মেট্রোর এসি রেকে যান্ত্রিক গোলযোগ এবং তার জেরে যাত্রীদের ভোগান্তি আর নতুন কিছু নয়। সোমবার ফের একটি এসি রেকে বিভ্রাটের পরে কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ব্লোয়ার ঠিক মতো কাজ না করায় সুড়ঙ্গে হাওয়া কমে যায়। যার জেরে ঠিকমতো কাজ করেনি মেট্রোর বাতানুকূল যন্ত্র, এমনটাই মনে করছেন মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। সব মিলিয়ে মেট্রোর এসি রেক এখন আরামের বদলে দুর্ভোগেরই নামান্তর।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই যে এমন ঘটছে, তা মানছেন রেলেরই একাংশ। আর রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ ভাড়া না বাড়া। এক রেলকর্তার বক্তব্য, “টাকা না থাকলে পরিষেবা দেওয়া যায় না। পরিষেবা দিতে মেট্রোর যা খরচ হয়, তা বর্তমান ভাড়ায় সামাল দেওয়া যায় না।” রেল সূত্রের খবর, এখন ১০০ টাকা আয় করতে মেট্রোর খরচ ৩০০ টাকা। ভর্তুকির বোঝা বাড়ছে। কিন্তু তাতে কত দিন চলবে, সে প্রশ্ন রেলের অন্দরেই। এক মেট্রোকর্তা বলছেন, “এখন কোথাও কোথাও বাসে উঠলেই ছ’টাকা দিতে হচ্ছে। অটোতেও দশ-পনেরো টাকা ভাড়া। কিন্তু মেট্রোর ভাড়া নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।” এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনে মেট্রোর একটি কামরায় এসি বিভ্রাট হয়। যাত্রীরা চেন টেনে ট্রেন থামান। ব্লোয়ারের সমস্যায় হাওয়া কমেই এমন হয় বলে ধারণা মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের। যদিও মেট্রোকর্তাদের বক্তব্য, ট্রেনে ভিড় বাড়ায় এই ঘটনা। মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “রেকে ত্রুটি ছিল না। এক-একটি কামরায় ৩০০ যাত্রীর জায়গায় পাঁচশোরও বেশি যাত্রী ছিলেন। তাই ও রকম হয়েছে।” এবং এসি-বিভ্রাট একটি কামরাতেই হয়েছে বলে প্রত্যুষবাবুর দাবি।
যাত্রীরা বাড়তি ভিড়ের তত্ত্ব মানতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, কোথাও গোলমাল আছেই। নয়তো নিত্য এমন হবে কেন? উদ্বিগ্ন রেল মন্ত্রকও। এ সপ্তাহেই বোর্ডের ইলেট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল বিশেষজ্ঞ এনে পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “কিছু গোলমাল আছে ঠিকই। না হলে বারবার এমন হবে কেন? সেটাই বিশেষজ্ঞরা দেখবেন।” ভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিকতাও মেনে নিয়েছেন তিনি।
গোলমাল যে থাকতেই পারে, তা মানছেন ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, বাইরের এবং কামরার ভিতরের বাতাস টেনে কম্প্রেসারের মধ্যে গ্যাস দিয়ে ঠান্ডা করে ফের ব্লোয়ার চালিয়ে কামরায় ছড়িয়ে দেওয়াই রেকের এসি যন্ত্রের কাজ। যেহেতু কলকাতা মেট্রোর বেশির ভাগ যাত্রাপথই সুড়ঙ্গে, তাই এ ক্ষেত্রে সেখানে বাতাস থাকা জরুরি। সুড়ঙ্গে বাতাসের জোর না থাকলে (যা এখন হয়েছে বলে অনুমান) মেট্রোর এসি যন্ত্র ঠিকমতো কাজ করবে না।
ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, কামরার ছাদে এসি যন্ত্রগুলিতে একটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রক থাকে। ট্রেন সুড়ঙ্গে ঢোকার সময়ে বাতাস কমে যায়। সে ক্ষেত্রে ওই যন্ত্র বাতাস টানার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে কামরাটি একই রকম ঠান্ডা থাকে। এই প্রযুক্তি ঠিক মতো কাজ না করলে এমন বিপত্তি ঘটতে পারে বলেও কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ারের দাবি।
যাত্রীদের অভিযোগ, এ দিন সুড়ঙ্গে ঢুকেই দমদমমুখী ট্রেনটির কামরায় ঠান্ডা কমতে থাকে। রবীন্দ্র সরোবরে কামরায় রীতিমতো দমবন্ধ-করা পরিবেশ। সেখান থেকে ট্রেন ছাড়তেই যাত্রীদের কয়েক জন চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে চেঁচামেচি শুরু করেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাঁরা যাত্রীদের নেমে যেতে বলেন। যাত্রীরা নামতে না চাওয়ায় কর্তৃপক্ষ কোনও রকমে মেরামত করে ট্রেনটি চালাতে বাধ্য হন। সব মিলিয়ে ট্রেনটি ওই স্টেশনে আটকে থাকে প্রায় ৩০ মিনিট। দেরিতে চলে পিছনের ট্রেনগুলিও। ফলে সপ্তাহের প্রথম দিনেই অফিসটাইমে যাত্রীরা নাজেহাল হন।
কলকাতা মেট্রোয় এখনও ১১টি পুরনো রেক চলছে। মেট্রো সূত্রে খবর, বাতানুকূল রেক আস্তে আস্তে আসছে। পুরনো রেকগুলিও বাতিল করা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দু’টি বাতিল করা হয়েছে। বাকিগুলিও বাতিল হবে। মেট্রোকর্তাদের কথা মতো আর চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই সব ক’টি মেট্রোই বাতানুকূল হয়ে যাবে। তখন গোলমাল কমবে বলে মেট্রোর আশা। |