রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের (কম্পোনেন্ট সেপারেশন) কোনও ব্যবস্থাই নেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এর ফলে এক ইউনিট রক্তই এক জন রোগীকে দিতে হয়, তিন-চার জনকে দেওয়া যায় না। অথচ তীব্র গরমে প্রতি বারই হাসপাতালে রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। এক ইউনিট রক্তের জন্য হাহাকার পড়ে যায়। রক্তের উপাদান উপাদান আলাদা করার ব্যবস্থা থাকলে সঙ্কট কিছুটা হলেও কমত।
কয়েক বছর আগে মেদিনীপুর মেডিক্যালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা চালুর তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতিও মেলে। কিছু যন্ত্রপাতি আসে। তবে ব্যবস্থা চালু করা যায়নি। হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “প্রায় ৫০ শতাংশ যন্ত্রপাতি আগেই এসে গিয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ শীঘ্রই পৌঁছবে। তারপরই ওই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।” মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধদন বটব্যালেরও আশ্বাস, “যত দ্রুত সম্ভব এই ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা চলছে।”
সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক, এসএসকেএম, এনআরএস, মেডিক্যাল কলেজ-সহ কলকাতার একাধিক হাসপাতালে এই বন্দোবস্ত রয়েছে। জেলার ক্ষেত্রেও বাঁকুড়া মেডিক্যাল, বর্ধমান মেডিক্যাল ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রক্তের উপাদান আলাদা করা হয়। তবে সামগ্রিক বিচারে এই ব্যবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ যথেষ্টই পিছিয়ে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সারা দেশে রক্তের উপাদান আলাদা করার হার যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ, সেখানে এ রাজ্যে এই হার মাত্র ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ, এ রাজ্যে ১০০ ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হলে তার মধ্যে ২৯ ইউনিটের উপাদান পৃথকীকরণ করা হয়। বাকি ৭১ ইউনিটের ক্ষেত্রে হয় না।
উপাদান পৃথকীকরণ ঠিক কী? স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, কোনও ব্যক্তির রক্তদানের ফলে যে পরিমাণ রক্ত সংগৃহীত হয়, তার পুরোটা অধিকাংশ রোগীরই লাগে না। কারও ক্ষেত্রে প্যাটসেল, কারও প্লেটলেট, কারও বা প্লাজমা প্রয়োজন হয়। উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা থাকলে যার যা উপাদান প্রয়োজন, তাকে সেটাই দেওয়া যায়। ফলে, এক ইউনিট রক্ত তিন- চার জন রোগীকে দেওয়া সম্ভব হয়। রক্তের সঙ্কটের সময় এই ব্যবস্থা অত্যন্ত উপযোগী। ক’বছর ধরেই রাজ্যে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছে ন্যাকো (ন্যাশনাল এডস্ কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন)। বার্তা পৌঁছচ্ছে স্যাক্সের কাছে (স্টেট এডস্ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি)। তা-ও পৃথকীকরণের হার সে ভাবে বাড়ছে না বলেই বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে মূলত দু’টি সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, দক্ষ কর্মীর অভাব। দ্বিতীয়ত, যন্ত্রপাতির অভাব। ন্যাকোর বরাদ্দ অর্থেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা। কিন্তু যন্ত্রপাতির অভাবে তা এখনও চালু করা যায়নি।
এ জন্য সমস্যা হচ্ছিল আরও একটি ক্ষেত্রে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালুর অনুমতি মিলেছে। আপাতত ৯টি বিষয় পড়ানো হবে। জানা গিয়েছে, এই কোর্স চালুর বিষয়টিও আটকে যাচ্ছিল হাসপাতালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা না থাকায়। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালুর আবেদন জানানো হয়। এপ্রিলে পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা। তখনই তাঁরা জানিয়েছিলেন, হাসপাতালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। না হলে ওই কোর্স চালুর অনুমতি পেতে সমস্যা হবে। জানা গিয়েছে, উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা শীঘ্রই চালু হবে, বেশ কিছু যন্ত্রপাতিও চলে এসেছে— লিখিত ভাবে এ কথা জানানোর পরই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সের অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। |