কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার একমাস আগে অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটিতে হেরে গিয়ে পদ খোওয়ালেন তৃণমূলের প্রধান। বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের অধীন কালীনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোটাভুটি হয়।
এই পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ৯ জন। তাঁদের মধ্যে সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্য যথাক্রমে ২ এবং ৫ জন। তৃণমূলের সদস্য ২ জন। প্রধান নির্বাচিত হন ফরওয়ার্ড ব্লকের সাবির মল্লিক। উপপ্রধান পদটি পাওয়ার কথা ছিল সিপিএমের। উপ-প্রধান পদটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। সিপিএমের কোনও মহিলা সদস্য না-থাকায় এই পদেও ফরওয়ার্ড ব্লকের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করার কথা ওঠে। সেই মতো উপপ্রধান পদের জন্য প্রার্থীও ঠিক করে ফেলে ফরওয়ার্ড ব্লক। কিন্তু এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশের বিবাদ বাধে। উপপ্রধান নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী দেয়। ফরওয়ার্ড ব্লকের অভ্যন্তরীণ বিবাদের জেরে উপপ্রধান নির্বাচনে ‘ক্রশ ভোটিং’ হয়। জিতে যান তৃণমূল প্রার্থী।
মাসখানেক আগে প্রধান সাবির মল্লিক এবং স্থানীয় এক ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা তাঁদের বেশ কয়েক জন অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ওই ঘটনার পরে তাঁদের দু’জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতৃত্ব। নোটিশের উত্তরে সাবির এবং ওই নেতা জানান, তাঁরা দল ছেড়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তারপরেই সাবিরের বিরুদ্ধে বিডিও-র কাছে যৌথ অনাস্থা জমা দেয় ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিএম।
এই পঞ্চায়েতের বর্তমান বোর্ডটি গঠন করা হয়েছিল ২০০৮ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি। সেই হিসাবে জুনের পরে এমনিতেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তা সত্ত্বেও অনাস্থা প্রস্তাব আনার কারণ হিসাবে ফরওয়ার্ড ব্লকের হাওড়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক কুতুবুদ্দিন আহমেদ বলেন, “সাবির নিজে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি প্রচার করছিলেন আমাদের দলের বাকি সদস্যেরাও নাকি দল ছেড়ে তাঁর সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁর এই প্রচারের ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আমরা সমস্যায় পড়ছিলাম। সাবিরের ওই অপপ্রচারের জবাব দিতেই আমরা বামফ্রন্টগত ভাবে অনাস্থা প্রস্তাব আনি।”
অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের চার জন এবং সিপিএমের দু’জন সদস্য। অন্য দিকে, সাবির এবং উপপ্রধান-সহ বাকি দুই তৃণমূল সদস্য ভোটাভুটিতে যোগ দিতে আসেননি। এ কথা উল্লেখ করে কুতুবুদ্দিন বলেন, “প্রমাণিত হল, সাবির তৃণমূলে যোগ দিলেও আমাদের বাকি সদস্যেরা তাঁর সঙ্গে দল ছাড়েননি।”
অন্য দিকে সাবিরের কথায়, “ফরওয়ার্ড ব্লকের চার জন পঞ্চায়েত সদস্য আমার সঙ্গেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ওই চার জনকে ভয় দেখিয়ে পুরনো দলে ফিরিয়ে নেয়।” এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক। অন্য দিকে, অনাস্থা প্রস্তাবের ফলাফল আন্দাজ করে তিনি গত ৩০ এপ্রিল পদত্যাগ করেছিলেন বলে সাবিরের দাবি। |