|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে |
হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রবীন্দ্রকথা-র (সম্পা: অনির্বাণ রায়। অলকানন্দা পাবলিশার্স, ৩০০.০০) লেখক খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে ভূমিকা-য় লিখেছেন ‘গ্রন্থকার রবীন্দ্রনাথের নিকট আত্মীয়। তাঁহার মাতৃদেবী রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুরের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা মহারাজ রমানাথ ঠাকুরের দৌহিত্রী এবং তাঁহার প্রপিতামহ মদনমোহন চট্টোপাধ্যায় দ্বারকানাথ ঠাকুরের সহোদরা ভগ্নি রাসবিলাসী দেবীর পুত্র। কিন্তু রক্তসম্বন্ধ ছাড়া রবীন্দ্রের সহিত গ্রন্থকারের প্রতিবেশী-সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর। যাহাকে ‘এক চালায় ঘর করা’ বলে অনেক বৎসর উভয়ের মধ্যে সে সম্বন্ধ ঘনিষ্ঠ ছিল।’ ১৩৪৮-এ প্রথম প্রকাশের পর সম্প্রতি আবার বেরল বইটি। ‘বইটিতে শুধু রবীন্দ্র জীবন নয়, উনিশ শতকের বাংলা তথা কলকাতার ইতিহাস নিয়েও চর্চা হয়েছে।’— জানানো হয়েছে এ সংস্করণের নিবেদনে। ‘উত্তরলেখ’-এ সম্পাদক খগেন্দ্রনাথের রচনার যাথার্থ্য আলোচনার সঙ্গে তাঁর মৃত্যুর কারণে যে পরিশিষ্টটি প্রকাশিত হতে পারেনি, সেটি যথাসম্ভব পরিপূরণের চেষ্টা করেছেন। গ্রন্থপরিচয়, তথ্যপঞ্জি, রবীন্দ্র-গ্রন্থপঞ্জিও সবিস্তারে পাবেন পাঠক।
রবীন্দ্রনাথ বিশ্বপথিক হিসেবে দেশে দেশে ভ্রমণ করে খ্যাত-অখ্যাত বহু বিদেশির সান্নিধ্যে এসেছেন, সেই সান্নিধ্যলাভে পরস্পর প্রাণিতও হয়েছেন। এই পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেছেন, এবং আলোচনা করেছেন অনালোচিত নানা বিতর্কিত বিষয়ে প্রবীরকুমার দেবনাথ, তাঁর রবীন্দ্রনাথ ও বিদেশী-তে (পরম্পরা, ২৭৫.০০)। শুরুতেই লেখক জানাচ্ছেন ‘এই গ্রন্থে... প্রধানত নির্বাচিত ব্যক্তিদেরই অন্তর্ভুক্ত করেছি, রবীন্দ্রনাথের প্রামাণ্য জীবনকথায় যাঁদের বিশেষ উল্লেখযোগ্যতা আছে।’
সুভাষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ঐতিহ্য আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ-এর (আনন্দ, ২৫০.০০) অবতরণিকা-য় জানিয়েছেন ‘রবীন্দ্রনাথের বৈচিত্র্যময় সুবিশাল রচনাসম্ভার-এর মধ্য থেকে লোকসাহিত্য, প্রাচীন সাহিত্য, বিচিত্র প্রবন্ধ, সাহিত্যের পথে, সাহিত্যের স্বরূপ, পঞ্চভূত প্রভৃতি গ্রন্থগুলি বেছে নিয়ে তাঁর আধুনিকতা সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তাকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি।’ সুভাষবাবু তাঁর এই চেষ্টার ভিতরে কবির এই ছড়া বিশ্লেষণ নিয়ে বেশ স্পষ্ট করেই লিখেছেন, ‘সেটি একান্তভাবে আধুনিক সাহিত্যের নিরিখে, সেই বিচারবিশ্লেষণ পদ্ধতি বাংলা সাহিত্যে ওই যুগে দেখা দিয়েছিল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরেই।’ যেমন ... ‘গুণবতী ভাই আমার মন কেমন করে’ ছড়াটি সম্পর্কে কবির বিশ্লেষণ: ‘এই অন্তর্ব্যথা, এই রুদ্ধ সঞ্চিত অশ্রুজলোচ্ছ্বাস কোন কালে কোন গোপন গৃহকোণ হইতে, কোন অজ্ঞাত বিস্মৃত নববধূর কোমল হৃদয়খানি বিদীর্ণ করিয়া বাহির হইয়াছিল! এমন কত অসহ্য কষ্ট জগতে কোন চিহ্ন না রাখিয়া অদৃশ্য দীর্ঘনিশ্বাসের মতো বায়ুস্রোতে বিলীন হইয়াছে। এটি কেমন করিয়া দৈবক্রমে একটি শ্লোকের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া গিয়াছে।— ও পারেতে কালো রঙ, বৃষ্টি পড়ে ঝম্ ঝম্।’
নটরাজ দক্ষিণ ভারতীয় শৈব সম্প্রদায়ের আরাধ্য, রবীন্দ্রনাথ শিল্পবোধের প্রয়োজনেই তাঁকে তাঁর সাহিত্য-শিল্পের অধিদেবতা করে তুলেছিলেন। এ বিষয়ে কবিতা চন্দের কবিচেতনায় নৃত্য ও নটরাজ (প্যাপিরাস, ১৫০.০০) বইটি উল্লেখ্য। ‘প্রাক্-কথা’য় জানিয়েছেন কবিতা: ‘অধুনা বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে রবীন্দ্রনাথের নটরাজ-ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সাহিত্যে উল্লিখিত ‘নৃত্য’ সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কী ভাবে রবীন্দ্রচেতনায় এসে তাঁর নটরাজমূর্তিকে প্রাণ দিয়েছে, এবং রবীন্দ্রনৃত্য নামক একটি শিল্পের আবির্ভাবের পরিবেশ রচনা করে দিয়েছে, তা তাঁদের খোঁজে ছিল না। আমরা ...সেইটি খোঁজার চেষ্টাই করেছি মাত্র।’
পিনাকী ভাদুড়ী তাঁর রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে পূর্বসূরি ও সমকালীন সাহিত্যিকেরা (অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স, ১৭৫.০০) বইয়ে আলোচনা করেছেন সাহিত্য ও অন্যান্য কর্মে বিশিষ্ট জনেদের, রামমোহন থেকে অতুলপ্রসাদ বাদ পড়েননি কেউই। প্রথম দু’টি অধ্যায়েই পূর্বকাল ও সমকাল নিয়ে কবির ভাবনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পিনাকীবাবু। |
|
|
|
|
|