১২টার ঘরে ঘড়ির কাঁটা। শতাধিক রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য ভিড় করে দাঁড়িয়ে। মেডিসিন, অস্থি, প্রসূতি, নাক-কান-গলা-চোখ বিভাগে চিকিৎসক নেই। একমাত্র চিকিৎসক শিশু বিভাগ সামলাতে ব্যস্ত। শুক্রবার রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ছবি।
চিকিৎসা করাতে এসে এত দিন রোগীরা ওই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। স্বাস্থ্যকর্তারা তা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এ দিন রোগীকল্যাণ কমিটি নিয়ন্ত্রিত মনিটরিং কমিটির তিন জনের এক প্রতিনিধি দল আচমকা হাসপাতালে ঢুকে ওই দৃশ্য নিজের চোখে দেখে হতবাক। তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে সহকারি সুপার-সহ বেশ কয়েক জন চিকিৎসককে সতর্ক করেন। মনিটরিং কমিটির সদস্য তৃণমূল নেতা দিলীপ দাস বলেন, “চিকিৎসার জন্য রোগীরা হাসপাতালে ভিড় করে থাকেন। অথচ চিকিৎসকের দেখা মেলে না। এমন অভিযোগ আগে শুনেছি। কিন্তু বিশ্বাস হয়নি। আজ নিজে দেখলাম। এ ভাবে চলতে পারে না। চিকিৎসকদের সতর্ক করা হয়েছে। এর পরেও যদি একই ঘটনা ঘটে তবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মনিটরিং কমিটির প্রতিনিধি দলে ছিলেন চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ-র রায়গঞ্জ শাখা সম্পাদক অনুপম সাহা ও রায়গঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রণজকুমার দাস।
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী পরিষেবার অব্যবস্থা নিয়ে কিছু জানাতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আগামী ৬ মে সমিতির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরে যা বলার বলব।” সুপার অরবিন্দ তান্ত্রি বলেন, “চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চলছে। সমস্ত চিকিৎসকদের সঠিক সময়ে বহির্বিভাগে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ পাঠানো হবে। ওয়ার্ডে পরিষেবার ক্ষেত্রেও যেন সমস্যা না হয় সেটা দেখতে বলা হবে।”
শুক্রবার দুপুরে কমিটির সদস্যরা প্রথমে বহির্বিভাগে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন রোগীরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু চিকিৎসক নেই। পরিস্থিতি দেখে কমিটির সদস্যরা রোগীদের কাছে জানতে চান এ ভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন। রোগীরা জানান, কয়েক ঘন্টা হয়েছে। চিকিৎসক আসবেন কিনা সেটাও কেউ জানাচ্ছেন না। পেটের রোগ চিকিৎসার জন্য লাইনে দাঁড়ানো রামপুর এলাকার বাসিন্দা স্বপন বসাক বলতে থাকেন, “প্রতি দিন ফিরে যেতে হচ্ছে।” একই অভিযোগ ছত্রপুর এলাকার বাসিন্দা মালা সরকারের। এর পরে মনিটরিং কমিটির সদস্যরা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যান। রোগীদের একাংশ চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে সময় মতো না আসার অভিযোগ জানান।
অস্বস্তিতে মুখে পড়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হাসপাতালের সহকারী সুপার গৌতম দাসকে ডেকে জানতে চান, সাড়ে ৯টার মধ্যে চিকিৎসকদের বহির্বিভাগে হাজির হওয়ার সরকারি নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে নেই কেন! তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। এর পরে কমিটির সদস্য দিলীপ দাস সহকারি সুপারকে সতর্ক করে বলেন, “ঠিক মতো কাজ করুন। পরিষেবার যেন ঘাটতি না থাকে সেটা দেখুন।” সাড়ে তিনশো শয্যার রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ৩৮ চিকিৎসক, ১০৩ নার্স ও ৬২ স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। |