ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে নিগ্রহের ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি বলেই মনে করে রাজ্য সরকার। সোমবার কমিশনকে চিঠি দিয়ে এ কথা জানিয়েছে রাজ্য।
গত বছর এপ্রিল মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের ব্যঙ্গচিত্র ই-মেলে ফরোয়ার্ড করার অভিযোগে এলাকার কয়েক জন তৃণমূল নেতা অম্বিকেশবাবুকে মারধর করেন। পরে পুলিশ এসে অম্বিকেশ ও তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্তকে গ্রেফতার করে। রাতভর তাঁদের হাজতে রাখা হয়েছিল। পর দিন আলিপুর আদালত থেকে জামিন পান তাঁরা। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, এই ব্যঙ্গচিত্রের পিছনে তাঁর সম্মানহানি ও হত্যার চক্রান্ত রয়েছে।
এর পরেই রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বিষয়টির তদন্তে নামে। কমিশন সুপারিশ করে, অম্বিকেশবাবুকে হেনস্থা করার ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজ্য সরকারকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। শাস্তি দিতে হবে পূর্ব যাদবপুর থানার দোষী পুলিশ অফিসারদেরও। সোমবার সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার শেষ দিন ছিল।
রাজ্য সরকার অবশ্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মানেনি। কেন মানা হল না, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই দিন রাতে অম্বিকেশ মহাপাত্র ও সুব্রত সেনগুপ্তকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করতেই থানায় নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। রাতে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের অভিযোগ দায়ের করার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাঁরা কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তার পরও আইনজীবীর মাধ্যমে থানা থেকে জামিন নেওয়ার জন্য পুলিশ অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুকে অনুরোধ করে। কিন্তু তাঁরা থানা থেকে জামিন নিতে রাজি হননি। সেই কারণে রাজ্য সরকার মনে করে, পুলিশের কর্তব্যে গাফিলতি হয়নি। তাই ওই ঘটনায় পুলিশের কোনও দায় নেই। সেই কারণেই রাজ্য সরকার কমিশনের সুপারিশ মেনে ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত নয়। কমিশন অবশ্য রাজ্য সরকারের এই যুক্তি মানতে রাজি হয়নি। কমিশনের যুগ্ম সচিব সুজয় হালদার বলেন, “রাজ্য সরকারের চিঠির প্রেক্ষিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন ফের রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে। রাজ্য সরকারের যুক্তি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া
যাচ্ছে না। ফের ওই ঘটনার খতিয়ে দেখার জন্য সুপারিশ করেছে কমিশন।”
এ ব্যাপারে অম্বিকেশবাবু বলেন, “রাজ্য মানবাধিকার কমিশন গোটা ঘটনার তদন্ত করার পর সরকারকে সুপারিশ করেছে। সরকার সত্য ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে। কোনও ভাবেই ক্ষতিপূরণ দিতে ইচ্ছুক নয় তারা। রাজ্যবাসীর কাছে এটা একটা দুভার্গ্যজনক ঘটনা।”
|