স্পট এক্সচেঞ্জ
এ বার বরং তামা কিনুন
ত কয়েক সপ্তাহ ধরেই কম-বেশি পড়ছে সোনা ও অশোধিত তেলের দাম। সেই খবর হয়তো আপনি রাখেন। কিন্তু যে-পণ্যটির খবর সাধারণত রাখেন না, সেটি হল তামা (কপার)। সোনার মতোই নাটকীয় যার উত্থান-পতন। ফলে লগ্নির গন্তব্য হিসেবেও আকর্ষণীয়। চলুন, এই পর্বে তামার সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই।

বাজি রাখলে ঠকবেন না
তামাকে বাদ দিয়ে মানব সভ্যতার গড়ে ওঠা, অগ্রগতি, আবিষ্কার কল্পনা করা যায় না। এটি না-থাকলে বৈদ্যুতিন, বৈদ্যুতিক, টেলি-যোগাযোগ, নির্মাণ, পরিবহণ, যন্ত্রপাতি এবং দৈনন্দিন ব্যবহার্য অসংখ্য সামগ্রীর হাত ধরে এত দ্রুত নগরায়ন হত কি না সন্দেহ। ফলে ধাতুটির গুরুত্ব নিয়ে দ্বিমত নেই। পাশাপাশি আছে অর্থনীতির রসায়ন। চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু জোগান সীমিত। ফলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা সব সময়েই থাকে। সুতরাং তামার দামে বাজি রেখে তহবিল বাড়াতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তবে সব তথ্য জেনে-বুঝে তবেই লগ্নি করবেন।

নজর কাড়ে যারা
তামার ফিউচার ও অপশন লেনদেনে বিশ্বের তিনটি এক্সচেঞ্জ এই মুহূর্তে শীর্ষে।
লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জ (এলএমই)। এখানে লগ্নির জন্য ন্যূনতম ২৫ টন পণ্য কিনতে হয়। চুক্তি হয় টন পিছু মার্কিন ডলারে।
নিউ ইয়র্কের কমেক্স। ন্যূনতম ২৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে পণ্য কিনতে হয়। চুক্তি হয় পাউন্ড পিছু মার্কিন সেন্টে।
সাংহাই মেটাল এক্সচেঞ্জ। ন্যূনতম ৫ টন পণ্য কিনতে হয়। চুক্তি হয় টন পিছু রেনমিনবিতে।
ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (এমসিএক্স) চলে তামার আগাম লেনদেন।

লেনদেনের পদ্ধতি
অন্য যে-কোনও পণ্যের মতোই তামা কেনাবেচা হয় পণ্য বাজারে।
১) বিক্রেতা-ক্রেতা ভবিষ্যতে ধাতুটি লেনদেনের জন্য দাম স্থির করেন।
২) পণ্যের বরাত দেওয়ার সময়ে তৈরি হয় চুক্তিপত্র (ফিউচার কনট্র্যাক্ট)।
৩) চুক্তিপত্রে তামার মান, পরিমাণ, লগ্নি শেষে পণ্য ফেরতের তারিখ, পণ্য কিংবা টাকার অঙ্কে তা ফেরতের পদ্ধতি-সহ বিভিন্ন বিষয় থাকে।
৪) প্রতিটি পণ্য বাজারে চুক্তিপত্রের ধরন আলাদা হয়। তামার আগাম লেনদেনই বিশ্বে সব থেকে জনপ্রিয়।

জলে নামুন
জলে নামার আগে গভীরতা মাপবেন, এটাই দস্তুর। অন্তত বুদ্ধিমান লগ্নিকারীর ক্ষেত্রে। তাই আপনার মনে প্রথম যে- প্রশ্নটি উঁকি মারছে তা হল, ভারতে তামার বাজার কেমন। এর জবাব দিচ্ছি।
প্রতি দিন প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা মূল্যের তামার চুক্তিপত্র লেনদেন হয় ভারতে। এবং প্রায় পুরোটাই হয় এমসিএক্সে। গড়ে এখানে দিনে ২০ হাজার ফিউচার কনট্র্যাক্ট হাতবদল হয়।
এমসিএক্সে দু’ধরনের চুক্তিপত্র হয়।
একটিতে এক টন (১০০০ কেজি) তামা কিনতে হয়। অন্যটিতে লগ্নির ন্যূনতম পরিমাণ ২৫০ কেজি।
কেজি প্রতি টাকায় দাম হিসেব হয়।
এক টনের ফিউচার কনট্র্যাক্ট সব থেকে জনপ্রিয়। তবে এখন ছোট চুক্তির জনপ্রিয়তাও দ্রুত বাড়ছে।


কী করে লগ্নি করবেন?

