কর্পোরেট তকমার তাগিদে জুতো পালিশ যন্ত্র মহাকরণে
সারদা গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজ্য জুড়ে হুলস্থুল। সেই সময়েই রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর মহাকরণ সরগরম জুতা-কাহিনি নিয়ে! ঠিক ঠিক বললে জুতা-কাহিনি নয়, জুতো পালিশ কাহিনি।
দু’বছর পূর্তির ঠিক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের নতুন উপহার জুতো পালিশের যন্ত্র। বুট থেকে চামড়ার চটি ওই যন্ত্রে সবই চকচকে করে নিতে পারবেন মহাকরণের সরকারি কর্মীরা। এবং নিখরচায়।
বড় হোটেলে জুতো পালিশের যন্ত্র থাকে। সোমবার মহাকরণের অলিন্দে সেই ধরনের যন্ত্র দেখে সরকারি কর্মীদের অনেকেই অবাক হয়ে যান। মহাকরণের দুই ও চার নম্বর ব্লকে দু’টি যন্ত্র বসানো মাত্রই সরকারি কর্মী আর কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের ভিড় জমে যায়। কী ভাবে ওই যন্ত্রে জুতো ঢুকিয়ে পালিশ করিয়ে নেওয়া যায়, সেই কায়দাটা দেখে নিতে ব্যস্ত সকলেই।
কিন্তু মহাকরণে হঠাৎ জুতো পালিশের যন্ত্রের কী দরকার পড়ল?
নতুন যন্ত্রে চলছে জুতো পালিশ। মহাকরণে সোমবার। —নিজস্ব চিত্র
মহাকরণে ‘কর্পোরেট’ পরিবেশ সৃষ্টির তাগিদেই এই উদ্যোগ বলে পূর্ত দফতর সূত্রের খবর। এর আগে মহাকরণে কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে কর্মসংস্কৃতি কতটা ফিরেছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অন্তত ধর্মঘটের দিনে লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে সরকারি কর্মীদের হাজিরা। পূর্ত দফতরের এক কর্তার কথায়, “শৌচাগার দিয়ে যেমন গোটা বাড়ির পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়, তেমনই এক জন ব্যক্তির জুতো দিয়ে তাঁকে চেনা যায়।” ওই কর্তার বক্তব্য, মহাকরণের অনেক কর্মীই দূরদূরান্ত থেকে আসেন। আসার পথে জুতো নোংরা হয়ে যায়। অনেকে তাড়াহুড়োয় জুতো পরিষ্কার করার সময়ও পান না। তাঁরা কাজের মধ্যে কোনও এক ফাঁকে নিজের জুতো পরিষ্কার করিয়ে নিতে পারবেন। এটাই যন্ত্র বসানোর প্রধান উদ্দেশ্য।
এই টীকা শুনে এক আইএএস অফিসারের সহাস্য মন্তব্য, “অনেক সময়েই তো আমরা পাঁচতারা হোটেলে কনফারেন্সে গিয়ে এ ভাবেই চট করে জুতো পালিশ করে নিই। এ বার অফিসেও তা হলে মন্দ কী!”
মহাকরণে জুতো পালিশের যন্ত্র আসার প্রেক্ষাপটটিও চমকপ্রদ। বছরখানেক আগে দিল্লির বঙ্গভবনে জুতো পালিশের যন্ত্র বসানো হয়। পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “দিল্লির বঙ্গভবনে কিছু দিন অন্তরই বিছানার চাদর ফেলে দিতে হত। তদন্তে দেখা যায়, অনেক অতিথিই ঘর ছাড়ার আগে বিছানার চাদর দিয়ে জুতো পরিষ্কার করে নিয়েছেন। তাতে চাদর নষ্ট হয়ে যেত। তার পরেই বঙ্গভবনে জুতো পালিশের দু’টি যন্ত্র বসানো হয়। ফলও মিলেছে। তার পরেই মহাকরণের কথা মাথায় আসে।”
কিন্তু বিশাল মহাকরণে চাহিদা মেটাতে কত যন্ত্র বসানো হবে? পূর্ত দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার-১ (সিটি ডিভিশন) কনকেন্দু সিংহ জানান, প্রাথমিক ভাবে দু’টি যন্ত্র বসানো হয়েছে। মহাকরণে এই ধরনের ১২টি যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সার্কিট হাউসেও দু’টি যন্ত্র বসবে। যন্ত্র আনা হচ্ছে দিল্লি থেকে। প্রতিটির দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
প্রথম দিন যন্ত্র বসার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় জমে যায়। লাইন দিয়ে কর্মীরা জুতো পালিশ করতে শুরু করেন। কিন্তু পালিশ-যন্ত্রে এ দিন কালি ছিল না। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভিড় ফিকে হয়ে আসে। তার মধ্যেই অনেক কর্মীর প্রশ্ন, যন্ত্র বসালেই কি মহাকরণে কর্পোরেট পরিবেশ আসবে? মহাকরণের ভিতরের যা হাল, তা কি কর্পোরেট পরিবেশের পক্ষে সত্যিই অনুকূল? ছাতা পড়া দেওয়ালে যত্রতত্র পোস্টার সাঁটা, বটের ঝুরির মতো বিদ্যুতের লাইন। শৌচাগারগুলির অবস্থা তো কহতব্য নয়! সেগুলোর হাল না-ফিরিয়ে জুতো পালিশ যন্ত্র কেন, সেই প্রশ্ন শোনা গিয়েছে কর্মীদের মধ্যেই।
শোনা গেল বিদ্রুপ মেশানো আক্ষেপও। এক সরকারি কর্মী বললেন, “ডিএ (মহার্ঘ ভাতা) দেওয়ার নাম নেই। জুতো পালিশের যন্ত্র বসিয়ে টাকা ওড়ানো হচ্ছে!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.