|
|
|
|
ছ’বারে মুখ্যমন্ত্রী, লালুর খেদ ১২ বার
ভানুজির কাঁধ পেলে হতেন প্রধানমন্ত্রী
স্বপন সরকার • পটনা |
লালুপ্রসাদ তাঁকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, “ভানুপ্রকাশজি ছ’বার আপনার কাঁধে উঠে আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি। যদি বারো বার তুলতেন! হয়তো প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেতাম।” ভানুপ্রকাশ সিনহা শুধু লালু নন, একাধিকবার কাঁধে তুলেছেন বিহারের আরেক বিরোধী নেতা (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও) কর্পূরী ঠাকুরকেও। তবে নিজের ইচ্ছায় নন, কোনও খাতিরদারির ব্যাপারস্যাপারও এর মধ্যে নেই। বিহার বিধানসভার মার্শাল লালু, কর্পূরীকে কাঁধে তুলে বের করে দিয়েছেন বিধানসভা থেকে। এক বার ঘাড়ে করে বের করতে গিয়ে তাঁর কান কামড়ে দিয়েছিলেন লালুর দলের এক বিধায়ক।
গত ২৬ বছরে ১১ জন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেছেন তিনি। সুঠাম এই মানুষটি দু’বছর আগে অবসর নিলেও তাঁকে এখনও বহাল রেখেছেন বর্তমান স্পিকার উদয়নারায়ণ চৌধুরী। ১২ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করার পর অবসর নিয়ে বিধানসভায় যোগ দেন ১৯৮৭ সালে। বিধানসভার মর্যাদা রক্ষায় তিনি তাঁর ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন আইন মেনেই। বহুবিধায়ক এসেছেন, গিয়েছেন। সবাইকে তাঁর মনেও নেই। তবে ভোলেননি কর্পূরী ঠাকুর, লালুপ্রসাদকে। মনে রাখবেন নীতীশকেও। |
ভানুপ্রকাশ সিনহা। —নিজস্ব চিত্র |
তাঁর কথায়, “কর্পূরী ঠাকুর ছিলেন বিনয়ী। বিরোধী দলে থাকার সময়ে স্পিকারের নির্দেশে তাঁকে বের করতে গেলে তিনি বলতেন, “আপনার কাজ করুন।” মার্শাল তাঁকে বিনীত ভাবে স্পিকারের নির্দেশ পালনের কথা জানালে তিনি একই ভাবে বলতেন “আপনার কাজ করুন।” অর্থাৎ নিজে থেকে তিনি বেরোবেন না। তাঁকে জোর করে বের করতে হবে। একই ভাবে লালুপ্রসাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। লালুপ্রসাদ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এলেন ১৯৯০ সালের মার্চে। কয়েকদিন পর দিল্লির এক প্রতিনিধি দল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বিধানসভায় আসে। তাঁদের নিয়ে মার্শাল যখন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে হাজির হন তখন লালু তাঁদের সঙ্গে মার্শালের আনুষ্ঠানিক আলাপ করিয়ে বলেন, “এই ব্যক্তি আমাকে বিধানসভা থেকে ছ’বার ঘাড়ে করে বাইরে বের করে দিয়েছেন। তাতে আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি। ভানুজি ১২ বার বের করে দিলে আমি তো প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাব।” হাসির রোল ওঠে। অভ্যাগতদের সামনে অস্বস্তিতে পড়েন ভানুপ্রকাশ সিনহা।
তবে নীতীশ কুমার সর্ম্পকে তাঁর ধারণা অন্য রকম। এই নেতা তাঁকে বিধানসভা থেকে বের করার সুযোগ দেননি। ভানুজির মূল্যায়ণ, “আমরা সেনাবাহিনীর লোক। বুঝি এই মুখ্যমন্ত্রী কতটা শৃঙ্খলাপরায়ণ। বিরোধী দলে থাকাকালীনও দেখেছি, বিধানসভার ভিতরে তিনি কোনও বিশৃঙ্খল আচরণ করতেন না।” নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার এক বছরের মধ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম বিধানসভায় এসেছিলেন। সেখানে বিধানসভা ও বিধান পরিষদের একটি যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। বিধানসভায় এই অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব ছিল ভানুজির উপরে। অনুষ্ঠানের আগের দিন সন্ধায় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিধানসভায় এসে আয়োজন ঘুরে দেখে যাওয়ার আগে তাঁকে বলেন, “কোনও সমস্যা হলে, সে যত রাতই হোক, আমাকে জানাবেন। আমি চলে আসব।” ভানুজির কথায়, “প্রথমে রাত ১০টা এবং পরে সাড়ে ১১টা, দু’বার আমি মুখ্যমন্ত্রীকে সমস্যার কথা জানাই। এবং ওই রাতে তিনি নিজে দু’বারই বিধানসভায় হাজির হয়ে সমস্যার সমাধান করেন।”
দীর্ঘদিন ধরে বিধানসভার তর্কবিতর্ক আর আলোচনা শুনে শুনে তিনি কী ক্লান্ত? মুখে না বললেও বোঝা যায়, মার্শালের কাজে চোরা একটা ভয় থেকেই যায়। ভানুজির কথায়, দায়িত্বটি বড় কঠিন। কখনও ভুল হয়ে যেতে পারে। আজ যিনি বিরোধী, কাল তিনি ক্ষমতায়। কোথাও যদি ত্রুটি হয়ে যায় তা হলে...। থেমে যান ভানুপ্রকাশ সিনহা। |
|
|
|
|
|