দার্জিলিঙে স্বস্তি এলেও মিরিক ফাঁকা
সারাদিন রোদবৃষ্টির লুকোচুরি চলল দার্জিলিং পাহাড় জুড়ে। সকালের দিকে ঝকঝকে রোদ থাকলেও বেলা গড়াতেই আকাশের মুখ ভার। মুখ ভার ছিল দার্জিলিংয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও। ম্যাল চত্বরে কান পাতলেই চাপা গুঞ্জন চলছিল বন্ধ কি হবে? এই দোলাচল চলেছে প্রায় সারাদিন। মোর্চা নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যা ৬টায় সিদ্ধান্ত জানাবেন। তাই সারাদিন রোদ থাকলেও পর্যটকরা ছিলেন হোটেল বন্দি। শেষ পর্যন্ত মোর্চা বন্ধ তুলে নেওয়ায় ফিরল স্বস্তি। এর মধ্যেই মিরিক অবশ্য পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে। মিরিকের থেকে অনেকটা কাছেই সৈরিনি, যেখানে রবিবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল মোর্চা ও জিএনএলএফ। তার পর থেকেই বন্ধ হয়ে শুরু হয়ে যায় মিরিকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দিয়ে মিরিকের ওসিকে বদলির দাবি তুলে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের হুঁশিয়ারি দেয় মোর্চা। এর পর থেকেই পর্যটকরা উৎকণ্ঠায় ছিলেন। অনেকেই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
হালিশহরের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “তিন দিনের জন্য ঘুরতে এসেছি। বন্ধের কথা শুনেছি। কিন্তু ফিরতে ইচ্ছে করছে না। খোলামেলা ঘুরতে পারব কি না তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।” টালিগঞ্জের মেট্রো রেল কর্মী সুজিত কুমার দত্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ করতে দেবেন না, এ ব্যপারে নিশ্চিত ছিলাম। সে জন্য থাকার সিদ্ধান্ত নিই। শেষ পর্যন্ত হল তাই।” বন্ধের কথা শুনে বাংলা ছবির পরিচালক সুদীপ চট্টোপাধ্যায় তাঁর নতুন ছবির ইন্ডোর শু্যটিং রেখেছিলেন। ছবির অভিনেতা শিলাজিৎ চট্টোপাধ্যায় বন্ধ হচ্ছে না শুনে বলেন, “যাক দার্জিলিং তা হলে জনশূন্য হচ্ছে না। জনশূন্য দার্জিলিং কে চায়?”
তড়িঘড়ি পাহাড় থেকে ফিরে এসে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।—নিজস্ব চিত্র।
মালদহের বাসিন্দা বদরুদ্দিন আহমেদ জানান, তাঁর মেয়ের পরীক্ষা ছিল শিলিগুড়িতে। সে জন্য রবিবার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তিনি শিলিগুড়ি পৌঁছন। ওইদিন বিকালে তাঁরা দার্জিলিংয়ে যান। ইচ্ছে ছিল দু’দিন থাকার। সোমবার সন্ধ্যার পরে বন্ধ হতে পারে আশঙ্কা করে তাঁরা নেমে আসেন। তিনি বলেন, “আরও এক দিন থাকার ইচ্ছে ছিল। সে পরিকল্পনা করেই বাড়ি থেকেই বেরিয়েছিলাম। হোটেল মালিক থেকে গাড়ি চালক সবার কাছে জানতে পারলাম বন্ধ হতে পারে। তাই নেমে এসেছি। এ দিনই বাড়ি ফিরব।”
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি দল পাহাড়ে গিয়েছিলেন। ওই দলের সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মী জানান, শিক্ষামূলক ভ্রমণে গত শুক্রবার তাঁরা কালিম্পংয়ে পৌঁছন। সেখানে দু’দিন কাটিয়ে তাঁরা দার্জিলিংয়ে যান। মঙ্গলবার তাঁদের ফেরার কথা ছিল। তিনি বলেন, “পাহাড়ে বন্ধ হবে বলে সবাই বলছিল। সে কারণে ঝুঁকি নিইনি। শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোমবারই ফিরবেন। সে কারণেই ফিরে এসেছি।” কলকাতার বারুইপুর থেকে সাধন চক্রবর্তী স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন। তিনিও একদিন আগে পাহাড় থেকে সমতলে নেমে আসেন। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার রাতে কলকাতার ট্রেন ধরব। ওই দিনই পাহাড় থেকে নিচে নামার কথা ছিল। কিন্তু, বন্ধের কথা ভেবে একিদন আগেই ফিরেছি।”
মিরিকের হোটেল ব্যবসায়ী সুরজিৎ বসু রায় জানান, এদিন অনেকেই হোটেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “পর্যটকরা সঠিক ভাবে বুঝতে পারছেন না কি হবে। তাই অনেকে ঝুঁকি না নিয়ে ফিরে যেতে চাইছেন।” সন্ধ্যার পরে বন্ধ উঠে যাওয়ায় অনেকেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। দার্জিলিংয়ের হোটেল ব্যবসায়ীরাও খুশির কথা জানিয়েছেন। শিলিগুড়ির একটি ট্যুর অপারেটর সংস্থার কর্ণধার সম্রাট সান্যাল বলেন, “বন্ধ প্রত্যাহারের খবর পেয়ে পর্যটকরা কেউ তেমনভাবে পাহাড় ছাড়েননি। অল্প কয়েকজন পর্যটক একদিনের ট্যুর বাতিল করে নিচে নেমেছেন এমন হয়েছে।”
সন্ধ্যা ছ’টা। দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বন্ধ না হওয়ার খবর। ম্যালে উপচে পড়েছে পর্যটকদের ভিড়। তা দেখে খুশি হয়ে উঠেছেন বিক্রেতারা। তখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে পাহাড়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.