ইডেনে ‘অক্ষত’ রাহুলের অধিনায়ক ভাগ্য
এত দুঃখেও কলকাতাকে বিদায়ী উপহার নাইটদের
ডেনের তো আর আগে জানার উপায় ছিল না যে প্লে অফ মোটামুটি নিশ্চিত করে ফেলা টিমকে এমন নিশ্চিন্ত খাটান দেওয়া যাবে!
বরঞ্চ উল্টোটাই অনুমান করার কথা যে ভেন্টিলেটরটা খুলে এ দিনই ডাক্তাররা ডেথ সার্টিফিকেট ঘোষণা করে দেবেন। জানিয়ে দেবেন, কেকেআর, গত বারের চ্যাম্পিয়ন, তোমরা সরকারি ভাবে এ বছরের আইপিএলে মৃত। তবু রাত্তির এগারোটা নাগাদ সাদা চোখে দেখা গেল কাতারে কাতারে ভিড়। হাজার পঞ্চাশেক মানুষ।
সেই প্রথম ম্যাচের পর স্বঘোষিত প্রমীলা বাহিনী নিয়ে ইডেন-প্রত্যাবর্তনকারী শাহরুখ খান যা দেখে কেমন অবিশ্বাস্য রকম অভিভূত, মাঝ রাতে বললেন আন্তর্জাতিক টিভি দর্শককে। এসআরকে অভিভূত হওয়ার অনেক দশক আগেই অবশ্য ইডেন গ্যালারির দিগ্বিজয়ী মহিমা ছড়িয়ে গিয়েছে। ভারত বনাম এমসিসি এক টেস্ট ম্যাচ ঘিরে। সাঁইত্রিশ বছর আগে টনি গ্রেগের সেই এমসিসি-র বিরুদ্ধে শেষ দিন নিজের দেশের অবিসংবাদী হার দেখতে এসেছিলেন কিনা আশি হাজার মানুষ। অথচ ফিফথ ডে-তে ইংল্যান্ডের জেতার জন্য দরকার ছিল মাত্র চল্লিশের কাছাকাছি রান। টনি গ্রেগ মারা গিয়েছেন। কিন্তু বিলেতের কাগজপত্রে, ব্রিটিশ ক্রিকেটলেখকদের বইতে আজও ফিরে ফিরে আসে ইডেনের সেই অবশ্যম্ভাবী হারের দিনে আশি হাজারের হ্যাংওভার!
দুই নাইট নায়ককে পরাজিত নেতার অভিনন্দন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
শুক্রবার কি মাঠের সাঁইত্রিশ বছর প্রাচীন দর্শক-কীর্তি নতুন করে সম্মানিত হল? উত্তর, না। আইপিএলের মাহাত্ম্য এখানেই যে তার দর্শক আকর্ষণ নিছক জেতা হারা বা টিমের অবস্থার ওপর নির্ভর করে না। লোকে আসে ভরপুর বিনোদন পেতে। চুম্বকক্ষেত্র ওটাই। সে শহরের নাম পুণে হোক, কী কলকাতা। দিল্লি হোক কী চেন্নাই। বৃহত্তর ক্রিকেটে দর্শক টানতে ব্যর্থতার হতাশায় ডুবে থাকা স্থানীয় ক্রিকেটকর্তা বলছিলেন, “দেশের সর্বত্র আইপিএল-কে লোকে আর খেলা হিসেবে দেখে না। মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যাওয়ার মতো তিন-চার ঘণ্টা মজা করতে যায়।”
স্থানীয় টিমের জয় তাই চাই। শুক্রবারের মতো এ রকম আট উইকেটে হলে তো দারুণ মজার। কিন্তু একের খুব কাছাকাছি থাকা দুই হিসেবে। এক অফুরন্ত বিনোদন। ম্যাচ জিতেও তাই নাইট দর্শকের আফসোস যাচ্ছে না রাহুলের ব্যাট দেখতে পাওয়া গেল না।
তিনি রাহুল দ্রাবিড় এ মাঠে তাঁর শেষ অবতরণ ঘটল-- বলা সম্ভব নয়। বরঞ্চ ২৪-এর প্লে অফ এবং ২৬-এর আইপিএল ফাইনাল, দু’টোর যে কোনওতেই তাঁকে দেখা যেতে পারে। হয়তো বা দু’টোতেই। কিন্তু হাতে রইল পেন্সিলের মতোই একশো শতাংশ নিশ্চিত ভাবে রাহুলের ইডেন-ব্যাটিং দেখার শেষ সুযোগ ছিল এই ম্যাচে। পরের বছর তো আইপিএল খেলবেন না। আর বুভুক্ষু দর্শকদের সামনে তিনি খেললেন কিনা শেষ তিনটে বল! স্ট্রাইক রেট দু’শো। কিন্তু এই মাঠে যাঁর টেস্ট অ্যাভারেজ ৬৮ আর চারটে রাজকীয় সেঞ্চুরি আছে, তাঁকে শেষ তিন বলে কে দেখতে চেয়েছে! তাই ইউসুফ পাঠানের কেকেআরের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোরের দিনেও (৩৫ বলে অপরাজিত ৪৯) সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পর্যন্ত রাহুলের পরে নামা নিয়ে বিতর্ক চলল।
ম্যাচের আগে শুভেচ্ছা বিনিময়
দুই ক্যাপ্টেনের। ছবি: উৎপল সরকার
আর আর অধিনায়ক আগে ব্যাট করলেন না কেন? অসুস্থ ছিলেন? বিকেলে প্র্যাকটিসের সময় লেগেছে? অন্য কিছু? কারণটা কী?
