কর্নাটকে ভরসা পেয়েই সাহস দেখাল কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কর্নাটক নিয়ে বুথ ফেরত সমীক্ষাটাই বদলে দিল অনেক হিসেব। রবিবার সারা দিন ধরে দুই মন্ত্রীর ভাগ্য সুতোয় ঝুলছিল। সন্ধ্যায় কোর গ্রুপের বৈঠকে আপাতত বেঁচে গেল তাঁদের গদি। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত, রেলমন্ত্রী পবন বনশলকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে না। থেকে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারও।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, দক্ষিণের রাজ্যে মানুষের দাক্ষিণ্য যে কংগ্রেস এ বার পাবে, তার একটা আশা আগে থেকেই ছিল। তাই কর্নাটকে ভোট পর্ব মেটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। আসলে অপেক্ষা ছিল সন্ধ্যায় বুথ ফেরত সমীক্ষার। এবং প্রায় সব ক’টি সমীক্ষাই স্পষ্ট করে দেয়, সব থেকে বড় দল হচ্ছে কংগ্রেস, বিজেপিকে অনেকটা পিছনে ফেলে। আর তাতেই পবন-অশ্বিনীকে রেখে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস পেয়ে যান নেতৃত্ব। রাতে বসে দলের কোর গ্রুপের বৈঠক। সেই বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি বলেন, “ঘুষ কাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। তাই আগেভাগে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত। অন্য দিকে অশ্বিনী কুমারের বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন।” তবে বিরোধীরা যে পবন-অশ্বিনীকে নিয়ে তেড়েফুঁড়ে মাঠে নামবে, তা-ও ভালভাবেই জানেন সনিয়া গাঁধী। তাই সেই যুদ্ধের কৌশল ঠিক করতে আগামিকাল সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছেন তিনি। |
|
আপাতত রেহাই। দুই মন্ত্রী অশ্বিনী কুমার ও পবন বনশল। |
আজ কোর গ্রুপের বৈঠকের আগে বনশলের বিষয়টি নিয়ে প্রবীণ নেতা এ কে অ্যান্টনির সঙ্গে কথা বলেন সনিয়া গাঁধী। পরে কোর গ্রুপের বৈঠকে দুই মন্ত্রীকে না সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, প্রাথমিক ভাবে কর্নাটকের সমীক্ষার যে ফলাফল এসেছে, তাতে স্পষ্ট, ইউপিএ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ কংগ্রেসকে সমর্থন করেছেন। উল্টে কর্নাটকে দুর্নীতির অভিযোগে কার্যত সাফ হয়ে গিয়েছে বিজেপি। তাই কেবল মাত্র বিরোধীদের দাবি মেনে দুই মন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে বলার অর্থ বিরোধীদের হাতে নতুন করে অস্ত্র তুলে দেওয়া। তার পরিবর্তে দল এখন একজোট হয়ে বিরোধীদের মোকাবিলায় নামবে।
সেই লক্ষ্যেই আগামিকাল সংসদীয় দলের বৈঠকে সব সাংসদকে দিল্লিতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। কী কারণে দুই মন্ত্রীকে সরানো হচ্ছে না, বৈঠকে তা ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি সনিয়া গাঁধী বিরোধীদের প্রতি আক্রমণের কৌশল নিয়েও আলোচনা করবেন। কর্নাটকের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিরোধী দলের দুর্নীতির প্রশ্নটি সামনে তুলে আক্রমণে যেতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। পাশাপাশি দলের বক্তব্য জনসমক্ষে আরও স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরতে দলীয় মুখপাত্রদের রদবদল করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। নতুন মুখ হিসেবে আসতে পারেন শাকিল আহমেদ। তিনি আবার এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব অন্য কারও হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দল। |
|
বিক্ষোভের জেরে রেলমন্ত্রীর বাড়ির সামনে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। রবিবার। ছবি: পিটিআই |
তবে রাজনৈতিক সূত্র বলছে, কংগ্রেস যতই তার মন্ত্রীদের আড়াল করার চেষ্টা করুক, জাতীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট চাপের মুখে পড়ল দল। লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। তার আগে একের পর দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসায় সার্বিক ভাবে কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে বিরোধীরা। সংসদের ভিতরে-বাইরে মামা-ভাগ্নের দুর্নীতি নিয়ে দেশ জুড়ে প্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি। আজই গুজরাতে একটি জনসভায় মামা-ভাগ্নের সম্পর্ক নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি নেতৃত্ব আজ জানিয়েছেন, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে রেলমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা।
এ দিন ঘুষ কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে চণ্ডীগড়ে পবন বনশলের বাড়ির সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিও চালায় পুলিশ। মণীশ তিওয়ারি যে ভাবে অশ্বিনী ও বনশলের হয়ে মুখ খুলেছেন, তাকে কংগ্রেসের দ্বিচারিতা বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাঁর বক্তব্য, “এই ইউপিএ নেতৃত্বই প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার বিরুদ্ধে টু-জি কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠামাত্র তাঁকে ইস্তফা দিতে বলেছিল! এখন এই সরকারই অশ্বিনী ও বনশলের
বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও তাঁদের বাঁচাতে ব্যস্ত। আসলে কংগ্রেস জানে, ওই দুই মন্ত্রী ইস্তফা দিলেই খোদ প্রধানমন্ত্রীর গদি টলমল হয়ে পড়বে।” |
|
রবিবার দিল্লিতে রেলমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিজেপি-র ছাত্রদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই |
রেলমন্ত্রী গত কাল ভাগ্নের সঙ্গে কোনও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। আজ একই দাবি করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছেও। একই সঙ্গে জানান, তিনি যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। বিজেপির আইনি শাখার প্রধান তথা চণ্ডীগড়ের দু’বারের সাংসদ সত্যপাল জৈন আবার ঘুষ কাণ্ডে বনশলের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ভাগ্নে বিজয় সিঙ্গলার বিভিন্ন সংস্থায় বনশলের আত্মীয়েরাই অধিকর্তা পদে রয়েছেন। এমনকী, সে সব সংস্থার অংশীদারিত্বও রয়েছে তাঁদের নামে। বিজেপির অভিযোগ, বনশল রেলে পানীয় জল সরবরাহ করার চুক্তিও তাঁর আত্মীয়দের দিয়েছিলেন। সত্যপালের দাবি, “অবিলম্বে ঘুষ কাণ্ডে বনশলের ভূমিকা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখুক সিবিআই।”
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার অবশ্য আজ সারা দিন কলকাতাতেই ছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের সার্ধশতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি শহরে আসেন। প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথাও হয় তাঁর। বিচারপতিদের নৈশভোজের আসরেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।
|
ঘুষ কাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। তাই আগেভাগে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত। আর অশ্বিনী কুমারের বিষয়টি তো বিচারাধীন।
মণীশ তিওয়ারি, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী |
এই ইউপিএ-ই এ রাজার নামে অভিযোগ ওঠা মাত্র তাঁকে ইস্তফা দিতে বলেছিল। তারাই এখন অশ্বিনী ও বনশলকে বাঁচাতে ব্যস্ত।
রবিশঙ্কর প্রসাদ, বিজেপি সাংসদ |
|
পুরনো খবর: ঘুষ-কাণ্ডে ইস্তফার খাঁড়া বনশলের মাথায় |
|