রাজ্যের ‘শো-পিস’ প্রকল্প হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের শেয়ার নিলাম করার পথে এক ধাপ এগোল রাজ্য সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, শেয়ার বিক্রির খুঁটিনাটি শর্ত চূড়ান্ত করার কাজ শেষ। এর পর আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে সেই সব শর্ত মেনে ইচ্ছাপত্র চাওয়া হবে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে চলতি বছরের শেষেই হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের মালিকানা ঝেড়ে ফেলা যাবে বলে রাজ্য আশাবাদী।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার বলেন, “ইচ্ছাপত্রের খসড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাতে সরকারি শিলমোহরও পড়েছে। পরামশর্দাতা সংস্থা ডেলয়েটকে গোটা প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করার জন্য বলেছি।” তাঁর আশা নভেম্বর মাসের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের পরিচালন পর্ষদের বৈঠক শেষে সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থবাবু জানিয়েছিলেন, ৩০ জুনের মধ্যে সব শেয়ার বেচে দিতে চায় রাজ্য। সে জন্য ডেলয়েটকে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখে ৩১ মার্চের মধ্যে মূল্যায়ন রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই রিপোর্ট জমা দেয়নি। সূত্রের খবর, এ কাজের জন্য তারা যে টাকা চেয়েছিল, তা না পাওয়ার ফলেই সমস্যা তৈরি হয়। তার জেরে পিছিয়ে যায় সময়সীমা। শেষ পর্যন্ত ডেলয়েট রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের ভবিষ্যৎ নিয়ে গত সোমবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের ভবনে শিল্পসচিব চঞ্চলমল বাচাওয়াত ও দফতরের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পার্থবাবু। সংস্থাটি এখন কার্যত ধুঁকছে। কাঁচামাল কেনার টাকাও নেই। ব্যাঙ্কও তাদের ঋণ দিতে চাইছে না। পার্থবাবু সে দিন জানান, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা ঢালতে প্রস্তুত। আরেক অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীরও ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা।
তবে আর্থিক দশা বেহাল হলেও হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস কিনতে অনেক বড় বড় সংস্থাই আগ্রহী বলে পার্থবাবুর দাবি। কারণ, সংস্থার উৎপাদিত পণ্যের মান বরাবরই উঁচু দরের। যা স্বীকার করছেন বিশেষজ্ঞরাও। ফলে বাজারে এই পণ্যের চাহিদা এখনও রয়েছে। সেই জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন গোড়া থেকেই হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস হাতে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই সংস্থায় আপাতত তাদের অংশীদারিত্ব ৮.৮৯ শতাংশ। কিন্তু আগের বাম সরকার ইন্ডিয়ান অয়েলের ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও তাতে তীব্র আপত্তি করেছিল চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। রাজ্য সরকারের শেয়ার নিলামের প্রক্রিয়ায় ইন্ডিয়ান অয়েলও যোগ দিতে আগ্রহী। তার জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজও চালিয়েছে তারা। আগে হলদিয়ার শেয়ার কিনতে চেয়েছিল আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসি-র শাখা সংস্থা ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারিজ। তারাও নিলামে যোগ দিতে পারে। শিল্পমহলের দাবি, পেট্রোকেমিক্যালসে একচেটিয়া ব্যবসা করার লক্ষ্যে হলদিয়ার মালিকানা পেতে আগ্রহী মুকেশ অম্বানীর সংস্থা রিলায়্যান্সও।
তবে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের শেয়ার কে পাবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর উপরে। কারণ, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস তৈরির শর্ত অনুসারে নিলামে শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম যা উঠবে, সেই দাম চ্যাটার্জি গোষ্ঠী দিতে রাজি কিনা তা তাদের কাছে জানতে চাইবে রাজ্য। চ্যাটার্জি গোষ্ঠী চাইলে শেয়ার তারাই পাবে। তারা রাজি না-হলে শেয়ার পাবে সর্বোচ্চ দাম দেওয়া সংস্থা।
চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্যের দীর্ঘ আইনি বিবাদ কাটিয়ে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোয়, এখন সেটাই দেখার। |