আন্ত্রিকের পরে এ বার পুরুলিয়া শহরে ডন্ডিসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। সরকারি হিসেবেই অসুস্থ অন্তত ৭০ জন। কিন্তু চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে আরও অনেক আন্ত্রিকের রোগী চিকিৎসা করাচ্ছেন। সেই হিসেব ধরলে অসুস্থের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। জন্ডিসে অসুস্থ হয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন পুরপ্রধানও।
১০, ১২, ২২, ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু বাসিন্দা জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অভিজিৎ শীল বলেন, “বাড়িতে মা, স্ত্রী ও আমার বছর তিনেকের ছেলের জন্ডিস ধরা পড়েছে। দুবর্লতা, খাবারে অরুচি ও হলুদ রঙের প্রস্রাব হওয়ায় পরীক্ষা করে জানা যায়, ওদের জন্ডিস হয়েছে। জলের গোলমালেই এই রোগ হয়।” ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রাক্তন পুরপ্রধান বিনায়ক ভট্টচার্য বলেন, “আমিও জন্ডিসে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এটা জলবাহিত রোগ। পুরকর্তৃপক্ষের অবিলম্বে এই এলাকা ও পাশ্ববর্তী এলাকার প্রতিটি ট্যাপকলের জল পরীক্ষা করা উচিত।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন কুমার ঝরিয়াত বলেন, “কিছুদিন আগে শহরের যে যে ওয়ার্ডগুলিতে আন্ত্রিক ছড়িয়েছিল সেই এলাকাগুলি থেকেই জন্ডিস সংক্রমণের খবর মিলছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ৭০ জন জন্ডিস রোগীর চিকিৎসা চলছে। পুরকর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছি।” তাঁর পরামর্শ, সংক্রমণ ঠেকাতে খাওয়ার আগে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে, জল ফুটিয়ে খেতে হবে, বাসনপত্রও ভাল জলে ধুতে হবে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিভাস দাসের অভিযোগ, আন্ত্রিকের পরেই জন্ডিস হল, অথচ পুরকর্তৃপক্ষের এ সবে হুঁশ নেই।” পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কিছু জায়গায় জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি। কোনও ক্ষতিকর নমুনা মেলেনি। ফের পরীক্ষা করা হবে।” পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাস্তুকার পঞ্চানন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছি। তাঁরা একাধিক জায়গায় জলের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এখনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।”
জন্ডিস ছড়িয়েছে মানবাজারেও। স্থানীয় রজকপাড়া ও মাঝপাড়ার বেশ কিছু বাসিন্দা কিছু দিন ধরে জন্ডিসে ভুগছেন। মানবাজারের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজিৎ সিং হাঁসদা বলেন, “দু’টি পাড়া মিলিয়ে ২০ জন জন্ডিসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে।” বাসিন্দাদের একাংশের মতে, ওই দুই পাড়ার কাছে জল সরবরাহের পাইপ ফুটো হয়ে গিয়ে দূষিত নর্দমার জল মিশেও এই বিপত্তি ঘটে থাকতে পারে। মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, “দূষিত জল থেকেই এই রোগ ছড়াচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্মীরা বৃহস্পতিবার এলাকার জল সরবরাহ ব্যবস্থা দেখে গিয়েছেন। অবিলম্বে পাইপ মেরামতির কাজ শুরু হবে।” |