পূর্ব কলকাতা
অবাধ বিকিকিনি
নেশার হাটে
যেন ভ্রাম্যমাণ হাট। তা-ও আবার হেরোইনের!
অভিযোগ উঠেছে, গত কয়েক বছর ধরে রাজারহাট পুরসভার দু’টি ওয়ার্ড জুড়ে নিষিদ্ধ ব্রাউন সুগারের রমরমা চললেও পুলিশ, প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে কার্যত নীরব। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনিক নীরবতায় ব্রাউন সুগারের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে ওই দু’টি ওয়ার্ড।
ভিআইপি রোডের কৈখালি বাসস্টপ থেকে পশ্চিম দিকে প্রবেশ করেছে মণ্ডলগাঁতি রোড। এই রাস্তা ধরে এগোলে বাঁ দিক রাজারহাট পুরসভার ১২ নম্বর এবং ডান দিক ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। মণ্ডলগাঁতি রোড ধরে আরও কয়েকশো মিটার এগোলে খেলার মাঠ ও দমদম পুরসভার টাটা গেট এলাকা। এর পরে রাস্তাটি আরও এগিয়ে দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে যশোহর রোডে মিলেছে। কৈখালি থেকে পশ্চিম দিকে প্রবেশের পর এই সব অঞ্চল মণ্ডলগাঁতি এলাকা নামে পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজারহাট থানার রাইগাছি সংলগ্ন বারাসত থানার জোজরা অঞ্চল একসময় ব্রাউন সুগারের মুক্তাঞ্চল ছিল। বছর দশেক আগে জোজরায় পুলিশি অভিযানে বড়সড় ড্রাগ চক্র ধরা পড়ার পরে মণ্ডলগাঁতি এলাকায় হেরোইনের চোরাগোপ্তা কারবার চালু হয়। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে মণ্ডলগাঁতি অঞ্চল চলে যায় ব্রাউন সুগারের কারবারিদের দখলে।
অলংকরণ: অনুপ রায়
স্থানীয় সূত্রে খবর, দু’শো থেকে আড়াইশো টাকায় ছোট পুরিয়ার মধ্যে কয়েক গ্রাম ব্রাউন সুগার মেলে। কখনও সরাসরি পুরিয়ার লেনদেন চলে। কখনও খালি দেশলাইয়ের খোলের মধ্যে ভরে তা বিক্রি হয়। এলাকাবাসীর দাবি, অধিকাংশ ক্রেতা বাইরে থেকে আসেন। কেউ মাদক নিয়ে চলে যান, আবার কেউ মণ্ডলগাঁতি রোড ধরে টাটা গেট, এয়ারপোর্ট কোয়ার্টার্স পেরিয়ে দমদম পুরসভার অন্তর্গত রাস্তার ধারের ঝোপের মধ্যে বসে ব্রাউন সুগার নেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মণ্ডলগাঁতির গাজিপাড়া, ঈঁদগাপাড়া, আজাদপল্লির খালপাড়া এলাকা কার্যত ড্রাগের ভ্রাম্যমাণ বাজারে পরিণত হয়েছে।
বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে শান্তি কমিটি গঠন করে ড্রাগ ব্যবসা বন্ধ করতে বেশ কয়েক বার পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। কিছু ড্রাগ বিক্রেতার নাম পুলিশের কাছে দেওয়াও হয়েছে। তাঁদের কয়েক জন গ্রেফতার হলেও প্রশাসনের ধারাবাহিক উদ্যোগের অভাবে সমস্যার স্থায়ী কোনও সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ। এলাকার মানুষের আরও অভিযোগ, মাদকাসক্তেরা অনেক সময়েই অন্যদের আক্রমণ করে। ফলে এলাকার পরিবেশ দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতির পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতাও এ জন্য দায়ী বলে অভিযোগ উঠছে। মণ্ডলগাঁতি শান্তি কমিটির এক নেতার দাবি, “এর পিছনে বড় চক্র আছে। এলাকায় দু’বার ড্রাগের বিরুদ্ধে সভা করে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। কিন্তু ছাড়া পেয়ে তারা আবার ড্রাগ বিক্রিতে নেমে পড়ে। প্রশাসনের ধারাবাহিক উদ্যোগের অভাব রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ও রয়েছে। তাই কাজের কাজ কিছুই হয় না।”
রাজারহাট পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি সিপিএমের সোলেমান বিশ্বাস বলেন, “কানাঘুষোয় ড্রাগের কথা শুনেছি। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে সবিস্তার জানি না।” ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি তৃণমূলের পারভিন খুরশিদ বলেন, “ভিআইপি রোড থেকে টাটা গেট পর্যন্ত ড্রাগের সাম্রাজ্য। মাদকাসক্তেরা আক্রমণ করে বলে ওদের ধরা ঝুঁকির। পুলিশকে বার বার বললেও তারা উদ্যোগী হয় না। ফলে স্থানীয় মানুষজন ভয়ে থাকেন।”
যদিও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডি সিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “ওখানে যে ড্রাগের ব্যবসা চলে তা আমরা জানি। এর আগেও ওখানে কয়েক বার অভিযান চালানো হয়েছে। কয়েক জন ধরাও পড়েছে। দমদমের কয়েকটি জায়গা চিহ্নিত করে এই চক্রের চাঁইকে ধরার চেষ্টা চলছে। ওখানে অন্যান্য অসামাজিক কাজকর্ম চলার অভিযোগ রয়েছে। সে সব নিয়েও তদন্ত হচ্ছে।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.