মিউচুয়াল ফান্ড
লগ্নিকে পাহারা দিচ্ছেন তো?
পনি ও আপনার ফান্ড। লগ্নি জীবনের এই বৃত্তে শান্তি বজায় রাখতে প্রথম থেকেই কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা খুব জরুরি। যার মধ্যে অন্যতম প্রত্যেক মাসে নিয়ম করে আপনার কেনা মিউচুয়াল ফান্ডের ফ্যাক্টশিট বা তথ্যপঞ্জী দেখা। অযথা মাথাব্যথা এড়ানো যায় এতে। সময়ও বাঁচে। কিন্তু কী এই তথ্যপঞ্জী? কী ভাবে তা দেখতে হয়? এ সব নিয়েই আজকের মিউচুয়াল ফান্ডের পাঠ।

ফ্যাক্টশিট কী?
• ফান্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
• প্রত্যেক মাসে তৈরি হয়।
• ফান্ডে আপনার যে তহবিল খাটছে, তার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য থাকে।
• ফান্ডটি কী অবস্থায় আছে জানায়।
• ইঙ্গিত দেয় তার পারফর্ম্যান্সের।
• ফান্ডের নিজস্ব সূচকের মাপকাঠিতে তার গতিপ্রকৃতির আভাস দেয়।
• একটু তলিয়ে দেখলে ভবিষ্যতের পূর্বাভাসও পেতে পারেন।

হরিহর আত্মা
আপনার মনের প্রাণের বন্ধু কারা? যাঁরা দুঃখে-বেদনায় নিঃশব্দে আপনাকে ছুঁয়ে থাকেন। বিপদে পড়লে যাঁরা আগুপিছু না-ভেবে হাত বাড়িয়ে দেন, তাঁরাই তো? তা হলে আপনি যদি মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারী হন, আপনার হরিহর আত্মা ফ্যাক্টশিট। আপনার লগ্নি-জীবনটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এটিকে বাদ দিয়ে।
কারণ, কম মানুষই নিজের লগ্নির খুঁটিনাটি সম্পর্কে সর্বক্ষণ সচেতন থাকেন। কাজেই আপনি যখন আপনারই কেনা এক বা একাধিক ফান্ড সম্পর্কে প্রায় কিছুই মনে করতে পারবেন না, তখন অগতির গতি হবে ওই ফ্যাক্টশিট। একবার চোখ রাখলেই নিশ্চিন্ত। ফ্যাক্টশিট সম্পর্কে মোটামুটি কাজ চালিয়ে দেওয়ার মতো জ্ঞান অর্জন করতে পারলেই কেল্লা ফতে। ওই নির্দিষ্ট ফান্ডটিতে লগ্নি চালিয়ে যাবেন, না কি বেরিয়ে এলেই ভাল হবে, সেটাও কিছুটা আন্দাজ করা যায় ফ্যাক্টশিট দেখে।

চমকের আশায়
ফ্যাক্টশিট দেখার প্রক্রিয়া খুব সহজ।
• যে-অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কাছ থেকে ফান্ড কিনেছেন, তার ওয়েবসাইটে যান।
• আপনার ফান্ডের ফ্যাক্টশিটের সাম্প্রতিকতম সংস্করণ বার করুন।
• এ বার সাইটের নির্দিষ্ট লিঙ্কে গিয়ে পুরনো ফ্যাক্টশিটগুলি বার করুন।
• মিলিয়ে দেখুন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কতটা বেড়েছে ফান্ড, কী কী পরিবর্তন হয়েছে তাতে।

যা জানি না, যা ভুলেছি
ফ্যাক্টশিটে অনেক তথ্য দেওয়া থাকে। সেগুলির কোনওটা আপনি স্রেফ ভুলেই গেছেন। আবার কোনওটা আপনার জানা উচিত, কিন্তু জানেন না। কী সেগুলি?
• ফান্ডের প্রকৃতি। অর্থাত্‌ ঠিক কী ধরনের ফান্ডে টাকা ঢেলেছেন।
• ফান্ড ম্যানেজার কোন লগ্নি কৌশল অনুসরণ করেছেন।
• কোথায় কতটা টাকা খাটছে। অর্থাত্‌ তহবিল বণ্টনের খুঁটিনাটি।
• কোন শিল্পে কতটা করে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
একটা কথা মনে রাখবেন। প্রতি মাসের শেষ দিনে ফ্যাক্টশিট তৈরি হয়। ফলে সেই তথ্য সর্বশেষ সে দিন ফান্ডটি যে অবস্থায় থাকবে, সেটিকেই তুলে ধরবে। আর সেই তথ্যগুলিই আপনি হাতে পাবেন পরের মাসে।
এ বার উপরের বিষয়গুলির মধ্যে দু’টি নিয়ে বিশদে আলোচনা করব।
তহবিল বণ্টন
আপনি একটি ফান্ড কিনলেন। এ বার ফান্ড ম্যানেজার কী ভাবে আপনার তহবিল শেয়ার বাজার বা বন্ডে লগ্নি করছেন, ফ্যাক্টশিটে চোখ রাখলেই সেই প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন। এমনকী কোথায় কোথায় সব থেকে বেশি লগ্নি করে রাখা হয়েছে তা-ও দেখতে পাবেন। ফলে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আপনার টাকা পয়সা নিয়ে ঠিক কী করা হয়েছে। কোথায় বেশি টাকা লাগানো হয়েছে, কোথায় কম। কোন কোন ধরনের শেয়ার বা বন্ডকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিল্পে বরাদ্দ
আপনার ফান্ড হয়তো নানা ধরনের শিল্পের শেয়ারে লগ্নি করেছে। সে ক্ষেত্রে কোথায়, কতটা তহবিল ছড়ানো হয়েছে সেটা বলা থাকবে ফ্যাক্টশিটে। কোন শিল্পের সম্ভাবনা কতটা, তা বুঝেই ফান্ড ম্যানেজার নির্দিষ্ট অনুপাতে লগ্নির জন্য ক্ষেত্রগুলি বেছে নেবেন, এটাই বাঞ্ছনীয়। আপনি কতটা বেশি ঝুঁকি নিতে চান, ঝুঁকি না-নিয়ে মোটামুটি রিটার্নেই সন্তুষ্ট থাকবেন কি না, সে সব শর্তের ভিত্তিতেও এক একটি শিল্পকে গুরুত্ব দিতে হবে তাঁকে। আর আপনার এই সব শর্ত পূরণ হল কি না, শিল্প বাছার ক্ষেত্রে আপনার পছন্দকে ম্যানজার বাবুটি গুরুত্ব দিয়েছেন কি না, সেটা থাকবে ফ্যাক্টশিটে। এমনকী শিল্পের সম্ভাবনা আন্দাজ করার ক্ষেত্রে তিনি ভুল করলেও তা প্রতিফলিত হবে ওই তথ্যপঞ্জীতে। থাকবে লাভ-ক্ষতির ইঙ্গিতও। ফলে লগ্নি কৌশল পছন্দ না- হলে বেরিয়ে আসার সুযোগ পাবেন।

