টোলগেকে কি চুক্তি ভেঙে ছেড়ে দেবে মোহনবাগান?
র্যান্টি কি নতুন মরসুমে প্রয়াগ ইউনাইটেডের জার্সি পরে শেষ পর্যন্ত মাঠে নামতে পারবেন?
ইস্টবেঙ্গল কি আর কোনও বিদেশি তারকা নিতে পারবে?
আইএফএ-র লিগ এবং শিল্ড স্পনসর করবে কে? দেখাবেই বা কোন চ্যানেল?
সারদা কাণ্ডের জেরে বাংলার ফুটবলে তীব্র সঙ্কট। উঠছে নানা প্রশ্ন। আই লিগের তিন দল তো বটেই, জর্জ টেলিগ্রাফ, জানবাজার, সাদার্ন সমিতি, কালীঘাট, পাঠচক্র-র মতো নানা মাপের ছোট ক্লাবগুলিও কী ভাবে নতুন মরসুমে দল গড়বে, তা নিয়ে রাতের ঘুম ছুটেছে ক্লাবগুলির কর্তাদের। কেউ কেউ টিম তুলে দেওয়ার কথাও ভাবছে।
রোজভ্যালি, প্রয়াগ, এনভিডি, টাওয়ার, জি গ্রুপ, ওয়ারিশ, পিনকনঅসংখ্য চিটফান্ড গত মরসুমে স্পনসর ছিল ময়দানের ক্লাবগুলির। বর্তমান পরিস্থিতিতে এদের প্রায় সবাই হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। ফলে ক্লাবগুলি পড়েছে তীব্র আর্থিক সঙ্কটে। কোটি কোটি টাকায় দল গড়া বড় ক্লাবগুলির কর্তাদের মাথায় হাত। ওডাফা-চিডির মতো কয়েক জন ‘ভাগ্যবান’ বাদ দিলে দর নামতে চলেছে প্রায় সব ফুটবলারের। গত বারের চেয়ে অনেক কম টাকার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে সবাইকে। গোয়া, পুণে, মুম্বইয়ের নামী ক্লাবগুলিও বাজেট কমিয়েছে। ফুটবলারদেরও বেশি টাকা নিয়ে অন্য রাজ্যের ক্লাবে যাওয়ার জায়গায়ও নেই। |
দশ দিন আগে নবির কাছে এক মোহন-কর্তা প্রস্তাব দেন দু’বছরের চুক্তির। ৬৫ এবং ৭৫ লাখ টাকার। নবি রাজি হননি। চেয়েছিলেন আরও বেশি টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে নবির জন্য ৪০ লাখ টাকা দেওয়ার অবস্থাতেও নেই কর্তারা। তাতে যদি নবি অন্য ক্লাবে চলে যান কিছুই করার নেই। শিল্টন পাল-সহ অন্য ফুটবলারদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
উগা ওপারা নতুন মরসুমে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের কাছে বাড়তি প্রায় তিরিশ লাখ টাকা হেঁকেছিলেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত বছরের চেয়েও কম টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। পেনের ক্ষেত্রেও তাই।
ইউবি দুই প্রধানের মূল স্পনসর হিসাবে গত বার ইস্ট-মোহনকে দিয়েছিল ৯ কোটি টাকা করে। বিজয় মাল্যর কোম্পানির বর্তমান আর্থিক অবস্থা যা, তাতে এর বেশি এ বার দিতে রাজি নয় তারা। ইস্ট-মোহনের বাজেট গত বার ছিল প্রায় ১৪ কোটি টাকার মতো। লাল-হলুদকে বাড়তি টাকা জুগিয়েছিল কো-স্পনসর রোজভ্যালি। মোহনবাগানকে মুম্বইয়ের সংস্থা ‘আমরা’ এবং চিটফান্ড এনভিডি। রোজভ্যালি এ বার নেই ইস্টবেঙ্গলে। মোহনবাগান এ বার একটি চিটফান্ডকে ছ’কোটি টাকা স্পনসর ঠিক করেছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা পিঠটান দেওয়ার পথে। ফলে ইউবি-র ন’কোটি আর ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে দল গড়তে হবে বাগান কর্তাদের। ক্লাব কর্তাদের হিসাব মতো গত বারের বাজেটের অর্ধেক টাকায় এ বার দল গড়তে হবে।
ইস্টবেঙ্গল ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য স্বীকার করে নিলেন সঙ্কট। “কোনও উপায় নেই। নতুন ফুটবলার নেব কী ভাবে? যারা আছে তাদেরই দর কমাতে হবে। টাকা কোথায়?” বললেন সন্তোষ। পুণের জেজে বেশি টাকা চাওয়ায় পৈলানের লেনকে নিতে চাইছে লাল-হলুদ। কম টাকায়। মোহনবাগান অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত বললেন, “যা অবস্থা তাতে কাকে ছেড়ে কাকে রাখব বুঝতে পারছি না।” প্রতিদিন বাদের তালিকা বাড়ছে বাগানে। নিট ফল, বাইরের ফুটবলারের পিছনে না দৌড়ে, নিজের ফুটবলারদের ধরে রাখা নিয়েই সংশয়ে দুই প্রধানের কর্তারা।
সবথেকে করুণ অবস্থা র্যান্টি-কার্লোস-গৌরমাঙ্গীদের ইউনাইটেড স্পোর্টসের। দুই প্রধানের তবু ইউবি আছে। ইউনাইটেডের তা-ও নেই। প্রধান স্পনসর প্রয়াগ-ই চিটফান্ড। গত বার যারা ১২ কোটি দিয়েছিল বড় দল গড়তে। এ বার পরিবর্তিত অবস্থায় কি আদৌ টাকা দিতে পারবে প্রয়াগ? তাদের কিছু অফিস পুলিশ ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছে নানা অভিযোগের ভিত্তিতে। কয়েক দিন আগেই নতুন মরসুমে ইউনাইটেড স্পোর্টসকে ১১ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রয়াগ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংস্থায় পুলিশি হানার পর সব এলোমেলো। কোনও কোনও মহল থেকে আশ্বাস মিললেও সচিব অলোকেশ কুণ্ডু বললেন, “প্রচণ্ড চিন্তায় আছি! সামনেই তো দলবদল।”
ইস্ট-মোহন হয়তো নিজেদের ব্র্যান্ড ভ্যালু ভাঙিয়ে কিছু টাকা জোগাড় করবে। কিন্তু ছোট দলের কী হবে? প্রিমিয়ার ডিভিশনের ক্লাব জানবাজার। তাদের স্পনসর ছিল চিটফান্ড টাওয়ার। ক্লাব সচিব অপূর্ব ঘোষ বললেন, “ভগবানের উপর সব ছেড়ে দিয়েছি!” স্বয়ং বাংলা ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ-ও বিপদে। তাদের কলকাতা লিগ, শিল্ডের স্পনসর, চ্যানেল পার্টনার সবই চিটফান্ড। দেখার, কীভাবে এই নজিরবিহীন সঙ্কট কাটিয়ে ওঠে বাংলার ফুটবল। |