|
|
|
|
|
|
|
|
আমার স্ত্রীর নামে একটি জমি ও বসত বাড়ি আছে। হিন্দু উত্তরাধিকার সংশোধন আইন ২০০৫ অনুযায়ী, পিতার বসত বাড়ি ব্যবহার, বিভাজন ও বিক্রির অধিকার কন্যার থাকে। আমার প্রশ্ন
১) আমাদের মেয়ে কি আমার স্ত্রীর বসত বাড়ির ব্যবহার, বিভাজন ও বিক্রির অধিকার পাবে? অন্যথায়
২) জয়েন্ট সম্পত্তি করতে হলে কী করতে হবে?
অমিত চৌধুরী, শিলিগুড়ি
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলি, আপনার স্ত্রী উইল বা দানপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে আপনাদের মেয়েকে তাঁর বসত বাড়িটি দিয়ে যেতে পারেন। সেটা করলে বাড়িটি মেয়েরই হবে এবং স্বাভাবিক ভাবেই তা ব্যবহার, বিভাজন ও বিক্রির অধিকারও মেয়ের থাকবে।
কিন্তু আপনার স্ত্রী যদি উইল বা দানপত্র না-করে মারা যান, তা হলে আপনি ও আপনাদের মেয়ে, উভয়েই ওই সম্পত্তির মালিক হবেন। এবং সে ক্ষেত্রে মেয়ে তাঁর ভাগের নির্ধারিত অংশটুকুই শুধু ব্যবহার, বিভাজন ও বিক্রির অধিকার পাবেন।
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলি, আপনার স্ত্রীর নামাঙ্কিত জমি ও বসত বাড়ি যৌথ (জয়েন্ট) সম্পত্তি বা যৌথ মালিকানা করা সম্ভব নয়। কারণ সম্পত্তিটা আপনার স্ত্রীর নামাঙ্কিত। তবে উনি চাইলে মেয়ে ও আপনাকে সম্পত্তির অংশ লিখে দিতে পারেন। অবশ্য উনি যদি মারা যান, তা হলে সম্পত্তিটিতে আপনার ও মেয়ের যৌথ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে।
আমার সেজো কাকার নামে কিছু সম্পত্তি রয়েছে। তিনি কোনও উইল না-করেই মারা গিয়েছেন। বর্তমানে কাকিমা (নিঃসন্তান) ও ঠাকুরমা (কাকার মা) জীবিত। উভয়েই কি কাকার সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকারী?
ঠাকুরমা ওই সম্পত্তি আমার ছোট কাকার নামে লিখিত দলিল করে দেন। এখন সেখানে কাকার একটি দোকান রয়েছে। কিন্তু সেজো কাকিমা সেখানের বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। নয়া সংযোগ নিতে গেলেও বাধা দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কী করণীয়?
শান্তনু পাল, হুগলি
হ্যাঁ, আপনার কাকিমা ও ঠাকুরমা, উভয়েই কাকার সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকারী। আপনার সেজো কাকা চাইলে উইল করে কাউকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার দিতে পারতেন। কিন্তু সেটা না-করেই তিনি মারা যাওয়ায়, সেজো কাকার সম্পত্তিতে তাঁর স্ত্রী ও মা-র সমান উত্তরাধিকার বর্তায়।
আর ঠাকুরমা তাঁর সম্পত্তি কাউকে লিখিত দলিল (দানপত্র) করে দিতেই পারেন। তাতে কারও কিছু বলার নেই। এ ক্ষেত্রে যেমন তিনি আপনার ছোট কাকার নামে লিখে দিয়েছেন। আপনার ছোট কাকার ওই অংশ যে-বিদ্যুত্ নিয়ন্ত্রক সংস্থার আওতায় পড়ছে (রাজ্য বিদ্যুত্ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা এসইবি), আপনি প্রথমে তাদের চিঠি লিখে বিষয়টি জানান। কারণ বিদ্যুত্ একটি জরুরি পরিষেবা। বিধি মেনে সেই পরিষেবা পাওয়া থেকে কেউ কাউকে জোর করে বঞ্চিত করতে পারে না। বিশেষ করে যেখানে ঠাকুরমা তাঁর প্রাপ্ত সম্পত্তি ছোট কাকার নামে দলিল করে দিয়েছেন। তার মানে ওই অংশের আইনি অধিকার তো এখন ছোট কাকারই।
যদি বিদ্যুত্ পর্ষদ আপনাকে নতুন সংযোগ না-দেয় বা কাকিমা ফের বাধা দেন, তা হলে পুলিশকে জানান। পুলিশি সাহায্যে আপনি বিদ্যুত্ সংযোগ নিতে পারেন। কিন্তু তাতেও যদি সমস্যার সমাধান না-হয়, আপনি মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টে রিট (writ) মামলা দায়ের করতে পারেন।
আমার বাবার একটি পুকুর সমেত কয়েক বিঘা চাষের জমি আছে। অন্য আরও একটি জমি আছে, যা পূর্বে একটি পুকুরের কিছুটা অংশ ছিল। কিন্তু কালক্রমে তা একটি শক্ত উঁচু জমিতে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে (ভরাট হয়নি কখনও)। বাবা ১৯৯৫ সালের আগেই মারা গিয়েছেন। আমি অবিবাহিত। আমার মা এবং এক ভাই রয়েছেন। ওই জমি দু’টিতে কি আমার উত্তরাধিকার আছে?
