লগ্নি সংস্থা নিয়ে পরপর চিঠি, সাড়াই দেয়নি রাজ্য
কটি-দু’টি নয়, সাত মাসের ব্যবধানে পরপর চারটি চিঠি এসেছিল দিল্লি থেকে। লগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কার্যকলাপের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে চিঠি দিয়েছিল রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে, যে দফতরের দায়িত্ব খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে।
প্রথম চিঠিতেই দ্রুত জবাব দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে চিঠির কোন জবাবই দেয়নি রাজ্য! পরের তিনটি চিঠিরও না!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এ বছর পয়লা বৈশাখের আগে তিনি বা তাঁর সরকার এই রাজ্যে লগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কাজকর্মের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। কিন্তু সরকারি নথি বলছে, ২০১১ সালের অগস্ট মাস থেকে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে মোট চারটি চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তত দিনে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বয়স তিন মাস পেরিয়ে গিয়েছে। মমতার দল তখন কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের শরিকও। রাজ্যকে কেন্দ্রের তরফে এটাও বলা হয়েছিল, স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব এই ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়েছেন। তাঁকে এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে এই বিষয়ে অবগত করতে হবে বলে রাজ্যকে পর পর দেওয়া চিঠিতে জানিয়েছিল দিল্লি।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, লগ্নি সংস্থাগুলির অসাধু কার্যকলাপ সম্পর্কে কেন্দ্রের দেওয়া চিঠিগুলিকে রাজ্য আমলই দেয়নি। এমনকী ওই সব চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কারণ, সবুজ সঙ্কেত মেলেনি মহাকরণের শীর্ষ স্তর থেকে। তারা যে বার বার চিঠি দিয়েও সাড়া পাচ্ছে না, সেটাও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে মনে করিয়ে চিঠি আসে দিল্লি থেকে। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি!
রাজ্যে তৃণমূলের সরকার শপথ নেয় ২০১১-র ২০ মে। আর এই রাজ্যে লগ্নি সংস্থাগুলির অসাধু কার্যকলাপের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যকে প্রথম চিঠি দেয় সে বছরের ২৫ অগস্ট। চিঠির নম্বর: ১৫০১২/০৮/২০১১-সিএসআর.III। চিঠিটি দেন মন্ত্রকের যুগ্মসচিব কে কে পাঠক। এর পর মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি কে মুরলীধরণ প্রায় দু’মাস পরে, ২০ অক্টোবর ফের একই বিষয়ে চিঠি দেন। তাতেও রাজ্যের তরফে কোনও সাড়াশব্দ না-মেলায় যুগ্মসচিব কে কে পাঠক ১৬ ডিসেম্বর ফের চিঠি দেন এবং সেখানে ২৫ অগস্টের প্রথম চিঠি ও ২০ অক্টোবরের ‘রিমাইন্ডার’-এর কথা উল্লেখ করা হয়। লগ্নি সংস্থাগুলির অসাধু কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রাজ্যকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি।
২০১২-র ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্যকে একই বিষয়ে ফের চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তত দিনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই যুগ্মসচিব বদলে গিয়েছেন। কে কে পাঠকের জায়গায় এসেছেন সুরেশ কুমার। তিনিই গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই চিঠি দিয়েছিলেন। সুরেশ কুমারের চিঠিতে রাজ্যকে ২০১১-র ২৫ অগস্ট থেকে লগ্নি সংস্থাগুলির বিষয়ে মন্ত্রকের পাঠানো চিঠিগুলির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও কিন্তু রাজ্যের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি।
রাজ্যকে যখন কেন্দ্রের তরফে ওই সমস্ত চিঠি পাঠানো হয়, তখন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম। বর্তমানে তিনি রাজ্যের তথ্য কমিশনার। এই নিয়ে গৌতমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কেন্দ্রের তরফে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও রাজ্য চুপ করে থাকল কেন? রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের সাংসদ, কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী ২০১১-র ৪ এবং ১৯ অগস্ট চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি লগ্নি সংস্থার অসাধু কার্যকলাপ ও তাদের হাতে বহু সাধারণ মানুষের প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে মূল অভিযোগ ছিল সারদা সংস্থার বিরুদ্ধে। কংগ্রেস সাংসদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়। মহাকরণের ওই কর্তার কথায়, “২০১২-র ১৫ মার্চ কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে আর একটি চিঠি দিয়ে সারদা সংস্থার বিরুদ্ধে তাঁর তোলা যাবতীয় অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। তাই, যে-চিঠির অভিযোগের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল, সেই অভিযোগই তো উঠিয়ে নেওয়া হল!”
কিন্তু সে তো মার্চ মাসের কথা। তার আগে ২০১২-র ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কেন্দ্র বার বার রিপোর্ট চেয়ে পাঠালেও রাজ্য সাড়া দিল না কেন?
ওই কর্তার কথায়, “সরকারের উপর মহল থেকে আমাদের এই ব্যাপারে নড়াচড়া করতে বারণ করা হয়েছিল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.