ কেন্দ্রের একাধিক নেতা-মন্ত্রী আমলা, সেই সঙ্গে কয়লা মন্ত্রকেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন তাঁরা।
ফলে বিজেপিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে কর্নাটক দখল করার পরেও দিনের শেষে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় কেন্দ্রের শাসক দল। প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্যের পরে অশ্বিনী কুমারকে ইস্তফার নির্দেশ দিতে আর কত দেরি করবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড?
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মেনেও নিচ্ছেন, লোকসভা ভোটের আগে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি পূরণের এটাই সুবর্ণ সুযোগ। কংগ্রেস সভানেত্রীর আস্থাভাজন একাধিক শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীর দাবি, অশ্বিনী কুমারকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর ব্যাপারে দোটানা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী (ঘটনার গতিপ্রকৃতি যে দিকে, তাতে রেলমন্ত্রী পবন বনশলের অপসারণও স্রেফ সময়ের অপেক্ষা)। কারণ তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, কর্নাটকের মানুষ রায় দিয়েছেন লাগামছাড়া দুর্নীতি ও তার জেরে তৈরি হওয়া অস্থিরতার বিরুদ্ধে। অশ্বিনীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআইয়ের খসড়া রিপোর্টে রদবদল করে তিনি দুর্নীতি আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন বলে দেশজুড়ে ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে।
সভানেত্রীর বাড়ির সামনে কর্নাটক জয়ের উল্লাস। ছবি: এএফপি।
অনেকের এ-ও বক্তব্য, বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের জেরে আইন মন্ত্রকের সঙ্গে সিবিআইয়ের স্বাভাবিক সম্পর্ক আর নেই। অথচ আইন মন্ত্রকই কার্যত সিবিআইয়ের কৌঁসুলি। তাই অশ্বিনীর অপসারণ ছাড়া রাস্তা নেই। কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে আজ চূড়ান্ত কোনও রায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের তাই মত ছিল, জুলাই নাগাদ রায় বেরোনোর পরেই অশ্বিনীর ইস্তফা নিয়ে ভাবা হোক। কিন্তু সিংহভাগ নেতাই দাবি তোলেন, জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করলে ক্ষতি বই লাভ হবে না। দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রমাণ দিতে এখনই সরানো হোক অশ্বিনীকে। এই পরিস্থিতিতে আজ সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা কার্যত নিশ্চিত করে দেয় আইনমন্ত্রীর বিদায়।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানাচ্ছেন, দু-তিন দিনের মধ্যেই পদক্ষেপ করবে হাইকম্যান্ড। কারণ, সংগঠন ও
মন্ত্রিসভার রদবদল একই সঙ্গে করতে চাইছেন সনিয়া-রাহুল। সেই কারণেই সময় নেওয়া হচ্ছে। প্রথমে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করতে হবে। সেই পদে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সীড্ডারামাইয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গের নামও বিবেচিত হচ্ছে। খার্গেকে রাজ্যে পাঠানো হলে শ্রমমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে। এই সব দিক বিবেচনা করতে গিয়েই মন্ত্রিসভার রদবদলে সময় লাগছে বলে ওই নেতাদের দাবি। হাইকম্যান্ডের একটি সূত্রে সন্ধ্যায় বলা হয়েছে ‘দল কোনও সিদ্ধান্ত নিতে তাড়াহুড়ো করে না। ধাপে ধাপে সবই হবে।’
বস্তুত, সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে কংগ্রেস এতটাই বেকায়দায় যে, আজ নির্ধারিত মেয়াদের দু’দিন আগেই সংসদের বাজেট অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। পরে দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, সংসদ মুলতুবি করে মূলত দু’টি কৌশল নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। প্রথমত, আগামী দু’দিনের মধ্যে দুই মন্ত্রীর ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে বার্তা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস এ-ও প্রচার করবে যে, বিজেপি-র জন্যই সংসদ মুলতুবি করে দিতে হল। খাদ্য নিরাপত্তা ও জমি বিলের মতো আম আদমির স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করা গেল না।
কংগ্রেস নেতাদের আশা, অশ্বিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে বিতর্ক অনেকটাই লঘু হয়ে যাবে। সেই তুলনায় কর্নাটকের সাফল্য অনেকটাই বড়। একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, লোকসভা ভোটের আগে সনিয়া-রাহুলের মূল বক্তব্যই হবে কর্নাটকে মানুষ যেমন স্থায়িত্ব চেয়েছেন, কেন্দ্রেও তেমন স্থায়িত্বের জন্যই ভোট দেওয়া হোক কংগ্রেসকে।
তার আগে অবশ্য দুর্নীতি-দমনে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দেওয়াই বড় চিন্তা কংগ্রেসের।

পুরনো খবর




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.