অবশেষে মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মেনে ধর্ষণে অভিযুক্ত রাজ্য পুলিশের এক সাব ইনস্পেক্টরকে (এসআই) সাসপেন্ড করবে রাজ্য সরকার। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ধর্ষিতাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ হাজার টাকাও দিতে দ্রুত দিয়ে দেওয়া হবে বলে রাজ্য সরকার কমিশনকে জানিয়েছে।
নানুর থানার পুলিশ আবাসনের এক কনস্টেবলের নাবালিকা মেয়েকে ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে থানায় একা পেয়ে এসআই স্বর্গজিৎ বসু বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পরে স্বর্গজিৎ অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তত দিনে ধর্ষিতা প্রাপ্তবয়স্ক। তিনি নানুর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে থানা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। ২০০৬ সালের ৮ অগস্ট আদালতের নির্দেশে থানা ওই এসআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে। এই সব প্রক্রিয়া চলার সময়েই স্বর্গজিৎকে নানুর থেকে সদাইপুর থানায় ওসির পদে যান। বর্তমানে তিনি সিউড়িতে জেলা গোয়েন্দা দফতরে কর্মরত। স্বর্গজিতের সঙ্গে অবশ্য বুধবার যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তদন্তকারী অফিসার ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন। ওই চার্জশিটে স্বর্গজিতের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও ব্যভিচারের কথা লেখা থাকলেও ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে কোনও উল্লেখই ছিল না। এর পরে ধর্ষিতা ২০১০ সালের ৯ মার্চ রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানান। কমিশন বীরভূমের তৎকালীন পুলিশ সুপার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, অভিযুক্ত এসআই স্বর্গজিৎ-সহ সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে। তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণের পর গত বছর ২ মে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়, সদস্য তথা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীল এবং সৌরীন রায় রাজ্য সরকারকে কয়েকটি সুপারিশ করেন।
কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত জানিয়েছেন, স্বর্গজিৎকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা এবং ধর্ষিতাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল কমিশন। দু’মাসের মধ্যে সুপারিশ কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল রাজ্য সরকার চিঠি দিয়ে মানবাধিকার কমিশনকে জানিয়ে দেয়, কমিশনের সুপারিশ সরকার মেনে নিয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, তাদের অধিকাংশ সুপারিশ কার্যকর না করলেও রাজ্য যে এ ক্ষেত্রে কমিশনের করা সুপারিশ কার্যকর করার কথা জানিয়েছে, তা জেনে কমিশনের চেয়ারম্যান এবং দুই সদস্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা অবশ্য বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। কাগজপত্র হাতে পেলে জানতে পারব।”
|