কলকাতা-সহ দেশে-বিদেশে মার্কিনদের উপর আগামী ২১ জুলাই জঙ্গি হামলা হবে এই হুমকি দিয়ে আমেরিকান সেন্টারে ডাক মারফত পাঠানো একটি চিঠি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। কে বা কারা ওই চিঠি পাঠাল, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা।
এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ওই চিঠি পাওয়ার কয়েক দিন পরে আমেরিকান সেন্টারের নিরাপত্তা অফিসার লালবাজারের এসটিএফ থানায় চিঠিটির অনুলিপি দিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আজমল আমির কসাব ও আফজল গুরুর ফাঁসির বদলা নিতে কলকাতা-সহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন অফিস ও মার্কিনদের উপরে জঙ্গি হামলা চালানো হবে। মার্কিনদের উদ্দেশে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন কনস্যুলেট-সহ বিভিন্ন অফিস খালি করে পালান, কারণ তাঁদের চরম বিপদ ঘনিয়ে আসছে। |
এ দিকে, নৌবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের সদর দফতর থেকেও সম্প্রতি মুম্বই পুলিশকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, সেখানকার আমেরিকান কনস্যুলেটে আগামী ২১ জুলাই জঙ্গিরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর ছক কষেছে। অর্থাৎ কলকাতা ও মুম্বই দু’টি ক্ষেত্রেই সম্ভাব্য নাশকতার তারিখ এক। কিন্তু জঙ্গি হানার ক্ষেত্রে ২১ জুলাই তারিখটি বেছে নেওয়ার কারণ কী, সেটা তদন্তকারীরা এখনও বুঝতে পারছেন না। নৌবাহিনীর সদর দফতর তাদের সতর্কবার্তায় কলকাতায় আসা চিঠিটির কথাও উল্লেখ করেছে।
কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে যেটি পৌঁছেছে, সেটি কম্পিউটারের রোমান হরফে ইংরেজিতে লেখা আধ পাতার একটি চিঠি। তার মাথার উপরে উর্দুতে লেখা: আল-জিহাদ। এ রকম কোনও জঙ্গি সংগঠনের নাম গোয়েন্দাদের এখনও অজানা।
আমেরিকান সেন্টারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত এসটিএফ অবশ্য কোনও মামলা রুজু করেনি। এটি সত্যি সত্যিই হুমকি, নাকি নিছকই কেউ ঠাট্টা করছে সে ব্যাপারে আগে নিশ্চিত হতে চান গোয়েন্দারা।
লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “এখনও পর্যন্ত ওই হুমকি-চিঠিকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার কারণ দেখছি না। কারণ, ওই হুমকির সঙ্গে মিল রয়েছে, জঙ্গি কার্যকলাপ সংক্রান্ত এমন কোনও গোয়েন্দা-তথ্য আমরা এখনও পাচ্ছি না। তবে ঝুঁকি না-নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সাবসিডিয়ারি ইনট্যালিজেন্স ব্যুরো, আমাদের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ এবং শেক্সপিয়র সরণি থানাকে সতর্ক করা হয়েছে।” ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকান কনস্যুলেট ও আমেরিকান সেন্টারের নিরাপত্তা কি বাড়ানো হচ্ছে? ওই কর্তা বলেন, “ওই দু’টি জায়গাতেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রয়েছে। নতুন করে নিরাপত্তা বাড়ানোর কিছু নেই। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পুলিশকে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
এক তদন্তকারীর কথায়, “কসাব ও আফজল গুরুকে ফাঁসি দিয়েছিল ভারত সরকার। সেখানে ওই দু’জনের ফাঁসির বদলা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকার কথা আসছে কেন? চিঠিটি যে কম্পোজ করেছে, সে কম্পিউটারে ওই কাজ করতে তেমন অভ্যস্ত নয়। চিঠির বাক্যগুলি অবিন্যস্ত ভাবে সাজানো। তাই, হুমকির বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। তবে ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্ন নেই।”
চিঠিটি লেখা হয়েছে আমেরিকান কনসাল জেনারেলের উদ্দেশে। আমেরিকান কনস্যুলেটের ঠিকানা ৫/১ হো চি মিন সরণি। কিন্তু ডাকযোগে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে ৩৮ জওহরলাল নেহরু রোডে আমেরিকান সেন্টারের ঠিকানায়।
কিন্তু চিঠিটি ঠিক কোথা থেকে পাঠানো হয়েছে, সে ব্যাপারে গোয়েন্দারা এখনও অন্ধকারে। তাঁদের বক্তব্য, ডাকঘরের ছাপটি খামের উপর অস্পষ্ট। তবে প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের একাংশের অনুমান, চিঠিটি বাইরের কোথাও থেকে নয়, কলকাতার কোনও জায়গা থেকেই আমেরিকান সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। |