উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ভুল চিকিৎসায় এক শিশুর বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিউ জলপাইগুড়ির অম্বিকানগর এলাকার ওই শিশুর নাম রূপম রায়। তাঁর বাবা রঞ্জিতবাবু অভিযোগ করেন, বাঁশের কঞ্চির আঘাত লেগে রূপমের চোখে ক্ষত হয়। তা নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলে পর পর দুইবার অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু, চোখের ভেতরে থাকা একটি কাঠি না বের করেই তা সেলাই করে দেওয়া হয়। ফের চোখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করলে রূপমকে নেপালের বিরাটনগর চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে ওই কাঠি বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু, সংক্রমণ হওয়াতে ওই চোখ কেটে বাদ দিতে হয়।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত সুপার অমরনাথ সরকার জানান, ওই ব্যপারে তারা একটি অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, “ঠিক কী ঘটনা হয়েছিল তা চক্ষু বিভাগের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তা জানার পরই প্রয়োজনীয় বব্যস্থা নেওয়া হবে।” শিশুর বাবা রঞ্জিতবাবু বলেন, “বিরাটনগরের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ভুল চিকিৎসার জন্য ওই চোখে সংক্রমণ হয়ে যায়। তা কেটে বাদ না দিলে আরেকটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তার ফলে তা বাদ দিতে হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের উপর খুব ভরসা করেছিলাম। কিন্তু, তারা যে এভাবে শিশু চোখ নষ্ট করে দেবে বুঝতে পারিনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বাবস্থা নিতে হবে।”
পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রূপমের চোখে একটি বাঁশের কঞ্চির আঘাত লাগে। সে সময় চোখ দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করলে তাঁকে চিকিৎসক দেখানো হয়। পরে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’দফায় ওই চোখে অস্ত্রোপচার করেন মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসকরা। প্রথমবার ৪ জানুয়ারি অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে ১০ জানুয়ারি ফের ওই চোখেই অস্ত্রোপচার করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরেও বাঁশের কঞ্চির ছোট্ট একটি টুকরো ভেতরে থেকে যাওয়া অবস্থাতেই তা সেলাই করে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। রূপমের মা রূম্পা দেবী জানান, মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার পরও চোখ ভাল না হওয়ায় তাঁকে নেপালের বীরতা মোড়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরেও ভাল না হওয়ায় নেপালের বিরাটনগরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান আত্মীয়রা। সেখানে অস্ত্রোপচার করে চোখ থেকে বাঁশের কঞ্চির টুকরো বের করেন চিকিৎসকরা। ওই চোখে সংক্রমণ হয়ে যাওয়ায় তা কেটে বাদ দিতে হয়।
দার্জিলিং জেলার একটি আইনি সহায়তা প্রদান সংস্থার পক্ষ থেকেও মেডিক্যাল কলেজের সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ওই ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই সংগঠনের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, “ঘটনা থেকেই স্পষ্ট উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ওই শিশুর সঠিক চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসকরা ভুল অস্ত্রোপচার করেছেন। কারা কারা অস্ত্রোপচারের সময় দায়িত্ব ছিলেন সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশেও আমরা অভিযোগ জানাব।” |