যতদূর মনে হচ্ছে কেকেআরের ডিজাইনার পিচে চল্লিশ বছর বয়সে ব্যাট করার ঝুঁকি নিলেন না। জয়পুরে যে পিচে খেলে রয়্যালরা আভিজাত্যের চেকনাই আরও বাড়িয়েছে, তার সঙ্গে ইডেনের ততটাই মিল যতটা সুদীপ্ত গুপ্ত আর সুদীপ্ত সেনে! টসের সময় রাহুল বলেও ফেললেন, “এখানে যে দু’টো পিচ তৈরি আছে তার একটায় যদি বা ঘাসটাস আছে। এটা একেবারেই ন্যাড়া আর ঘোরার জন্য তৈরি।” এ বারের আইপিএলের সবচেয়ে সাড়াজাগানো অধিনায়ক তিনি। টস জিতে ব্যাটও নিয়েছিলেন বল পরের দিকে বেশি ঘুরবে বলে। কিন্তু নারিনরা এমনই ভেল্কি শুরু করলেন যে সম্ভবত তাঁর মনে হয়েছিল এই সারফেসে ডাগআউটের তরুণ শক্তিশালী পা যেগুলো দ্রুত নড়বে-চড়বে সেগুলোর সফল হওয়ার সম্ভাবনা তাঁর চল্লিশ বছরের রিফ্লেক্সের চেয়ে বেশি। এটাই দ্রুততম পেস উইকেট হলে অবশ্যই ডাগআউটের পিছনের বেঞ্চিতে এতক্ষণ বসে থাকতেন না। এক-এক সময় তাঁকে ‘প্রপ’ মনে হচ্ছিল।
যেমন ‘প্রপ’ হিসেবে প্রতিদিন মাঠের ধারে আইপিএল ট্রফিটা টেবলের ওপর সাজানো থাকে। কেকেআরের যত হাল খারাপ হচ্ছে ট্রফিটা তত আরও বিদ্রূপাত্মক হয়ে পড়ছে। শেষ দিন কিন্তু কেকেআর মন ভরিয়ে দেওয়ার ক্রিকেট খেলল। হোমে ছ’ম্যাচ খেলে চার নম্বর জেতার পর শাহরুখ তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে গোটা মাঠটাও চক্কর মারলেন। দর্শকদের ধন্যবাদ দিলেন গোটা মরসুম সঙ্গে থাকার জন্য। অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে এ মাঠে তো আর কেকেআরের খেলা নেই।
আমরা তো আছি...। আউট হওয়া গম্ভীরকে
যেন সেটাই বলছেন বিসলা। ছবি: উৎপল সরকার
শুধু দর্শক নয়, সেটা সবচেয়ে মর্মান্তিক হওয়া উচিত সুনীল নারিনের জন্য! আইপিএল কক্ষপথে শেন ওয়ার্ন হয়ে দাঁড়িয়েছেন নারিন। ক’দিন আগে ডেল স্টেইন বলেছেন, “আইপিএলে বোলাররা অসহায়। ম্যাচের ভাগ্য গড়ার জন্য তাদের হাতে থাকে মাত্র চব্বিশটা বল।” ব্যাটসম্যান যেমন বরাবর বলে এসেছে ক্রিকেট আমাদের কাছে এক বলের খেলা, এটাও সে রকম একটা অসহায় আর্তনাদ। আর খুব সঙ্গত। সেই প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নারিন চার ওভারে দশটা ডট বল করলেন। ইউসুফ ম্যান অব দ্য ম্যাচ পেলেন। হওয়া উচিত ছিল নারিনের। স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ২১ রানে এক উইকেট। হওয়া উচিত তিন উইকেট। বিসলা একটা স্টাম্পিং মিস করেছেন। একটা ক্যাচ ফেলেছেন। ম্যাচের ভাগ্যটাই তিনি ঘুরিয়ে দেন জঙ্গি হতে শুরু করা শেন ওয়াটসনকে ফিরিয়ে দিয়ে। সঞ্জু স্যামসন প্রাণপণ করেছেন। কিন্তু এই উইকেটে কেকেআরের দ্বিমুখী স্পিন-আক্রমণ ছিঁড়ে ম্যাচ জেতানো স্কোরে নিয়ে যাওয়া এখনও তাঁর আয়ত্তের বাইরে।
রাজস্থান অধিনায়ক দ্রাবিড় আইপিএলের মহাকাশে নতুন তারা। গতবারও অধিনায়কত্ব করেছেন। কিন্তু এই পর্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা পাননি। এ বার প্রতি ম্যাচে দল বদলাচ্ছেন। ব্যাটিং অর্ডারে বৈচিত্র আনছেন। তরুণ প্রতিভাদের ঠেলে দিচ্ছেন সফল ভাবে। ধন্য ধন্য পড়ে যাচ্ছে।
ইডেন কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখনও তাঁর কাছে ব্যাটসম্যান হিসেবেই পয়া। অধিনায়ক হিসেবে মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা তিনটেই বিয়োগান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে হার। গত বার আইপিএলে হার। আর আজকেরটা।
ইডেন মাঠটা বোধহয় বিশ্বাস করে ব্যাটসম্যানশিপে তুমি অতুলনীয়। নেতৃত্বটা তোমার বন্ধুর ওপরই ছাড়া থাক না!





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.