|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
একাধারে ব্যক্তিগত, নৈর্ব্যক্তিক |
আশিস পাঠক |
সেটা সঞ্চয়িতা-রও আগের যুগ। কবিতাকে এক রকম ছুটি দিয়েছে বাঙালি। তা কতটা ঝলসানো রুটির তাগিদে আর কতটা কবিতাকে ‘অবাঞ্ছিত জঞ্জাল’ ভেবে সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু তখনও কবি রবীন্দ্রনাথ বাঙালির আদর করে শিকেয় তুলে রাখা গর্ব, কবিতাকে দৈনন্দিনে পৌঁছে দিতে পারেননি তিনিও। কবিতা সম্পর্কে সেই অবজ্ঞা প্রকাশ পায় বিভিন্ন সাময়িকপত্রে, কথাসাহিত্যের উচ্ছিষ্ট জায়গায় ঠাঁই হয় তার।
প্রায় আট দশক আগে, ১৯৩৫-এ সেই অবজ্ঞার সময়েই একটি নতুন পত্রিকা প্রকাশিত হল। কী দুঃসাহস, তার নাম ‘কবিতা’। সে পত্রিকা শুধু কবিতার জন্য। যুগ্ম-সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু ও প্রেমেন্দ্র মিত্র। সহকারী সম্পাদক সমর সেন। কারও বয়স ৩৫ পেরোয়নি, বিদ্রোহ তখনই সাজে। কিন্তু যেটা লক্ষ করার তা হল, বিপ্লবস্পন্দিত বুকে শুরু হয়ে অচিরেই ফুরিয়ে যায়নি সে প্রয়াস। সিকি-শতক জুড়ে দাপটের সঙ্গে চলেছে সে পত্রিকা, বাংলা কবিতার সাযুজ্য ঘটিয়েছে আন্তর্জাতিকতার সঙ্গে এবং রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা কবিতার ইতিহাসের প্রায় আট আনারই ধারক হয়ে আছে।
সত্যই আছে কি? বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আছে, দু’একটি বিশেষ সংখ্যার পুনঃপ্রকাশে আছে এবং কয়েকটি সংকলনেও আছে। কিন্তু যদি কালানুক্রমে কবিতা পড়তে চান কেউ? না, কোনও একটি সহজলভ্য সংগ্রহে নেই পত্রিকার সব সংখ্যা। সেই অভাব কিছুটা হলেও মিটবে আজ সন্ধেয় বৈতানিক সভাঘরে। বুদ্ধদেব বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী, তাঁর গদ্যগঠনের একনিষ্ঠ অনুসারী অশোক মিত্র বেশ কিছু কাল ধরে সংকলন ও সম্পাদনা করছিলেন যে বইটির সেই ‘কবিতা’ থেকে কবিতা (বিকল্প, ৩৫০.০০) প্রকাশিত হবে সেখানে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শহীদ কাদরি— কবির জন্মবছরের অনুক্রমে সংকলিত কবিতাগুলি থেকে রবীন্দ্রনাথ ও উত্তরসাধকদের কবিতার একটা নির্ভরযোগ্য পরিচয় এ সংকলন।
নির্ভরযোগ্য, তবে ব্যক্তিগতও। সম্পাদকের বিচারে ‘আকর্ষণীয়’ কবিতা ঠাঁই পেয়েছে এ সংকলনে, ‘যাঁদেরই রচনা হোক না কেন’। আবার অন্য ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত উজ্জ্বল চরিত্রাবলির দু’একটি কবিতাও বেছে বেছে সংকলিত। অর্থাৎ একই সঙ্গে ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক দুই বিচারই সম্পাদক করেছেন। স্ববিরোধ? তা হোক, নির্বাচন ও ভূমিকা দুইয়ে মিলে সম্পাদকের বহুবর্ণ ব্যক্তিত্ব এ বইয়ের পাতায় পাতায়। |
|
|
|
|
|