শ্রীমতী এস পাল, কলকাতা
অবশ্যই উত্তরাধিকার আছে। চাষের জমি, বাস্তু জমি বা জলা জমি বাবার যে-কোনও সম্পত্তিতে সব সময়েই সন্তানদের উত্তরাধিকার থাকে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে আপনারা দুই ভাই-বোন ও মা আপনাদের বাবার সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকারী। কাজেই, যদি আপনার বাবা উইল বা দানপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার মা এবং ভাইকে সম্পত্তি না-দিয়ে গিয়ে থাকেন, তা হলে ওই জমিতে আপনার অবশ্যই উত্তরাধিকার আছে। আগে আপনি এ সংক্রান্ত বিষয়ে ভাল ভাবে খোঁজ-খবর নিন। তার পর প্রয়োজন হলে উত্তরাধিকার দাবি করতে পারেন।
আমার বয়স এখন ৭২ বছর। আমি প্রায় ১০ বছর আগে একটি উইল করেছিলাম। যাতে আমার স্থাবর -অস্থাবর সম্পত্তি আমার ও আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পরে দুই মেয়ে সমান ভাবে পাবে লেখা ছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমার আজ কোনও স্থাবর সম্পত্তি নেই।
১) সে ক্ষেত্রে এই উইল কি আবার বদল করার প্রয়োজন আছে? শুধুমাত্র অস্থাবর সম্পত্তির জন্য কি আবার উইল করতে হবে?
সমীর রঞ্জন দাস
২) আমার বয়স ৬৪ বছর। বাপের বাড়ির সম্পত্তির কিছু অংশ (টাকায়) পেয়ে তা ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত (জয়েন্ট) করেছি। আমার ইচ্ছা আমার ও আমার স্বামী (সমীর রঞ্জন দাস)-র মৃত্যুর পর ওই টাকা আমার দুই নাতনি সমান ভাবে পাক। এখনও দু’জনেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। এই অবস্থায় কী করব?
দীপ্তি দাস, কলকাতা
১) যে কোনও মানুষের সর্বশেষ উইলটি গ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য হয়। ১০ বছর আগে করা ওই উইলটির পরে আপনি যদি অন্য কোনও উইল আর কখনও না-করে থাকেন, তা হলে আগেরটি আজও গ্রাহ্য। এবং আপনার অবর্তমানে ওই উইলটিই বৈধ বলে পরিগণিত হবে। তবে সে ক্ষেত্রে আপনার অবর্তমানে মেয়েদের উইলটির প্রবেট নিতে হবে। আপনার কোনও স্থাবর সম্পত্তি না-থাকলেও, ওই উইলের বলে অস্থাবর সম্পত্তিও আপনার মেয়েদের উপরেই বর্তাবে। আলাদা করে আর উইল করার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ অস্থাবর সম্পত্তি কাকে বা কাদের দিয়ে যেতে চান, আপনার সেই ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে ১০ বছর আগের ওই উইলটিতেই।
২) আপনি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা নাতনিদের দিয়ে যেতে চান। ভাল কথা। আপনি ব্যাঙ্কে যে-টাকার স্থায়ী আমানত করেছেন, সেটিতে আপনার নাতনিদের জয়েন্ট বা যৌথ নমিনি করতে পারেন। তবে তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে একজন অভিভাবক লাগবে। সে ক্ষেত্রে আপনি মেয়েদের অভিভাবক হিসেবে রাখতে পারেন।
এ ছাড়াও দুই নাতনিকে ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতের টাকা সমান ভাবে ভাগ করে দিতে উইল তৈরির বিষয়টিও একটু ভেবে দেখতে পারেন। সেখানেই নিজের মনের ইচ্ছে জানিয়ে রাখুন। পরিস্থিতি যাই হোক, আপনি মারা যাওয়ার পর তা নাতনিরাই পাবে।
|
(আইনি পরামর্শ জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়) |
|
|
|
|
|