উদাহরণ
বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বোঝাতে আমি দু’একটি ফান্ডের উদাহরণ টানব। কিন্তু সেই ফান্ডগুলিকে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না বা সুপারিশ করছি না। শুধু লগ্নি-জীবনে ফ্যাক্টশিটের গুরুত্ব সম্পর্কে আপনার চোখ খুলে দিতে, এগুলির সাহায্য নিচ্ছি।
যেমন ধরুন,

ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটন ব্লু-চিপ ফান্ড: এটির ফ্যাক্টশিটে যে-সব তথ্য আছে, সেগুলি হল
• লগ্নির ধরন।
• ফান্ডের প্রকৃতি।
• কবে তা কেনা হয়েছে।
• সম্পদের পরিমাণ কত হয়েছে, তার পরিমাপ (কোটি টাকায়)। আগের মাসের ফ্যাক্টশিটের সঙ্গে তুলনা করলে বুঝবেন তা বেড়েছে না কমেছে।
• নিট সম্পদের অনুপাতে খরচ।
• লোডের কাঠামো বা পরিমাণ।
• ফান্ডের তহবিল বণ্টন।
• বিভিন্ন ধরনের শিল্পে বরাদ্দ অর্থ।
• কী কী সংস্থার শেয়ার কেনা হয়েছে।
• কতটা করে শেয়ার কেনা হয়েছে।
• প্রতিটি শেয়ারের বাজার দর।
• ওই বাজার দর সংস্থার মোট সম্পদের কত শতাংশ।
এদের ফ্যাক্টশিটে আর একটি চমকপ্রদ তথ্য থাকে। সেটি হল নির্দিষ্ট মেয়াদে ‘এসআইপি রিটার্ন’। সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নির ভাল পথ। এতে নির্দিষ্ট সময় ধরে মাসে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা লগ্নি করতে হয়। ওই ফ্যাক্টশিটে দেখানো থাকে, লগ্নিকারী যদি ফান্ডের প্রথম বাজারে আসার সময় থেকে শুরু থেকে (১৯৯৩ থেকে) মাসে ৫,০০০ করে টাকা এসআইপি করতেন, তা হলে এখন তার মূল্য কত হতে পারত।

ইউটিআই মাস্টারশেয়ার: এর ফ্যাক্টশিটে থাকে
• বাজারে ফান্ডের শেয়ার মূলধন।
• ফান্ড ম্যানেজার কোন কোন শিল্প ক্ষেত্রে তহবিল বণ্টনের পরিমাণ কমাতে চাইছেন এবং কোনটাতে বাড়াতে চাইছেন। দু’ক্ষেত্রেই পাঁচটি করে শিল্পের উল্লেখ থাকে এখানে।
• সব থেকে বেশি লগ্নি করা হয়েছে কোন দশটি শিল্পে।
• গত মাসের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ন্যাভ।

ফ্যাক্টশিট কড়চা
• ফান্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণী।
• আগের মাসের শেষ দিনে কী অবস্থা দাঁড়াল তা জানায়।
• ফান্ড ম্যানেজারের ব্যাখ্যাও থাকতে পারে সঙ্গে।
• অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার ওয়েবসাইট খুললেই পাওয়া যায়।
• ফান্ডের খরচ ও লোড সম্পর্কে ইঙ্গিত মেলে।
• রিটার্নেরও আভাস পাওয়া যেতে পারে।
• নিজের লগ্নি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার দারুন পথ।
• ফ্যাক্টশিটের মাধ্যমে ফান্ড ম্যানেজারের ভুল চিহ্নিত করে ফান্ড থেকে বেরিয়ে আসা যায়।

লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর
(মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.