ঘরে-বাইরে চাপে পড়ে বনধ প্রত্যাহার গুরুঙ্গের
সারা দিন চেষ্টা করেও দলের একটা বড় অংশকে পাশে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত পাহাড়ে বনধের ডাক প্রত্যাহারই করে নিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। মোর্চার অন্দরের খবর অন্তত তাই-ই বলছে। বনধ প্রত্যাহারের পরে পাহাড়ের সাধারণ মানুষও এমনই ভাবছেন। দিনের শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন পর্যটকেরাও।
রবিবার মিরিকে জিএনএলএফের সভার পরে সুবাস ঘিসিংয়ের দলের সঙ্গে মোর্চার সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। তার পরেই গুরুঙ্গ আচমকা অনির্দিষ্টকালের জন্য বনধের ডাক দিয়ে দেন। মোর্চার অন্দরের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দার্জিলিং সফরের মুখে এবং ভরা পর্যটন মরসুমে গুরুঙ্গের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তখনই দলে কথা ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীও মোর্চাকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দেন। গুরুঙ্গ তার পরে সেই দিনই বনধ ২৪ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করে দেন। তখন তিনি বলেছিলেন, সোমবার সনধ্যা ৬টার মধ্যে মিরিকের ওসি সৌরভ সেনকে বদলি না করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বনধ শুরু হবে।
কিন্তু এই দিন সকাল থেকেই ঘরে-বাইরে ক্রমশ চাপ বাড়তে থাকে গুরুঙ্গের উপরে। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সারা দিন একের পর এক বৈঠক করেন গুরুঙ্গ। সেখানে দলের একটি বড় অংশ গুরুঙ্গের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি। এই নেতাদের দাবি ছিল, এখন বনধ ডাকলে জনসমর্থন তাঁদের পাশ থেকে সরে যাবে। রাজ্য সরকারও বিমুখ হবে। এ মাসেই কেন্দ্র, রাজ্য ও মোর্চার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে। তার আগে সেই ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না। এরপরেই সৌরভবাবুকে বদলি করা না হলেও বনধ প্রত্যাহার করে নেয় মোর্চা। জেলা পুলিশ অবশ্য সৌরভবাবুর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই দিন রাজ্যের পাঠানো প্যানেল থেকে মোর্চার পছন্দের অফিসার রামদাসী মিনা জিটিএ-র প্রধান সচিব পদে যোগ দিয়েছেন।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে আসবেন। তার আগে পাহাড়ে আমরা স্বাভাবিক পরিস্থিতি রাখতে চাই। পর্যটন মরসুম শুরু হয়েছে। সেটাও মাথায় রাখছি আমরা। তা ছাড়া আমাদের দাবি মেনে মিরিকের ওসিকে এখনও বদলি করা না-হলেও তাঁর বিরুদ্ধে থাকা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়েছে পুলিশ। সব দিক মাথায় রেখেই আমরা আপাতত অনির্দিষ্টকালের বনধ স্থগিত রাখছি।”
রাজ্য সরকার মোর্চা নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে গিয়ে নানা প্রকল্পের কাজ শুরু করিয়েছেন। জিটিএ তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে শান্তি, সম্প্রীতি, গণতান্ত্রিক পরিবেশ আরও উন্নত করতে জিটিএ-র শাসক দল মোর্চাকেই প্রধান ভূমিকা নিতে হবে। মোর্চাকে মেপে পদক্ষেপ করতে হবে।”
মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে মিরিকের সৈরিনি এলাকায় জিএনএলএফের ঘরোয়া সভায় ভিড় দেখার পরে তখন থেকেই দলের কট্টরপন্থী ও নরমপন্থীদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়ে গিয়েছিল। নরমপন্থীরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, ঘিসিংয়ের দলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না যাওয়াই ভাল। বরং জিএনএলএফ বিনা অনুমতিতে সভা করছে এই অভিযোগ তোলা যেতে পারে। কিন্তু মোর্চার কট্টরপন্থী অংশ নিজেদের শক্তি জাহিরের রাস্তাই নেয়। এর পরে মারপিট হয়। জিএনএলএফও পাল্টা মার দেয়। পুলিশ লাঠি চালিয়ে উভয়পক্ষের লোকজনকে গ্রেফতার করে।
এই পরিস্থিতিতে নিজেদের সম্মান বজায় রাখতেই তখন গুরুঙ্গ বনধের ডাক দিয়ে দিয়েছিলেন বলে মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু তার পরে পরিস্থিতি বরং ক্রমশ মোর্চা সভাপতির বিরুদ্ধেই চলে যেতে শুরু করে। মোর্চার নেতা-কর্মীরা জিএনএলএফ নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর চেষ্টা করায় জিটিএ-র প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে গুরুঙ্গ সমালোচনার মুখে পড়েন। মহাকরণ থেকেও বনধ প্রত্যাহারের জন্য চাপ বাড়ানো হয়। কার্শিয়াঙের বিধায়ক রোহিত শর্মা মহাকরণে গেলে তাঁর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। রোহিতবাবু বলেন, “আমি দেখা করতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি গুরুঙ্গের সঙ্গেও কথা বলে বনধ তুলে নেওয়ার কথা বলেন। সে কথা মেনে নেন দলের সভাপতি।”
মোর্চা নেতাদের প্রথম সারির কয়েকজন নেতাও আন্দোলনে না-গিয়ে জিটিএ চালিয়ে পাহাড়ের উন্নয়ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের চেষ্টা করার পক্ষপাতী। দলের ছাত্র-যুব সংগঠনের তরফেও কয়েকজন নেতা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার উপরে জোর দেন। গুরুঙ্গের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কয়েকজন কট্টরপন্থী নেতা কিন্তু তাতেও বনধ তুলতে রাজি ছিলেন না। বরং নরমপন্থীদের রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে কটাক্ষ করা হয়। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়ছে দেখে এবং মুখ্যমন্ত্রীর চাপে শেষ পর্যন্ত গুরুঙ্গ বনধ তুলতে সায় দেন। মোর্চা নেতা রোশন অবশ্য বলেন, “দলে কোনও কোন্দল নেই। সভাপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.