পুরনো প্রযুক্তিতেই এখনও চলছে শিল্পাঞ্চলের রবীন্দ্রভবন
সাতাশ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু কোনও সংস্কার হয়নি রবীন্দ্রভবনের। বাইরে থেকে অবশ্য গাছগাছালি দিয়ে ঢাকা, ঝকঝকে তকতকে। দর্শকদের বসার বন্দোবস্তও ভাল। এমন কি বাতানুকূলও। কিন্তু হলে কী হবে? আসল জিনিসই ঠিক নেই, ধ্বনি ব্যবস্থা বা আলোর ব্যবস্থা, কোনওটাই সময় মতো নয়। বড্ড সেকেলে। তা নিয়ে শহরবাসীর অভিযোগেরও অন্ত নেই। হাজার হোক, শহরের যে কোনও বড় অনুষ্ঠানে এই ভবনই তো ভরসা দর্শকদের। তাই সকলেই মনে করছেন, ভবনটির সংস্কার ও আধুনিকীকরণের জন্য একটু উদ্যোগ নিন কর্তৃপক্ষ। না হলে, অদূর ভবিষ্যতে আর ব্যবহারই করা যাবে না ভবনটি।
২৭ বছর আগে আসানসোল পুরসভার উদ্যোগে সরকারি অর্থে তৈরি হয় রবীন্দ্রভবন। ওইসময়ে পুরপ্রধান ছিলেন গৌতম রায়চৌধুরী। ১৯৮৬ সালে প্রেক্ষাগৃহটির দ্বারোদঘাটন করেন রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী ভবানী মুখোপাধ্যায়। শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলের এই প্রেক্ষাগৃহটি সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর শিল্পাঞ্চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার মতো আর তেমন কোনও প্রেক্ষাগৃহ না থাকায় রবীন্দ্রভবনের গুরুত্বও ক্রমশ বেড়েছে। বাণিজ্যিক ও অ-বাণিজ্যিক সব ধরনের অনুষ্ঠানের জন্যই ভাড়া দেওয়া হয় এই প্রেক্ষাগৃহ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও, বিভিন্ন গণসংগঠ থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সভা-সমিতিতেও ব্যবহৃত হয় এই প্রেক্ষাগৃহ।
আসানসোলের রবীন্দ্রভবন। —নিজস্ব চিত্র।
দর্শক বা অনুষ্টানের উদ্যোক্তাদের একটাই অভিযোগ, বসার ব্যবস্থা থেকে আনুষঙ্গিক সাজ সজ্জা ভাল হলেও এই ভবনে এতটাই পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে যে আধুনিক মঞ্চগুলির সঙ্গে কোনওভাবেই টেক্কা দিতে পারছে না আসানসোলের সাধের প্রেক্ষাগৃহটি। সংশ্লিষ্ট সব মহলের আক্ষেপ, “ ২৭ বছরেও প্রেক্ষাগৃহটিকে সময়োপযোগী ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে পারলেন না পুর কর্তৃপক্ষ।” শহরের একজন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক গৌতম রায়ের বক্তব্য, “কলকাতার আধুনিক প্রেক্ষাগৃহগুলির ধারে কাছে যেতে পারেনি রবীন্দ্রভবন। অথচ প্রায় প্রতিদিনই কলকাতার বহু নামীদামী শিল্পী এখানে অনুষ্ঠান করছেন। স্রেফ প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকতার অভাবেই অনুষ্ঠানগুলো মার খাচ্ছে।”
নতুন প্রজন্মের সঙ্গীতশিল্পী কিঞ্জল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রেক্ষাগৃহটি দেখতে খুব সুন্দর। কিন্তু ধ্বনিব্যবস্থা একেবারেই ভালো নয়। পুরনো কারিগরি ব্যবস্থা না পাল্টালে অনুষ্ঠানের মজা পাওয়া যাবে না।” নাট্যাভিনেতা সম্পদ বসুর কথায়, “ এখানে নাটক মঞ্চস্থ করতে এলে হিরে থেকে জিরে সবই নিয়ে আসতে হয়। মঞ্চ সজ্জার উপকরণ প্রায় সবই ভেঙে পড়েছে। নজর না দিলে এখানে বেশি দিন নাটক মঞ্চস্থ করা মুশকিল হবে।”
আক্ষেপ চিত্রশিল্পীদেরও। গৌতম দত্ত নামে শহরের এক চিত্রশিল্পী বলেন, “রবীন্দ্রভবনের উপরে একটি আর্ট গ্যালারি বানানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। সে আর হলই না। হলের গুরুত্বই হারিয়ে যাচ্ছে।” দর্শক জাহানারা বেগমও বলেন, “আলো ও ধ্বনিব্যবস্থারও উন্নতি করা উচিত। সামনের বাগানটিকেও সাজানো উচিত।” রবীন্দ্রভবনের এই খামতির কথা মেনে নিয়েছেন পুরসভার সাংস্কৃতিক দফতরের মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম। তিনি জানান, বছরের প্রায় সব দিনই ওই হলে অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু তাতে খুব বেশি লাভ হয় না। প্রেক্ষাগৃহ দেখভাল করার জন্য বছরে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়। রবিউলবাবু জানান, “বছর খানেক আগে বেশকিছু সংস্কার হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে রবীন্দ্রভবনের আধুনিকীকরণের জন্য একটি বিশেষ তহবিল মিলেছে। আমরা দ্রুত কাজে হাত দেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.