ফাইনাল যদি কেকেআর জেতে, তা হলে ইডেনে গম্ভীরের হাতে কাপ ওঠার পাশে আরও একটা ছবিও নাকি দেখতে পাওয়া যাবে। তিন তলার রেলিং থেকে ঝাঁপ দিচ্ছেন শাহরুখ খান!
নাইট রাইডার্স মালিক এ দিন মাঠে দাঁড়িয়ে অন্তত তেমনটাই বললেন। “বক্সে খেলা দেখতে দেখতে বার বার উত্তেজনায় রেলিং বেয়ে উঠে পড়ছিলাম। অনেকেই ভাবছিল, ঝাঁপ দেব কি না। মেয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছিল। তবে ফাইনাল জিতলে ওখান থেকেই ঝাঁপ দেব,” বলছিলেন শাহরুখ। তিনি নিজে খুব ভাল করেই জানেন, এখান থেকে কেকেআরের রাস্তাটা কতটা কঠিন। জানেন, এই বাজি জেতা কার্যত অসম্ভব। এমনকী দর্শকদের হতাশাটাও বুঝতে পারছেন। কিন্তু এ দিন জেতার পর কিছুটা আবেগতাড়িত হয়েই যেন বলে ফেললেন কথাগুলো।
এ দিন কিন্তু শুরুর দিকে মোটেই টেনশনহীন ছিলেন না কিং খান। |
গম্ভীর আউট হওয়ার পর ম্যাচ তখনও ৫০-৫০। শাহরুখ বক্স থেকে নীচে নেমে এসে মাঠে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ম্যাচ। কিন্তু মেয়ের অনুরোধে আবার গিয়ে বসলেন বি ওয়ান বক্সে। বারান্দায় এলেন না।
এক বোতল জল এনে দিলেন তাঁর দেহরক্ষী। এর মধ্যেই ধরালেন সিগারেট। একটু হলেও টেনশনে বাদশা। সিগারেট শেষ করেও অবশ্য অনেক্ষণ এসি বক্সেই বসেছিলেন। একদম বেরোলেন, যখন ম্যাচ প্রায় জিতে ফেলেছেন।
ইডেনে তখন কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, শাহরুখ মাঠে আসলেই যদি কেকেআর জেতে তা হলে কিং খান রোজ আসছেন না কেন?
এরকম ধারণার বড় প্রবক্তা এ দিন ছিলেন রাইমা সেন। শাহরুখ এর পাশের বক্স, বি টু-তেই ছিলেন তিনি। “আই লাভ শাহরুখ। ও আসলেই যেন মাঠে কেকেআর নতুন এনার্জি পায়। ওর রোজ মাঠে থাকা উচিত, তা হলেই আমরা সেমিফাইনালে পৌঁছব”, বাড়ি যাওয়ার পথে বলছিলেন রাইমা।
এ দিন যেন সকাল থেকেই কিং খান জানতেন তিনি ম্যাচ জিতবেন। আইপিএল ওয়ানের পর আবার মুম্বইয়ের মিডিয়াকে নিয়ে এলেন ইডেনে। “না না, আমাদের শাহরুখ বলেছে, কিছু লিখতে হবে না। শুধু বলল, চলো ম্যাচ দেখবে আর রাতে পার্টি করবে,” বলছিলেন এক গেস্ট সাংবাদিক। তাঁদের কথাতেই, এটা বাজিগরের সেই পুরনো কনফিডেন্স।
ততক্ষণে ম্যাচ জিতেও গিয়েছেন শাহরুখ। বক্সের মধ্যে তখন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ঊষা উত্থুপরা। “আমি তো বেরোতেই পারছি না। যতবার ভাবছি বেরোব, তত বার ঊষাজি বলছেন, এখানে দাঁড়াও, তা হলেই আমরা জিতব।” শাহরুখের পাশে দাঁড়িয়েই বলছিলেন ঋতুপর্ণা। আগের কয়েকটা ম্যাচের মতো এ দিনও তিনি এসেছিলেন ছেলে অঙ্কনের সঙ্গে। “অঙ্কন তো শাহরুখকে মিট করে ভীষণ এক্সাইটেড। অনেক দিন পর জুহির সঙ্গে দেখা হল। নিজের মেয়ের সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিল শাহরুখ,” বলছিলেন ঋতুপর্ণা। |
এর মধ্যেই কেকেআর ড্রেসিংরুমের বাইরে এসে দাঁড়ালেন তিনি, মেয়ের সঙ্গে। পাশে ইউসুফ পাঠানের স্ত্রী। পাঠান ড্রেসিংরুম থেকে বেরোতেই বউয়ের সামনেই ইউসুফের কোলে উঠে পড়লেন তিনি। একটু দূরে তখন দাঁড়িয়ে জুহি চাওলা। একমাত্র ম্যাচের শেষেই শাহরুখ ও জুহিকে কথা বলতে দেখা গেল। অনেক পুরনো সম্পর্ক যে আর আগের মতো নেই, এ দিনের ইডেনও তা দেখল। না হলে পাশে দাঁড়ানো জুহিকে ছেড়ে শুধু নিজের মেয়েকে নিয়ে মাঠ পরিক্রমা করতেন না শাহরুখ খান। পরিক্রমা করার সময় অবশ্য দেখা গেল সেই পুরনো শাহরুখ ম্যাজিক। হুড়হুড় করে গ্যালারি থেকে লোক ছুটে আসছে তাঁকে দেখবে বলে। শাহরুখও এ দিন এই কেকেআর-প্রেমের জন্য কলকাতাবাসীকে ধন্যবাদ দিতে দিতে বলছিলেন, “আমাদের দল অনেক চড়াই-উতরাইয়ের ভেতর দিয়ে গিয়েছে। খারাপ, ভাল দুই সময়ই গিয়েছে। তার পরেও কেকেআরের জন্য এত জনসমর্থন, এত ভালবাসা দেখে বলতেই হচ্ছে তিন-চারটে পর পর যে রকম হেরেছি, সে রকম তিন চারটে পর পর জিততেও পারি।” পরের দুটো ম্যাচে রাঁচিতে যাওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। “ওখানকার প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাকে অনুরোধ করেছেন মাঠে থাকার জন্য। এখন কয়েক দিন ফাঁকা থাকব। কাজেই রাঁচি যাচ্ছি। আশা করি ওখানকার দর্শকরাও আমাদের এ রকম সমর্থন করবেন।”
সব দেখে মনে হচ্ছিল, আইপিএল সিক্সে কোনও মতেই ভেন্টিলেটর থেকে বেরোয়নি কেকেআর। কিন্তু এই টিমকে মাঠের বাইরে থেকে কেউ যদি অক্সিজেন দিতে পারে, তা হলে সে তিনিই। ‘হার কর জিতনে ওয়ালে কো বাজিগর কহতে হ্যায়’ তো কুড়ি বছর আগে তাঁর ছবিরই ডায়লগ!
|
শাহরুখ-উবাচ |
আমাদের দল অনেক চড়াই-উতরাইয়ের ভেতর দিয়ে গিয়েছে। খারাপ, ভালদুই সময়ই দেখেছে। তার পরেও কেকেআরের জন্য এত জনসমর্থন, এত ভালবাসা দেখে বলতেই হচ্ছে তিন-চারটে ম্যাচ পর পর যে রকম হেরেছি, সে রকম তিন চারটে পর পর জিততেও পারি। |
|
ছবি: উৎপল সরকার, শঙ্কর নাগ দাস |