এ বার এখানে কী ভাবে লগ্নি করতে পারবেন আপনিও, সেটাই জেনে নিন।
জুনে পণ্য পাওয়ার (ডেলিভারি) জন্য যে সব লগ্নিকারী ইতিমধ্যেই এক টনের চুক্তি করেছেন, তাঁদের লেনদেন হয়েছে কেজি প্রতি ৩৮০ টাকা দরে।
এক টন লেনদেনের চুক্তিতে মার্জিন মানি ৫%। মার্জিন মানি হল, চুক্তিপত্র কেনার সময়েই পণ্যের দামের যে- অংশটা দিয়ে দিতে হয়। বর্তমান দরে (কেজি প্রতি ৩৮০ টাকা) ন্যূনতম এক টনই কিনতে গেলে টাকার অঙ্কে তা দাঁড়াবে প্রায় ১৯ হাজার টাকা।
ছোট চুক্তিতে (ন্যূনতম লগ্নি ২৫০ কেজি) মার্জিন চুক্তির এক চতুর্থাংশ। অর্থাত্ প্রায় ৪,৭৫০ টাকা।
এ বার বলি তামার ‘টিক সাইজ’ অর্থাত্‌ কত টাকার তফাতে লগ্নি করা যায়, সে কথা। এমসিএক্সে টিক সাইজ ৫ পয়সা। ৫ পয়সা এ দিক-ও দিকে বড় চুক্তিতে ৫০ টাকা ক্ষতি বা মুনাফা (১,০০০ কেজি X ৫ পয়সা)। ছোট চুক্তিতে ১২.৫০ টাকা।
চুক্তিপত্রে তামার যে-দাম দেওয়া থাকে, লগ্নি শেষে সেই অনুযায়ী লাভ-ক্ষতির হিসাব হয়। যেমন জুনের লেনদেন হয়েছে কেজিতে ৩৮০ টাকায়। আপনি ৩৮০ টাকা দরে জুনের চুক্তি বিক্রি করলে ও তামার দাম সে-সময়ে নেমে কেজি প্রতি ৩৭০ টাকা হলে আপনি পাবেন, ১০X১০০০= ১০,০০০ টাকা।
চুক্তি নগদে হয়। চুক্তি শেষে সাধারণত পণ্য বাড়ি নিয়ে যেতে হয় না।
এখন জুন, অগস্ট ও অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হবে যে-সব চুক্তির, সেগুলির লেনদেন চলছে।
যে-কোনও সময়ে এক মাসের ফারাকে মোট ৩টি মেয়াদের চুক্তির সুযোগ পাবেন আপনি।

দামের পূর্বাভাস
রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরদারিতে তৈরি ইন্টারন্যাশনাল কপার স্টাডি গ্রুপ এপ্রিলের বৈঠকে পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০১৩-তে বিশ্ব জুড়ে তামার উত্‌পাদন ছাপিয়ে যাবে চাহিদাকে। অর্থাত্ চাহিদার থেকে জোগান থাকবে অনেক বেশি। ফলে দাম কমার সম্ভাবনা। ভারত-সহ প্রায় ২৪টি দেশ গ্রুপটির সদস্য।

এলএমই-তে লেনদেন চলছে টনে ৭০৩০ ডলার দরে (৩ মাসের চুক্তিতে দাম)। ভারতের এমসিএক্সে জুনের চুক্তিতে লেনদেন চলছে কেজিতে ৩৮০ টাকা দরে। আর্থিক পরিষেবা সংস্থা ক্রেডিট সুইসের পূর্বাভাস, এ বার তামা টনে ৬,০০০ ডলারে লেনদেন হবে। তা হলে ভারতেও কেজিতে দর কমবে ৫০ টাকা।

তবে ইউরোপীয় অঞ্চলের অর্থনীতি শোধরালে ও চিনে তামার চাহিদা বাড়লে (কারণ সর্বাধিক তামা ব্যবহার হয় চিনেই) দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা।

লেখক এমসিএক্স স্টক এক্সচেঞ্জ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট
(মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.