কংগ্রেস ইউনিয়নের ভোট কেটেই ‘মুখরক্ষা’ করল তৃণমূল কংগ্রেস।
রেলকর্মী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনে দক্ষিণ পূর্ব রেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া থেকে কোনও মতে রক্ষা পেয়েছে প্রথম বার নির্বাচনে অংশ নেওয়া তৃণমূল। পরিসংখ্যান বলছে, এই জোনের আদ্রা, খড়্গপুর,রাঁচি ও চক্রধরপুর ডিভিশন এবং জোনের সদর দফতর গার্ডেনরিচ মিলিয়ে মোট ৫.২৮ শতাংশ ভোট পেয়ছে তৃণমূল প্রভাবিত ‘সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে মেন্স তৃণমূল কংগ্রেস’। এতে রেলকর্মী সংগঠন হিসাবে মান্যতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের ধারেকাছে পৌঁছতে না পারলেও জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া থেকে কোনও মতে বেঁচেছে তারা।
ফল প্রকাশের পরে কংগ্রেস প্রভাবিত ইউনিয়নের পর্যালোচনায় উঠে আসছে তাদেরই ভোট কেটে তৃণমূলের ‘মুখরক্ষার’ বিষয়টি। মেন্স কংগ্রেসের দক্ষিণ-পূর্ব জোনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দে বলছেন, “তৃণমূলের নাম নিয়ে যে সংগঠনটি নির্বাচনে নেমেছিল, তাদের উদ্দেশ্যই ছিল আমাদের ভোট কেটে বামপন্থী সংগঠনকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। ওরা আমাদের কিছু ভোট না কাটলে দক্ষিণ-পূর্ব জোনে আরও বেশি ব্যবধানে শীর্ষে থাকতাম আমরা।”
ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডে থাকা রাঁচি ডিভিশনে তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ৮২ টি ভোট। ওই এলাকারই চক্রধরপুর ডিভিশনে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ১৩৮টি। আদ্রা ডিভিশনেরও বড় অংশ রয়েছে ঝাড়খণ্ডে। আদ্রাতে তাদের প্রাপ্ত ভোট ৪১৯। বস্তুত, এ রাজ্যের শাসক দলের এই সংগঠনটিকে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর ডিভিশন। সেখানে ‘ওপেনলাইন’ ও ‘ওয়ার্কশপ’-এ তৃণমূলের মিলিত ভোট ১৯৮৮। কলকাতায় থাকা জোনের সদর দফতর গার্ডেনরিচে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৮১৬টি।
রাজ্যে সংগঠন না থাকা বিজেপি প্রভাবিত ডিপিআরএমএস তৃণমূলের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। মেন্স কংগ্রেসের নেতা সুব্রতবাবু বলেন “তৃণমূলের ওই সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে বিভিন্ন ডিভিশনে যাঁদের সামনে এনেছিলেন, তাঁরা আগেই রেলকর্মীদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। ফলে এই ফল প্রত্যাশিতই ছিল।” ঘটনা হল, আদ্রা, রাঁচি ও খড়্গপুর ডিভিশনে তৃণমূলের সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন মেন্স কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা নেতারাই। ফলে, তাঁরা কংগ্রেসেরই সংগঠনে কিছুটা হলেও ফাটল ধরিয়েছেন। বামপন্থী সংগঠন রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়নের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “বিভিন্ন ডিভিশনে কংগ্রেসের প্রাক্তন পদাধিকারীদের দায়িত্ব দিয়েছিল তৃণমূল। ফলে ওরা কংগ্রেসের ভোট কাটবে, এটাই স্বাভাবিক।” ভোটের ফল নিয়ে বিশদে মন্তব্য করতে রাজি হননি রেলে তৃণমূলের সংগঠনের নেতারা। দক্ষিণ-পূর্ব জোনের সহ-সভাপতি প্রভাকর প্রসাদ শ্রীবাস্তব বলেন “রেলকর্মীরা আমাদের নতুন সংগঠনকে যতটুকু সমর্থন করেছেন, তাতেই আমরা খুশি।”
সামগ্রিকভাবে কংগ্রেস প্রভাবিত ইউনিয়নের থেকে ভাল ফল করলেও দক্ষিণ-পূর্ব রেলে কংগ্রেসের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে বামপন্থী সংগঠন মেন্স ইউনিয়ন। দেশের ১৭টি রেলওয়ে জোনের মধ্যে ১৬টিতেই মান্যতা পেয়েছে বামপন্থী কর্মী সংগঠন। ৬টি জোনে প্রথম স্থানে রয়েছে তারা। পাঁচটি জোনে একক ভাবে মান্যতা মিলেছে বামপন্থী এই সংগঠনের। কংগ্রেস মান্যতা পেয়েছে ১২টি জোনে। কিন্তু, দক্ষিণ-পূর্ব জোনে তৃণমূল ভোট কাটা সত্ত্বেও গত নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোটে বামপন্থী সংগঠনকে পিছনে ফেলেছে মেন্স কংগ্রেস। গত বার এই জোনে আড়াইশোর বেশি ভোটে বামপন্থীদের থেকে পিছিয়ে থাকা মেন্স কংগ্রেস এ বার আড়াই হাজার ভোটে এগিয়ে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলে বামপন্থীদের পিছিয়ে পড়ার পিছনে সংগঠনগত অন্তর্দ্বন্দ্ব অন্যতম কারণ। মেন্স ইউনিয়ন সূত্রের খবর, সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে জগন্নাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও গৌতম মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর লড়াই গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। রেলকর্মীদের সমস্যা সমাধানের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের বেঠকে বসার অধিকারও হারিয়েছে মেন্স ইউনিয়ন। রেলকর্মীদের সমস্যা নিয়ে লাগাতার লড়াইয়ের জন্যই তাঁদের ভাল ফল হয়েছে, প্রকাশ্যে কংগ্রেস নেতৃত্ব এই দাবি করলেও একান্ত আলাপচারিতায় তাঁরা মানছেন, মেন্স ইউনিয়নের অন্তর্দ্বন্দ্ব তাঁদের সুবিধা করে দিয়েছিল।
গৌতমবাবু বলেন “ছ’বছর ধরে অভ্যন্তরীণ সমস্যায় সংগঠনের কাজ করতে পারেনি কর্মীরা। তাই আমাদের এই ফল হয়েছে।” |