|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা... |
|
এ বার ‘কাল্লুমামা’ |
সাত বছর পরে দেবশঙ্কর হালদারের একক নাটক। মঞ্চে ওঠার আগে
শিখতে হয়েছে পি সি সরকারের ম্যাজিকও। লিখছেন
প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
২০০৬ সালে প্রথম একক নাটক করেন দেবশঙ্কর হালদার। দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ইয়ে’। সাত বছর পরে দেবশঙ্কর আবার মঞ্চে একা। ইশিতা মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কাল্লুমামা’তে একাই অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় করছেন কাল্লুমামা বলে এক আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনের চরিত্রে। যার জন্য পি. সি. সরকার-এর কাছে ম্যাজিকও শিখেছেন তিনি। তবে এই সাত বছরে দেবশঙ্করের কাছে একক নাটক করার সুযোগ আসেনি তা নয়। “আমি নিজে একক নাটক করতে যে ভালবাসি, তা নয়। থিয়েটার একটা দল নিয়ে হয়। তাই কেমন একটা অদ্ভুত লাগে যখন ভাবি যে আমি একলা অভিনয় করে যাব, আর অন্যরা কেউ থাকবে না স্টেজে! ‘ইয়ে’ নাটকটির থিমটাও এ রকমই ছিল। মুখ্য চরিত্র একাই বলে চলেন। আর অন্যরা কেউ কথা বলেন না। বিষয়টা আমার চিন্তাধারার সঙ্গে মিলে যায়। গল্প আর প্রযোজনার মধ্যেও একটা নতুনত্ব ছিল। তাই সেটা করলাম,” বলছিলেন দেবশঙ্কর। তবে অন্যদের একক নাটক দেখতে দেবশঙ্করের ভালই লেগেছে। যেমন ভাল লেগেছিল ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। যেখানে উনি নিজে আলো করেছিলেন বা স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের ‘সানু রায়চৌধুরী’ বা সোহিনী সেনগুপ্তের ‘বাপ্পাদিত্য’। প্রথম যখন ‘কাল্লুমামা’-র গল্পটা দেবশঙ্করকে শোনানো হয়, তখন এটি একক নাটক ছিল না। ইশিতাদের সঙ্গে একাধিক বার কাজ করার কথা হয়েছিল। কিন্তু কাজ করে ওঠা হয়নি। এই নাটকটা প্রথম বার শুনে মনে হয় যে নাটকের কাহিনি যে ভাবে মোড় নিয়েছে তাতে একটা লোকই বেশি কথা বলেছেন। তার পর ঠিক হয় একলা মানুষের যাত্রা হিসেবেই আবার লেখা হবে।
ইশিতা আবার লিখতে বসেন। কাল্লুমামার চরিত্রটির জন্ম বাংলাদেশের বর্ধিষ্ণু একটি পরিবারে। দেশ ভাগের পরে তিনি এ দেশে চলে আসেন। এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। কখনও যাত্রা দলের সখী, কখনও ম্যাজিশিয়ান, কখনও বা নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন গণজাগরণীর গায়ক হয়ে। হকারের মতো জিনিস ফেরি করে বেড়াতেও হয় তাঁকে। এই সব নানাবিধ কাজ করার পরে তিনি সরাসরি নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান এবং তার পর জেল। সেখানে গিয়ে আলাপ হয় কিছু গুন্ডার সঙ্গে। তাঁর মনে হয় যে অন্য অনেকের থেকেই এরা বেশি সৎ, স্বচ্ছ। আর তার পর তিনিও গুন্ডা হয়ে যান। “নাটকের শেষটা একটু অন্য রকম করতে চেয়েছি। এখনই বলতে চাই না,” ইশিতা জানান। |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
ইশিতা অবশ্য আঠেরো বছর আগে একক নাটক পরিচালনা করেছিলেন, নাম ‘কমলকামিনী’। কেতকী দত্ত অভিনয় করে ১৯৯৫ সালে শ্রেষ্ঠ নায়িকার সম্মান পেয়েছিলেন নাট্য অ্যাকাডেমি থেকে। কমলকামিনী পুরোনো দিনের অভিনেত্রী। তাঁকে ডাকা হয়েছিল শ্যুটিং করতে। কিন্তু তাকে বসিয়ে রাখা হয়। সে অবকাশে কমলকামিনী পুরোনো কথা ভাবেন। তাঁর কথায় উঠে আসে নাটকের অনেক অভিনেতার গল্প। যেমন শিশির ভাদুড়ি, প্রভা দেবী, মনোরমা দেবী, গিরিশ ঘোষ, বিনোদিনী প্রমুখ। “তবে ‘কাল্লুমামা’ একেবারেই ফিকশনাল” জানান ইশিতা। বিষয়ের অভিনবত্ব থেকে ম্যাজিক শেখার অভিজ্ঞতা সবই দেবশঙ্করের পছন্দের। “প্রতিটি মানুষ ছিন্নমূল। নিজেরা ভাবে উদ্বাস্তু। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে নিজেকে ক্রমাগত পাল্টাতে থাকে। এক জীবনে অনেকগুলো জন্ম নিতে হয়। সেটাই এই নাটকের মূল বক্তব্য,” বলেন অভিনেতা।
আর ম্যাজিক শেখা? “নাটক করতে গিয়ে এই প্রথম ম্যাজিক শিখতে হল। ট্রেন-এ যেমন ম্যাজিশিয়ানরা দেখান। বল শূন্যে ভেসে চলেছে ম্যাজিশিয়ানের সঙ্গে। বা ঝোলার মধ্যে থেকে জিনিস উধাও করা,” দেবশঙ্কর জানান।
নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হবে ৩১ মে। তার মধ্যে দেবশঙ্করের আরও দু’টো থিয়েটারের মহড়া চলছে। নান্দীকারের ‘নাচনী’ আর দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘নিঃসঙ্গে সম্রাট’। সব মিলিয়ে ব্যস্ততা প্রচুর। ‘‘এটাই তো চেয়েছিলাম করতে,” বলে এক গাল হেসে আবার রিহার্সাল দিতে চলে যান তিনি। |
|
|
|
|
|